ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডিজিটাইজেশন না হওয়ায় সময়ের কাজ সময়ে হয় না: এনবিআর চেয়াম্যান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:২৭, আগস্ট ২৭, ২০২৫
ডিজিটাইজেশন না হওয়ায় সময়ের কাজ সময়ে হয় না: এনবিআর চেয়াম্যান আইসিএমএবি আয়োজিত ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ সামিট-২০২৫’ | ছবি: শাকিল আহমেদ

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন মার্চ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠি গভর্নরের জ্ঞাতসারে দেওয়া হলেও তার খবর নেই।

এরকম অসংখ্য চিঠি (এনবিআরে) আছে সঠিক সময়ে জবাব দেওয়া সম্ভব হয় না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান।

অতি ক্ষুদ্র ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য চিঠি দেওয়ার পাঁচ মাসের বেশি সময়েও কোনো জবাব দেওয়া হয় না, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথা বলেন।

বুধবার (২৭ আগস্ট) হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইনস্টিটিউট অব কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) আয়োজিত ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ সামিট-২০২৫’ অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের ফাংশনগুলো ডিজিটালাইজড করা হয়নি, এ কারণে বুঝতে পারি না কোন চিঠি কতদিন ধরে পড়ে আছে। এই বুরোক্রেসির কারণে অনেক সময় সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি হয় না। অন্যরা সঠিক কাজটি গড়েছেন, আমরা পারছি না। এ কারণে অন্যরা সামনে যাচ্ছে, আমরা পেছনের দিকে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, অভিযোগ করা হয় আগে তথ্য পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় না। এর মানে হলো, তারা ডাটা সঠিকভাবে প্রডাক্ট করে না। এর কারণে শেয়ার করে না। বিষয়টি মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেরার মতো। এটা হলে আমরা ক্যাশলেস সোসাইটি করতে পারব না। এটা বৃহত্তর প্রেক্ষিতে বিবেচনা করতে হবে।

ক্যাশলেস সোসাইটি হলে সরকারই সুবিধা পাবে, রাজস্ব বাড়বে উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, যে পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া (লিকেজ) হয়, তা বন্ধ হবে। ক্যাশলেস করার ক্ষেত্রে যত ধরনের সুবিধা দেওয়া দরকার, সেগুলো দেব।

তিনি বলেন, এবারের বাজেটেও আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। যেসব লিস্টেড কোম্পানি শতভাগ ব্যাংকিং চ্যানেলে ট্রানজেকশন করবে, তাদের জন্য আলাদা করে ২.৫০ শতাংশ কর ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া নতুন করে যেসব প্রতিষ্ঠান ম্যাটেলিয়াল ছাড়া অন্যান্য খরচ ৫০ শতাংশের উপরে বা নিচে কর দেবে তাদের প্রণোদনা ও জরিমানার ব্যবস্থা করা হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। এর আগেরবার অনলাইনে প্রায় ৪ লাখ আয়কর রিটার্ন জমা হয়েছে। গতবার অনলাইনে প্রায় ১৭ লাখ আয়কর রিটার্ন জমা পড়েছে। এবছর আজকে পর্যন্ত চার লাখ ১৫ হাজার জমা পড়েছে।

অনলাইনের আয়কর দেওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দিতে চার ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশিদের আয়কর রিটার্ন অন্যতম। বিদেশে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ওটিপি ফাংশন আছে। বিদেশ থেকে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দূর করতে ওটিপির স্থলে মেইল ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে মোবাইল স্মার্টফোন জরুরি। এজন্য স্মার্টফোনের দাম কমানো প্রয়োজন। এক্ষত্রে এনবিআর কী ভূমিকা রাখতে পারে, এমন বক্তব্যের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ফোন আমদানির ক্ষেত্রে আমরা পুরো রাজস্ব পাই না। আবার এদের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণও নেই। কাস্টমাররাও নানাভাবে ঠকে। বিশেষ করে এখানে যারা মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কোনো ফোন আইএমইআই দিয়ে অ্যাক্টিভেট করা যাবে, কোনোটা যাবে না। এর ফলে বাজারে অহরহ ফোন প্রবেশ করতে পারবে না। এতে দেশে যারা উৎপাদন করছে তারা উৎসাহিত হবে।

আমরা আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সফটওয়্যার প্রস্তুত হয়ে যাবে। যখন এটা চালু হয়ে যাবে তখন স্থানীয় প্রস্তুতকারীরদের বলতে পারব, আমরা স্থানীয় মোবাইল ফোনগুলোর ওপর ট্যাক্স কমিয়ে দিতে পারব। পাশাপাশি ভ্যাট জিরো করা যায় কি না, সেটাও বিবেচনা করব, বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। উদ্বোধনী আলোচনায় ‘ক্যাশলেস অর্থনীতি গঠনে ফিনটেকের ভূমিকা’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. এম মাসরুর রিয়াজ।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মো. শারাফাত উল্লাহ খান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, বিকাশ লিমিটেডের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহমেদ, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের পরিচালক জাকিয়া সুলতানা এবং সেবা প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা আদনান ইমতিয়াজ হালিম।

সামিটের শেষ পর্বে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ‘রেগুলেটরি রিফর্মস ও পলিসি রোডম্যাগ ফর অ্যা ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এই প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়; মো. আবদুর রহমান খান, সচিব, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর); ড. মো. হাবিবুর রহমান, ডেপুটি-গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক; মাসরুর আরেফিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (এমডি ও সিইও), দ্য সিটি ব্যাংক পিএলসি; অনিতা গাজী রহমান, প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং পার্টনার, দ্য লিগ্যাল সার্কেল।

জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।