ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

প্রস্তুতি শেষ, দেশি পশুতেই মিটবে কোরবানির চাহিদা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৯
প্রস্তুতি শেষ, দেশি পশুতেই মিটবে কোরবানির চাহিদা কোরবানির পশু, বাংলানিউজ ফাইল ফটো

ঢাকা: কোরবানির ঈদের বাকি নেই এক মাসও। তাই দেশীয় খামারিরা পশু বিক্রির সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছেন। এখন তারা কোরবানির পশু বিক্রির সময় গুনছেন। আর দেশীয় পশুতে এবারের কোরবানির চাহিদাও মিটবে বলে আশা করছেন। তাদের চাওয়া, যেনো দেশের বাইরের পশু আমদানি না করা হয়।

যদিও গত ঈদের চেয়ে এবার গো খাদ্যের দাম চড়া, তারপরও একটু লাভের আশায় সে খাদ্যের যোগান দিয়ে কোরবানির গরু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। এই লাভ পাবেন বলে বেশ আশাও করছেন তারা।

যদি বিদেশ থেকে কোরবানির পশু দেশে না প্রবেশ করে, তাহলে তাদের সেই কাঙ্ক্ষিত লাভ হাতে আসবে।

গরুর খামারেই এখন দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। গরু মোটাতাজা করতে ঘাসের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। খামারের এসব গরু দেশের প্রান্তিক এলাকা থেকে ছয় থেকে নয় মাস আগে কিনে এনে তা ঈদে বেশি দামে বিক্রির জন্য মোটাতাজা করছেন বলে জানিয়েছেন খামারিরা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের খামার সাদিক এগ্রো লিমিটেডে কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে এক হাজার ৫০০ পশু। চড়া দামে গো খাদ্য কিনে এসব পশু পালন করা হয়েছে। একইসঙ্গে সাদিক এগ্রোর মতো অন্যান্য খামারও প্রস্তুত কোরবানির পশু মোটাতাজা করে।

সাদিক এগ্রোর মালিন ইমরান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ছয় মাস আগে এক বস্তা (৩৭ কেজি) ভুসি ছিল ৮০০ টাকা। সেটার দাম এখন এক হাজার ৪০০। এবার গরু পালনে খরচা বেশি। তারপরও লাভের আশা করছি। তবে সেটা বাইরে থেকে গরু না এলে পাবো। নয়তো নয়। আমরা ভালো দাম পাবো। টাকা-পয়সাওলারাই কোরবানি দেন। সেক্ষেত্রে চাষিরা কিছুটা পয়সা পেলে ক্ষতি কী? আমরা চাই বিদেশ থেকে যেনো কোনো গরু দেশে না প্রবেশ করে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, এ বছর দেশীয় পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। কোরবানির জন্য এক কোটি ১৭ লাখ গরু, ছাগল, মহিষ প্রস্তুত। এর মধ্যে গবাদি পশুর সংখ্যা ৪৫ লাখ। গত কোরবানির ঈদে এক কোটি ১৫ লাখ পশু প্রস্তুত ছিল। কিন্তু কোরবানিতে পশু জবাই করা হয়েছিল এক কোটি পাঁচ লাখ। ১০ লাখ পশুর যোগান বেশি ছিল চাহিদা থেকে। সে হিসেবে এবারও বাইরের পশু ছাড়া চাহিদা মেটানো সম্ভব।

কোরবানির ছয় মাস আগ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। খামারিদের নানা ধরনের পরামর্শ ও কোরবানির পশুর স্বাস্থ্যগত সেবা দেওয়া হয়। মাঠ পর্যায়ে মনিটরিংয়ের জন্যও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা নেমে পড়েছেন। কেউ যাতে কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণে ওষুধ ব্যবহার না করেন, সে বিষয়েও পরামর্শ দিচ্ছে তারা। এর জন্য দল বেঁধে খামারে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে, বাংলাদেশে মোট নিবন্ধিত খামার ৬৬ হাজার, অনিবন্ধিত ৭০ হাজার। সবমিলে খামারের সংখ্যা এক লাখ ৩৬ হাজার। এসব খামার থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হাতে এসে পৌঁছে গেছে কোরবানির পশুর তথ্য। এবার গবাদি পশু (গরু ও মহিষ) প্রস্তুত ৪৫ লাখ। ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত ৭২ লাখ। সবমিলে এক কোটি ১৭ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত। সর্বোচ্চ এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে বলে ধারণা। ফলে এবারও সাত লাখ পশু অবিক্রিত থেকে যেতে পারে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. হিরেশ রঞ্জন ভৌমিক বাংলানিউজকে বলেন, চাষি ও খামারিরা পশুর দাম বেশি পাচ্ছেন। ফলে পশু পালনে বাংলাদেশে সফলতা এসেছে। সরকার এ বিষয়ে নানা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কোরবানির ঈদে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বেশি পশু মজুদ আছে। ভারত থেকে কোরবানির পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। এখন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত কোরবানির ঈদে প্রস্তুত থাকা ১০ লাখ পশু অবিক্রিত ছিল। আশা করা হচ্ছে, এবারও চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশু অবিক্রিত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৯
এমআইএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।