ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

৫০১ কোটিতে শুরু করে ব্যয় ঠেকেছে ১৮২৭ কোটি টাকায়!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
৫০১ কোটিতে শুরু করে ব্যয় ঠেকেছে ১৮২৭ কোটি টাকায়! ৫০১ কোটিতে শুরু করে ব্যয় ঠেকেছে ১৮২৭ কোটি টাকা!

ঢাকা: ৫০১ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের লাকসাম-চিনকি অংশের ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ  শুরু হয় ২০০৮ সালের জুলাই মাসে। শেষ পর্যায়ে আসা প্রকল্পটির চূড়ান্ত ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২৭ কোটি টাকায়।

রেকর্ড পরিমাণে এ ব্যয় বৃদ্ধির পরেও কিছু কিছু অঙ্গের ব্যয়ে তারতম্য দেখা দেওয়ায় মেয়াদ আরও ছয়মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তবে সংশোধনের নিয়ম ভঙ্গ করে বিশেষভাবে ফের সময় বাড়ানোর এ আবেদনে ক্ষুব্ধ পরিকল্পনা কমিশন।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে ওই রেলপথটি ডাবল লাইনে উন্নীত হচ্ছে। পঞ্চম দফায় মেয়াদ-ব্যয় বাড়ানোর পর আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন এ রেলপথটি খুলে দেওয়ার কথা ছিল। এখন আগামী বছরের জুন মেয়াদে তা পেছাতে চায় মন্ত্রণালয়।

‘কুমিল্লার লাকসাম থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ’ প্রকল্পের অর্থায়ন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রাথমিকভাবে মোট ব্যয়ের মধ্যে জিওবি ছিলো ২২৬ কোটি টাকা। এ খাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে শুরুতে প্রকল্প সাহায্য ছিলো ২৭৫ কোটি টাকা। এটি বেড়ে হয়েছে ৫২৭ কোটি টাকা। ফলে জিওবি ৪৭৫ শতাংশ ও  প্রকল্প সাহায্য ৯২ শতাংশ বেড়েছে, যা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোর মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রের দাবি, গত জুন মাস পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা বা ৯৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ফলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে রিভিউ অব ফাইনাল সার্ভের পর প্রকল্পের আওতায় সিভিল, ট্র্যাক, ব্রিজ ও বিল্ডিং ওয়ার্কসহ বিভিন্ন কাজের পরিমাণ এবং নতুন অঙ্গের হ্রাস-বৃদ্ধি, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি এবং ঠিকাদারকে অর্থ পরিশোধে বিলম্বের কারণে জরিমানা হিসেবে সুদ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এগুলোর সমন্বয় করতে আরও ছয়মাস লাগবে।

এ কারণে গত কয়েক মাস ধরে থেমে আছে প্রকল্পটির কাজ।  

অস্বাভাবিক এ ব্যয়-মেয়াদ বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। মতামত তুলে ধরে আইএমইডি বলছে,  প্রকল্পের ডিজাইন ও সুপারভিশন কাজে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জাইকা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেনি।  

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে একটি ধারণার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প গ্রহণ ও ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। ঠিকাদার নিয়োগ ও কাজ শুরুর পর প্রথম পর্যায়ের ব্যয় আর থাকে না। রেট সিডিউলও এক না থাকায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে’।

তিনি বলেন,  ‘সিভিল ওয়ার্কে সাড়ে ৯ কোটি টাকা, ব্রিজ ওয়ার্কে ৭ কোটি টাকা ও প্রাইস এসকেলেশনসহ জেনারেল প্রভিশন কাজে ৮৪ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। এগুলোর সমন্বয় করতে আমাদের আরও ছয়মাস সময় লাগবে’।

মোফাজ্জেল হোসেন জানান, ইতোমধ্যেই এ রেলপথের সরসদী, গুণবতী, চিনকি আস্তানা ও হাসানপুরে ৪টি নতুন স্টেশন ভবন, ৮টি স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ, ৪টি স্টেশনে ক্যানোপি ও ১৩টি নতুন প্লাটফরমসহ ৮টি মেজর সেতু, ৩৪টি কালভার্ট, ১১টি পাইপ কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। ১২টি স্টেশনে টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণও সম্পন্ন হয়েছে।

স্টেশন বড় করতে, প্লাটফর্ম তথা লাইন বাড়াতে প্রায় ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেশনের বাড়তি ৩টি লুপ ও ১টি শেডসহ প্লাটফর্ম ছাড়াও ইঞ্জিন ঘোরানোর জন্য নতুন ত্রিকোণা লাইন নির্মিত হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম মার্শালিং ইয়ার্ড ও পাহাড়তলী স্টেশনের মধ্যে ৮০০ মিটার রেলওয়ে ট্র্যাক পুনর্বাসিত হয়েছে। ফুটওভার ব্রিজসহ ৩০০ বর্গফুট প্লাটফর্ম ক্যানোপি, ১ হাজার মিটার বাউন্ডারি ওয়াল, ২ হাজার ৭০০ বর্গফুট সংযোগ সড়ক ও ২ হাজার মিলিমিটার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পর আগের ২৩ জোড়া ট্রেনের স্থলে ৫০ জোড়া ট্রেন চালানো যাবে। নতুন এ লাইনে ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালানো সম্ভব হলেওঅনুমোদিত স্পিড ৮০ কিলোমিটার বলেও জানান ভারপ্রাপ্ত সচিব মোফাজ্জেল হোসেন।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, ‘লাকসাম-চিনকি অংশে ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ চলমান, কিছু কাজ বাকি অাছে। এখনও সেটি চালু হয়নি। অাশা করছি, দ্রুততম সময়ে অংশটি চালু হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।