কিন্তু রাজস্বের বড় অংশের যোগান দিলেও দক্ষ জনবলের অভাব ও অবকাঠামোগত সমস্যায় ব্যাহত হচ্ছে এলটিইউ'র সার্বিক কার্যক্রম। এতে কাজের উপযোগী পরিবেশ না থাকায় নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে রাজস্ব আদায়ে।
এলটিইউ সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন মোট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭০টি। যার মধ্যে ১৫৭টি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সমগ্র ভ্যাটের ৫৬ শতাংশ আদায় করে এলটিইউ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের ভ্যাটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৬ হাজার ৯৬৩ কোটি টাক। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩১ কোটি বেশি আদায় হয়েছে।
এছাড়া ২০১১-১২ অর্থবছরে ২০ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২১ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২৩ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ভ্যাট থেকে আদায় করে প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে এলটিইউতে জায়গা না থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্ষ ছাড়িয়ে অফিসের করিডর ও দরজার সামনে রাখা হয়েছে শীর্ষ করদাতাদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক নথিপত্র। ফাইলের চাপে বসার জায়গাও নেই কর্মকর্তাদের। ফলে একজনের রুম কয়েকজন অফিসার ভাগাভাগি করে কাজ করছে। অপরদিকে কনফারেন্স রুম, ওয়েটিং রুম কিংবা টয়লেটের অবস্থাও নাজুক।
শুধু তাই নয়, এলটিইউতে (ভ্যাট) মোট বরাদ্দ ১৮৮টি পদের মধ্যে ১০৫ জন কর্মরত। বাকি ৮৩টি পদ এখনও শূন্য পড়ে রয়েছে। যেমন, যুগ্ম-কমিশনারের দু’টি পদ থাকলেও কাজ করছেন একজন, উপকমিশনার ও সহকারী কমিশনারের ১২টি পদ থাকলেও কাজ করছেন ১০ জন। প্রোগ্রামারের একটি পদ থাকলেও পড়ে আছে ফাঁকা, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার পদ ৪৯টি। কিন্তু কাজ করছেন ৩৯ জন। সিপাইয়ের পদ ৩৪টি, কর্মরত ২২জন। ডেসপাস রাইডারের দুটি পদ থাকলেও শূন্য। উচ্চমান সহকারীর ১৯টি পদ থাকলেও ১০টি পদ খালি। আর কম্পিউটার অপারেটরের ৩১টি পদ থাকলেও কাজ করছেন মাত্র একজন অপারেটর। এরচেয়েও অবাক করা তথ্য হলো বৃহৎ ভ্যাটের এই অফিসটিতে প্রধান হিসাবরক্ষণের একটি পদ, হিসাবরক্ষক-২ এর একটি পদ, ক্যাশিয়ারের একটি পদ ও এমএলএসএস এর ১১টি পদ থাকলেও সেগুলোও শূন্য।
এ বিষয়ে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের সহকারী কমিশনার (আইন ও বিচার শাখার) বদরুজ্জামান মুন্সি বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেওয়া হয় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া আমরা আশা করছি, এবছর মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রায় ৪ হাজার ২শ টাকা ও বকেয়া থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় হবে। এজন্য একটি প্রতিবেদনও এনবিআরে পাঠানো হয়েছে।
বৃহৎ করদাতা ইউনিটের ভ্যাট (এলটিইউ) কমিশনার মো. মতিউর রহমান বলেন, আমাদের যা আছে তা দিয়েই সর্বাত্মকভাবে জনগণকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে দক্ষ জনবল ও স্থানের অভাবে গ্রহিতাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া সারা বাংলাদেশের ভ্যাটের ৫৫ শতাংশ আদায় করছে এলটিইউ।
এলটিইউতে রাজস্ব ফাঁকির মামলায় ৩৩ হাজর কোটি টাকা পড়ে আছে। ফলে অভিজ্ঞ জনবল যদি না থাকে তাহলে এই রাজস্ব আদায় সম্ভব নয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এলটিইউতে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। এজন্য কাজ করতে সমস্যাও হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগিরিই সমস্যার সমাধান হবে। এখানে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৭
এসজে/এএ