যেসব কোম্পানিতে ইতোমধ্যে বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। আইডিআরএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ সংক্রান্ত চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়, অডিট প্রতিষ্ঠান এবং বিমা কোম্পানিগুলোকে দেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন আইডিআরএ’র সদস্য সুলতান উল-আবেদিন মোল্লা। তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সাঈদ কুতুব স্বাক্ষরিত আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, ‘বিমা খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার লক্ষ্যে নন-লাইফ কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয় সংক্রান্ত বিধিমালা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত আইডিআরএ কর্তৃক নির্দেশিত বিশেষ অডিট কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
আইডিআরএ বিশেষ অডিট চলমান কার্যক্রমের ফলে বিমা কোম্পানিগুলোতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে নন-লাইফ কোম্পানিসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের পক্ষ হতে চলমান নিরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত রাখতে এ বিভাগে আবেদন দাখিল করা হয়েছে। ’
এতে বলা হয়, ‘নতুন প্রবিধানমালাটি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধন করতে হবে। আগামী ১৫ মার্চের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সংশোধনী প্রস্তাব অর্থমন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জমা দেবে আইডিআরএ। ৩১ মার্চ আলোচনার মাধ্যমে নতুন প্রবিধানমালা করা হবে। ’
আইডিআরএ সাবধানতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠিতে বলেছে, ‘প্রবিধান সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিমা খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে জারিকৃত প্রবিধানমালাটি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ’
আইডিআরএ সূত্র জানায়, ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ সর্বশেষ তিন বছরের আয়, ব্যয় ও সম্পদের বিষয়গুলোর অনিয়ম খতিয়ে দেখতে এখন পর্যন্ত আইডিআরএ ২৪টি সাধারণ বিমা কোম্পানিকে অডিটর নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিমা আইন ২০১০’র ২৯ ধরার ক্ষমতা বলে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান বিমা কোম্পানিগুলোর ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালের বিনিয়োগ, ঋণ, অগ্রিম, স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পদ, নগদ অর্থ, ভ্যাট-ট্যাক্স, চেয়ারম্যান-পরিচালকদের সম্মানী ও অন্যান্য সুবিধা এবং তার পর্যালোচনা করতে বলা হয়।
সূত্র জানায়, বিমা কোম্পানিগুলোর ভয়; তাদের অনিয়মগুলো বেরিয়ে আসবে। তাই তাদের অনিয়ম ঢেকে রাখতে বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে চাইছে না। এ কারণে কোম্পানিগুলো অডিটর নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করে। প্রথম দফায বিমা কোম্পানিগুলোর আবেদনের সাড়া দেয়নি আইডিআরএ। আবেদনে প্রেক্ষিতে সাধারণ বিমা কোম্পানির বিশেষ নিরীক্ষক (অডিটর) নিয়োগ স্থগিত করা হবে না বলে ১৮টি বিমা কোম্পানিকে চিঠি দেয় কর্তৃপক্ষ।
কোম্পানিগুলো হচ্ছে- গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস, কন্টিনেন্টাল, ফিনিক্স, প্রগতি, ফেডারেল, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ, পাইওনিয়ার, বাংলাদেশ ন্যাশনাল, জনতা, নর্দান জেনারেল, তাকাফুল, সোনার বাংলা, পিপলস, মেঘনা, ও ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।
নিরীক্ষা কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে সার্বিক সহযোগিতা করতে বিমা কোম্পানির এমডিদের চিঠি দেয় আইডিআরএ। যদি বিমা কোম্পানিগুলো বিশেষ নিরীক্ষককে অসহযোগিতা করে, তাহলে আইন অনুসারে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করে।
এরপর বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) এবং বাংলাদেশে ইন্স্যুরেন্স ফোরামসহ সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে অডিটর নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য আবেদন করে। তারই প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় আইডিআরএ’কে চিঠি দেয়।
নন-লাইফে এখন পর্যন্ত ৪৫টি কোম্পানি ব্যবসা করছে। যার ২৪টি কোম্পানিতে অডিটর নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ। বাকিগুলোতে অডিটর নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এমএফআই/এমজেএফ
