ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৩ সফর ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাক্ষাৎকার

উচ্চ শুল্কে টিকে থাকা কঠিন হবে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৫৯, জুলাই ২৯, ২০২৫
উচ্চ শুল্কে টিকে থাকা কঠিন হবে শরীফ জহির

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণায় দেশের রপ্তানি খাত বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সমঝোতায় পৌঁছতে না পারলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে বলে মনে করেন অনন্ত গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহির।

সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক দেশ শুল্ক সুবিধা ভোগ করছে, দ্রুত বাণিজ্যচুক্তিতে পৌঁছতে না পারলে দেশের রপ্তানিকারকরা বড় চ্যালেঞ্জে পড়বেন। ’ 

অনন্ত গ্রুপ কী কী পণ্য রপ্তানি করে, কত দেশে যায়?
অনন্ত গ্রুপের সাতটি পৃথক কারখানা রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন ধরনের পোশাক উৎপাদনে বিশেষায়িত। এর মধ্যে রয়েছে ডেনিম, পুরুষ ও নারীদের ফরমাল স্যুট ও ড্রেস, সোয়েটার/হেভি নিট, লিঞ্জেরি ও অ্যাক্টিভওয়্যার। প্রতিটি পণ্যই নির্দিষ্ট, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন লিড সার্টিফায়েড কারখানায় তৈরি হয়, যেগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেশি। আমাদের পণ্য ৭০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশ।

রপ্তানিতে কেমন প্রবৃদ্ধি হচ্ছে? ট্রাম্প শুল্ক বহাল থাকলে আগামী বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধি কতটা ব্যাহত হতে পারে?
আমার বাবা মরহুম হুমায়ুন জহিরের হাত ধরে অনন্ত গ্রুপের রপ্তানি যাত্রা শুরু হয়। সেটি ১৯৯১ সালের কথা। তাঁর অকালমৃত্যুর পর আমার মা কামরুন নাহার অসাধারণ সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরেন। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান।

১৯৯৯ সালে আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। মাত্র এক হাজার কর্মী নিয়ে শুরু করে আজ আমরা ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করেছি। গড়ে প্রতিবছর ১০-১২ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছি। ২০০৭ সালে আমার ছোট ভাই আসিফ জহির গুগলের চাকরি ছেড়ে ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে অনন্ত গ্রুপে যোগ দেন।

বর্তমানে শুধু আরএমজি খাত থেকেই আমাদের বার্ষিক রপ্তানি আয় প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্ববাজারে অ্যাক্টিভওয়্যার ও সিনথেটিক ফ্যাব্রিকের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। ২০২৬ সালে আমরা নিজস্ব নিটওয়্যার মিল চালু করতে যাচ্ছি, যা আমাদের রপ্তানিতে নতুন গতি ও আত্মনির্ভরতা এনে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে, না হলে প্রবৃদ্ধি হোঁচট খাবে।

বিদেশে পণ্যের বাজার তৈরিতে কিভাবে কাজ করছেন? এ ক্ষেত্রে বিদেশে সরকারি মিশনগুলো কি কোনো সহায়তা করছে?
আমরা পণ্যের ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিই, অনেক সময় আমাদের গ্রাহকদের জন্য কাপড় ও অন্যান্য কাঁচামাল নিজেরাই নির্বাচন করি।

পরিবেশবান্ধব পণ্য এবং উৎপাদনপ্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়ায় আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পেরেছি। পণ্যের উচ্চ মান ধরে রেখেছি। উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাণিজ্য মিশনের কার্যকর সহযোগিতা আরো বাড়লে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে তা সহায়ক হবে।

পণ্যের গুণগত মানে কতটা গুরুত্ব দেন?
আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য গুণগত মানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত—বিষয়টিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমাদের প্রতিটি তৈরি পোশাকে সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য ত্রুটির হার মাত্র ১.৫ শতাংশ। তবে শুধু মান নয়, আমরা সমান গুরুত্ব দিই নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং টেকসই উৎপাদনপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করায়।

রপ্তানিতে কী ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দেখছেন?
রপ্তানিতে শুল্ক বাধা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যেমন—সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আমাদের পোশাক পণ্যে ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো অনেক দেশে শুল্কহার এমনিতেই অনেক বেশি, যা প্রতিযোগিতা কঠিন করে তোলে। অশুল্ক বাধাও ক্রমেই জটিল হচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের সার্টিফিকেশন, কার্বন নিঃসরণ কমানোর বাধ্যবাধকতা ও সোশ্যাল কমপ্লায়েন্সের মানদণ্ড আমাদের জন্য অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করছে।

রপ্তানি বাড়াতে সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা?
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহে নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা, চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা ও ডিজিটাল ব্যবস্থার উন্নয়ন, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও আনুষঙ্গিক ব্যয় হ্রাস, এলডিসি সুবিধা হারানোর আগেই জিএসপি প্লাস ও ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা; নীতি, অবকাঠামো ও বিনিয়োগ সহায়তার সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রপ্তানি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে হবে।

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।