ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চিনি নিয়ে সিটি গ্রুপের ছিনিমিনি

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
 চিনি নিয়ে সিটি গ্রুপের ছিনিমিনি

ঢাকা: সিটি গ্রুপের হাতে দেশের চিনি খাত জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  দেশের প্রধান এই খাদ্য পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছেমতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই একই অভিযোগ উঠেছে মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধেও।
  
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন এনডিসি এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, সিটি ও মেঘনা গ্রুপ চিনি সাপ্লাইয়ে ঝামেলা করছে বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। তারা এই ঝামেলার জন্য চিনি আমদানিতেও গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমন কি কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য তারা এলসি খোলাও বন্ধ রেখেছে।
 
সচিব বলেন, আমরা দেখছি পুরো সেক্টরটি মাত্র ২/৩টি প্লেয়ারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এতে তারা সেক্টরটিকে নিয়ে খেলায় মেতেছে। তারা বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ার কথা বলছে। অথচ আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে তাদের দাম বাড়ানোর কোন সম্পর্ক নেই। তারা রোজার আগেই আমাদের বলেছিল, তাদের হাতে কি পরিমাণ চিনি আছে এবং কি পরিমাণ চিনির এলসি খুলেছে। বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ার পর তো এলসিই খোলা হয়নি। ফলে সে দোহাই দেখানো গ্রহণযোগ্য নয়। কতো দামে কোন পণ্য আমদানি হয় তা ব্যাংকের তথ্যেই জানা যায়।
 
হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২ মাস আগে বিশ্ব বাজারে চিনির দাম ছিল সাড়ে তিনশ’ ডলার প্রতি টন। ব্যবসায়ীরা তখনই চিনি আমদানি করেছিল। এখন দাম টন প্রতি দেড়শ’ ডলার বেড়েছে দেখিয়ে জনগণের পকেট কাটা হচ্ছে। অথচ ব্যাংক কিন্তু সাড়ে তিনশ ডলারেরই ইন্টারেস্ট নিয়েছে।  তারা আসলে সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
সচিব বলেন, আমরা বিষয়টি নজর রাখছি। কোম্পানিগুলোর সাথে কথা বলছি। তারা কিছু ওয়াদা করছে। প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে।
 
বাণিজ্য সচিব বলেন, আমরা সিটি গ্রুপকে সরাসরি চিনি বিক্রির নির্দেশ দিয়েছি। তারা বলছে, ৫০ ট্রাক চিনি তারা সরাসরি ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে।
 
এদিকে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, সিটি, মেঘনা, দেশবন্ধু, আব্দুল মোনেম, এস আলম মিলে প্রতিদিন ৭ হাজার টন চিনি বাজারে ছাড়ছি। এতো চিনির চাহিদা তো দেশে নেই। তাহলে সেই চিনি কই যাচ্ছে!
 
তিনি বলেন, এছাড়াও সারা দেশে আমদানিকারকরা গত তিনদিন ধরে প্রতিদিন ১৫০ ট্রাক চিনি বিভিন্ন স্পটে সরাসরি বিক্রি করছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে।

মিলগেটে চিনি না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আজ ট্রাক ঢুকলে, আগামীকালই ট্রাক চিনি নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিদিন ৩ হাজার টন চিনি বিক্রি করছি, মেঘনাও প্রতিদিন ৩ হাজার টন চিনি বিক্রি করছে। এখন দেশের কোন বেসরকারি কারখানায় কি এতো জায়গা আছে যে, ৩০০ ট্রাককে প্রতিদিন ঢুকতে দেবে, এটাও চিন্তা করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশে চিনির কোন সমস্যা নেই। মজুদ, উৎপাদন, পরিবহনেও সমস্যা নেই। সরবরাহও বেশি। তারপরও আমাদের কেনো দায়ী করা হয় বুঝতে পারছি না। চিনির দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৫২ থেকে ৫৫ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।
 
তিনি বলেন, বাজারে এই অস্থিরতা তৈরির সুযোগ নিচ্ছে এক প্রকার অসৎ পাইকাররা। তারা নানা কথা বাজারে ছড়িয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। দাম যতোটুকু বেড়েছে তা ট্যাক্স বাড়ানোর জন্য। প্রতি কেজি চিনিতে ১৪ থেকে ১৯ টাকা পর্যন্ত কর নির্ধারণ করে সস্তায় চিনি বিক্রি করতে বলা যৌক্তিক নয়।
 
তবে বাণিজ্য সচিব বলেন, চিনিতে ট্যাক্স কেবল বাংলাদেশই বাড়ায়নি। দেশের চিনি শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতও ট্যাক্স আরোপ করেছে। এটাই নিয়ম।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
আরএম/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।