ঢাকা: সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির (সিএসআর) আওতায় শিক্ষার্থীদের ১০২ কোটি টাকার বৃত্তি দেওয়ার প্রচার চালালেও বাস্তবে তা দিচ্ছে না ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। মূলত ব্যাংকটি বছরে ১৭ কোটি টাকা শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে।
শিক্ষাবৃত্তির নামে ব্যাংকটি দীর্ঘদিন ধরে সুকৌশলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপনে ও দেশব্যাপী বিশাল আকারের বিলবোর্ডে প্রচার চালাচ্ছিল ‘১শ ২কোটি টাকার বাৎসরিক শিক্ষাবৃত্তি হোক দীপ্তিময় জীবনের স্বপ্ন পূরণের সেতুবন্ধন। ’
আর এই কারণে গত ১৭ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে গণমাধ্যম ও বিলবোর্ডে ভুয়া প্রচার বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের ব্যাংক এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির যে ব্যবস্থা চালু করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রদত্ত বৃত্তির পরিমাণ সম্পর্কে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই আপনাদের শিক্ষাবৃত্তি বিষয়ক বিজ্ঞাপনসমূহ দ্রুত সংশোধন করে এ বিভাগকে অবহিত করার পরামর্শ দেয়া যাচ্ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি’ সম্পর্কিত বিজ্ঞাপনসমূহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, প্রিন্ট মিডিয়া ও বিলবোর্ড প্রচারের ব্যয় নির্বাহের জন্য এবং ভৌত অবকাঠামো বিনির্মাণে পৃথক ভাবে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
বিভিন্ন প্রকল্পে অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরে ‘পরিসমাপ্তি সনদ’ গ্রহণ করার বিধান রেখে সমঝোতা স্মারক সই করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভুল তথ্য সংবলিত বিলবোর্ড প্রত্যাহার সংশোধন করে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
২০১০ সালের ১জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদানে ১শ ২কোটি টাকা একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) ব্যয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছে ৭০কোটি ৭৮লাখ টাকা। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছে ২১হাজার ৪শ ২৬জন শিক্ষার্থী।
যোগাযোগ করা হলে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কে এস তাবরেজ মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে এই বিষয়ে কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, সিএসআর কার্যক্রমের আওতায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৬টি ক্যাটাগরিতে সমাজের গরিব, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শুধু শিক্ষা খাতে ব্যয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মোট সিএসআরের ৩০ শতাংশ। এজন্য প্রচারণার কিছু নেই। ডাচ-বাংলা ব্যাংক সিএসআর বিতরণ প্রচারণার নামে জনগণকে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৫