দুদক সূত্রে জানা গেছে, প্রিমিয়ার ব্যাংকের গ্রাহক মেসার্স রুমী এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান গত বছর দুদকে হারুনের বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের জুলাইতে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
অভিযোগটি তদন্তে দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলমকে দায়িত্ব দেয় কমিশন। কিন্তু এক বছরেও তদন্ত কর্মকর্তা কমিশনে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি। এমনকি অভিযোগের বিষয়ে এখনো হারুনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি দুদক।
মেসার্স রুমী এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী খলিলুর রহমান দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলেন, তার ব্যাংক হিসাব থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক এমপি বি এইচ হারুন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ক্ষেত্রে প্রিমিয়ার ব্যাংক বংশাল শাখা থেকে গ্রাহক রুমী এন্টারপ্রাইজের নামে চেকবই ইস্যু দেখিয়ে ওই প্রতারণা করা হয়।
তার টাকা নিয়ে এমপি হারুন ব্যাংকের দেনা পরিশোধ, বনানী ও বারিধারায় বহুতল ভবন নির্মাণ, তার বড় ছেলেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক করা এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকসহ বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার, দু’টি জাহাজ, একটি প্লট ও ৪টি বিলাসবহুল গাড়ি কেনাসহ নানা খাতে ব্যয় করেছেন।
অভিযোগপত্রে খলিলুর রহমান আরও লেখেন, সৌদি সরকারের সাহায্যে ২০০৮ সালে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ১৫ হাজার ঘর নির্মাণে ২০৪ কোটি টাকার কাজ পান তিনি। তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ছিল প্রিমিয়ার ব্যাংকের বংশাল শাখায়। সিডর এলাকায় কাজ চলাকালে ব্যাংকে জমা হওয়া ২০৪ কোটি টাকার মধ্যে ২৯৭টি চেকের পাতার মাধ্যমে ৭০ কোটি টাকা উত্তোলন করেন তিনি। কাজ শেষে বাকি ১৩৪ কোটি টাকা তুলতে বংশাল শাখায় গেলে তৎকালীন শাখা ম্যানেজার সামসুদ্দিন চৌধুরী তাকে জানান, তিনি (গ্রাহক খলিলুর রহমান) সব টাকা তুলে নিয়ে গেছেন এবং হিসাবও বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি তার অজান্তে অতিরিক্ত ৩৮৮টি চেকবই ইস্যু দেখিয়ে তার স্বাক্ষর জাল করে ১৩৪ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছেন বি এইচ হারুন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ০২ আগস্ট উপ-পরিচালক শামসুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বি এইচ হারুনের কাছে ১৭ ধরনের তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। কিন্তু তথ্য না পাওয়ায় গত ০৪ এপ্রিল ফের একই তথ্য চেয়ে দ্বিতীয়বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো তথ্য দিয়ে দুদককে সহযোগিতা করছে না প্রিমিয়ার ব্যাংক।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, এমপি বি এইচ হারুনের বিরুদ্ধে ১৩৪ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে। তিনি একজন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দীর্ঘ ১ বছরেও দুর্নীতি তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। নাকি দুদক তার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। তবে আশা করছি, খুব শিগগিরই অনুসন্ধান শেষে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা’।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এসজে/এএসআর