ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বস্তিতে আধুনিক মার্কেট, ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৬
বস্তিতে আধুনিক মার্কেট, ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতা

ঢাকা: রাজধানীর মহাখালীর উত্তরাংশে বিশাল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত কড়াইল বস্তি। নামে বস্তি হলেও এখন সেখানে আধুনিক নাগরিক জীবনের সব সুবিধাই মিলছে।

আর ঈদ উপলক্ষেও ব্যবসায়ীরা যোগ করেছেন বাড়তি মাত্রা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আসছে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এখানে নতুন শপিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে ফার্নিচার, মোবাইল ফোন ও দর্জির দোকান। এছাড়াও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দোকান তো পুরো বস্তি জুড়েই বিস্তৃত। দোকান বা মার্কেটগুলোতে মোড়কজাত ভোজ্য পণ্য জানান দিচ্ছে এখানকার জীবন-যাত্রার মানের পরিবর্তন এসেছে।

কড়াইল বস্তি দু’ভাগে বিভক্ত। ‘বউ বাজার’ এবং ‘জামাই বাজার’ নামেই দুই অংশের নামকরণ করেছেন বাসিন্দারা। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রায় ১৭০ একর আয়তনের দেশের সবচেয়ে বড় এ বস্তিতে প্রায় ৭ লাখ লোকের বসবাস। এদের বেশিরভাই রিকশাচালক, দিনমজুর, গার্মেন্টস শ্রমিক। আরেকটি শ্রেণির মানুষও এখানে বসবাস করেন, যারা ভবঘুরে এবং ছিন্নমূল। যারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন। তবে না খেয়ে থাকার মতো মানুষ নেই কড়াইল বস্তিতে।

এ বস্তিটি মূলত শতশত গলির বস্তি। প্রতিটি গলির দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন দোকান বা শপিং সেন্টার। যার উপরে নয়তো পেছনে তৈরি করা হয়েছে থাকার ঘর।

স্থানীয়রা বলছেন, এখন আর আগের দিন নেই। শহুরে ‘সচেতন’ মানুষের মতোই জীবন-যাপন করতে চায় এখানকার বাসিন্দারা। তাই স্বাস্থ্যসম্মত সব জিনিসই এখানে পাওয়া যায়। আর এটা সম্ভব হয় বাড়ি ভাড়া কম হওয়ার কারণে।

জানা গেছে, প্রায় ১০ বর্গফুটের মতো ঘরের ভাড়া মাত্র আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। রয়েছে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুত সুবিধা। রয়েছে ওষুধের দোকান, বড় বাজার, স্কুল ও মাদ্রাসা।

এখানকার চা স্টলগুলোতেও রয়েছে গ্যাসের সংযোগ। যা ঢাকা শহরের অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। যদিও এটা বাসার লাইন থেকেই নেওয়া।

আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন এ বস্তিতেও চলছে ঈদ প্রস্তুতি। বিক্রেতারা নানা রং-ঢংয়ের পোশাক এনেছেন, ক্রেতারাও তা লুফে নিচ্ছেন। বস্তিবাসীর চাহিদার উন্নয়নে এখানে আধুনিক শপিং সেন্টার গড়ে উঠেছে।

এমন একটি দোকানের স্বত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম জিহাদ বাংলানিউজকে বলেন, অনেকেই বস্তি বলে হেয় করে থাকে। কিন্তু এখানকার মানুষদের জীবন-যাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। অন্যদের মতো তারাও ভালো পরতে চায়, খেতে চায়। এ আগ্রহ দেখেই আমরা খুলেছি- ‘সুপার চিপ’ শপিং সেন্টার। এখানে কমদামে ভালো পণ্য বিক্রি করা হয়।
জিহাদের ক্রেতা সালমা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, পোশকগুলো বড় বড় মার্কেটের দোকানগুলোর মতো সুন্দর। আবার দামও কম। তাই বাচ্চার জন্য ঈদের জামা কিনতে এসেছেন তিনি।

জিহাদ জানান, এখানে ৬শ’ টাকার মধ্যেই ভালো পাঞ্জাবি, ৫শ’ টাকার মধ্যে ভালো শার্ট, ৬শ’ টাকার মধ্যে প্যান্ট পাওয়া যায়। আবার ৫শ’ টাকার মধ্যে শাড়ি, বাচ্চাদের কাপড়ও ভালো মানের পাওয়া যায়।

ঈদ উপলক্ষে কড়াইল বস্তির দর্জি দোকানগুলোতেও ব্যাপক ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেছে। এক টেইলার্সের কর্ণধার মো. চাঁন মিয়া জানান, ঈদ উপলক্ষে অনেক ব্যস্ততা চলছে।

ফার্নিচারের দোকানেও গিয়ে ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেছে। সাইদুর রহমান নামের এক দোকানি জানান, ঈদে অনেকেই আলমারি, খাট, শোকেজ বানানোর অর্ডার দিয়েছেন।

বস্তিবাসীর এই পরিবর্তন সম্পর্কে চা দোকানি মুকসেদ রাজু বলেন, ‘আমরা ছোড থ্যাক্কাই এইহানে থাকি। বিষয়ডা এমুন না যে, এইহানে সিনেমার মতো ছিনতাই, মাইয়া লইয়া টানাটানি অয়। কড়াইল বস্তি এহন আদর্শ এলাকা অইতাছে। স্কুল, মাদ্রাসা অইছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সমস্যা নাই। হগলেই এইহানে যার যার কাম লইয়া ব্যস্ত। ’

‘তবে কেউ কেউ কিচ্ছু করে না। ন্যাশা কইরা, জুয়া খেইল্ল্যা কাডায়। কিছু আছে হাত পাইতা খায়’- যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৬
ইইউডি/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।