ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পরিকল্পনার পরও রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা ঘুচবে না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০১৭
পরিকল্পনার পরও রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা ঘুচবে না

ঢাকা: জাতীয় রাজস্ববোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণে গত তিন অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিলো ১১ থেকে ১৫ শতাংশ। কিন্তু সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ায় রেকর্ড করেছে সংস্থাটি। তবে রাজস্ব আহরণে রেকর্ড করলেও চলতি অর্থবছরে ঘাটতি পূরণে নতুন কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করার পরও রাজস্ব আহরণে ঘাটতি থেকেই যাবে। যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ২০ কোটি টাকা।

ফলে আটঘাঁট বেঁধে পরিকল্পনা নেওয়ার পরও রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা এড়াতে পারবে না এনবিআর।

এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার।

বিশাল এই রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রথম থেকেই অর্থনীতিবিদদের সমালোচনার খোরাকে পরিণত হয় সংস্থাটি। সমালোচনা আমলে না নিয়ে রাজস্ব আদায়ে পরিকল্পনার ছক কষে এনবিআর।

তবে এনবিআর বলছে, এসব পরিকল্পনার পরও ২০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতির মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা আদায় সম্ভব হলেও বাকি ৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতার গ্লানি পুরোপুরি মুছবে না সংস্থাটির।  

সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এনবিআর জানিয়েছে, নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করার ফলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভ্যাট খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য রাজস্ব বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে সিগারেট ও বিড়ি খাত হতে ৫ হাজার কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক (ব্যাংক হিসাব ও বিমান টিকিট) হতে ৫০০ কোটি টাকা এবং ফাস্টফুডের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার কারণে ১০০ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ সম্ভব হবে।

এছাড়া রাজস্ব আদায় মনিটরিং জোরদারসহ এডিআর ব্যবস্থা কার্যকরণের মাধ্যমে বকেয়া রাজস্ব আহরণ ও কর প্রতিপালন বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির কারণে আরও ৯ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ হবে। আর এই হিসাবে রাজস্ব ঘাটতির পরিমান দাঁড়াবে প্রায় ৫ হাজার ২০ কোটি টাকা।  

প্রতিবেদনে অর্থবিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে এনবিআরের দুই হাজার কোটি টাকা এবং পেট্রোবাংলার কাছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানে বকেয়া পড়ে আছে সেসব প্রতিষ্ঠান বকেয়া পরিশোধ করলেই রাজস্ব আহরণে সফলতা আসবে। তবে এতোকিছুর পরও রাজস্ব আদায়ের সফলতা নিয়ে খোদ এনবিআরের মধ্যেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।  

এদিকে গত ১৩ জুলাই সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনি বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, ভ্যাট আইন স্থগিত হওয়ায় রাজস্ব আদায়ে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ নতুন ভ্যাট আইন স্থগিত করায় ২০ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হবে। আর ওই ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে, নয়তো উন্নয়ন বাজেটে কাটছাঁট করতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, রাজস্ব আদায়ে এনবিআর যে নতুন কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সেটাকে সাধুবাদ জানাতে হবে। ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় এনবিআরকে অনেক কষ্ট করতে হবে। তবে ১৫ হাজার কোটি টাকা আদায়ে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে সেটা আদায় হবে। তবে এনবিআর যদি আরও বেশি সজাগ হয় তাহলে ২০ হাজার কোটি টাকাই আদায় করা সম্ভব।  

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এনবিআর সব সময় চ্যালেঞ্জের মধ্যে কাজ করে। এখন থেকে জনগণ ‘অনায়াসে নয় প্রয়াসে’ রাজস্ব দেবে। এজন্য কমিশনারদের সবাইকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিভাবে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি পূরণ করা যায় সেটা নিয়েও পর্যালোচনা করতে হবে। আশা করছি, রাজস্ব আহরণে সফলতা আসবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত অর্থবছরে ১৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি ছিলো। এছাড়া আমাদের নিবন্ধিত যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সবার কাছ থেকেই ভ্যাট আদায় করতে হবে। এককথায় করের আওতা বাড়াতে হবে, তাহলেই এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৭
এসজে/এসএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।