ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

তামাক কর নীতি প্রণয়নের দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৩ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
তামাক কর নীতি প্রণয়নের দাবি আলোচনা সভার অতিথি ও আলোচকরা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘সারা বিশ্বের চেয়ে বাংলাদেশে তামাকের দাম কমেছে। বর্তমান তামাক কর কাঠামো পরিবর্তন করে নতুন তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে’।

শনিবার (১০ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে 'তামাক কর' বাজেট প্রতিক্রিয়া বিষয়ক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিকের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ।


 
তামাকের ওপর বর্তমান শুল্ক কাঠামো সহজ এবং নতুন তামাক কর নীতি প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।

ড. খলীকুজ্জামান বলেন, তামাকবিরোধী আন্দোলন চালু রাখতে হবে। বাজেটে যেটি উত্থাপিত হয়, সেটির বেশি পরিবর্তন হয় না। যে বিষয়ে আয় আসে, সেটিরও আর পরিবর্তন হয় না। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর দেশীয় শিল্পকে কোনো ধরনের উৎসাহিত করা ঠিক নয়, যা অর্থমন্ত্রী বলছেন।

তিনি বলেন, এবার যেমন আয় বেড়েছে, তেমনভাবে তামাকের  দাম বাড়েনি। তাই এ বৃদ্ধির কোনো প্রভাব পড়বে না। তামাকে কর বাড়াতে হবে ব্যক্তির আয়ের চেয়ে বেশি হারে। বাজেটে তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করতে বিকল্প চাষে পুঁজি, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ রাখা ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে।

মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, দাম বাড়ালে তামাকের ব্যবহার সন্তোষজনক হারে হ্রাস পাবে। গবেষণায় দেখা গেছে, করারোপের ফলে তামাকের প্রকৃত মূল্য ১০ শতাংশ বাড়লে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে তামাকের ব্যবহার ৫ শতাংশ হ্রাস পায়। কিন্তু কার্যকর করারোপের অভাবে তামাকের প্রকৃত মূল্য বাড়েনি। বরং বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে তামাকের দাম কমেছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাউথ এশিয়ান স্পিকার্স সামিটে তামাককে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল বা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তামাকের ওপর বর্তমান শুল্ক কাঠামো সহজ করে শক্তিশালী তামাক শুল্কনীতি গ্রহণের নির্দেশনা দেন। কিন্তু এবারের বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।

১০ শলাকার প্যাকেট সিগারেটের ক্ষেত্রে স্পেসিফিক করারোপের প্রস্তাব করে রুমানা হক বলেন, নিম্নস্তরের সিগারেটে ২৫.৯৫ টাকা, উচ্চস্তরের সিগারেটে ৪৯.৬০ টাকা ও প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটে ৮২ টাকা করারোপ করা যেতে পারে। নিম্নস্তরের সিগারেটের বর্তমান খুচরা মূল্য ২৩ টাকার স্থলে কমপক্ষে ৪০ টাকা, উচ্চস্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা ও প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য কমপক্ষে ১২০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। এর ফলে প্রতি বছর সিগারেট থেকে সরকারের ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে।

এনবিআরের সাবেক সদস্য (করনীতি) মো. আমিনুর রহমান  বলেন, ‘ভ্যাট আইন ও আবগারি কর  নিয়ে এবারের বাজেটে এনবিআর চাপে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই এদিকে নজর দিতে পারেনি এনবিআর’।

‘বহুজাতিক কোম্পানি প্রতিদিন ৫ কোটি টাকা দেয়। রাজস্ব হারানো ও রাজস্ব ফাঁকির ভয়ে এনবিআর তামাকের কর কাঠামোয় পরিবর্তন করে না’।

তিনি বলেন, ধোঁয়াবিহীন তামাক শনাক্ত ও কর আদায়ে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে।   এর সবচেয়ে ক্ষতির শিকার নারীরা। এনবিআরের টোব্যাকো সেলকে কার্যকর করতে হবে। ২০১১-১২ সালে এটি চালু করেছিল, এখন চলছে না।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুল মালিক বলেন, ‘মানুষকে সুস্থ রাখতে হবে। সকল রোগের মূল কারণ তামাক। সুস্থ জাতি পেতে হলে তামাকের ব্যবহার কমাতে হবে। তামাকজনিত ক্ষতি বিবেচনায় তামাকে কর বাড়ানো উচিত। আমাদের তামাকবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। প্রতিষেধক নয়, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে’।

প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্সের (আত্মা) যৌথ উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশন (ইপসা), তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এ আলোচনা সভা আয়োজনে সহযোগিতা করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
কেজেড/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।