ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

অভিনব কায়দায় আম বিক্রি, ঠকছেন ক্রেতারা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
অভিনব কায়দায় আম বিক্রি, ঠকছেন ক্রেতারা আম কিনছেন ক্রেতারা। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর অলিগলিতে এখন আমের বাজারে সয়লাব। এসব ব্যবসায়ীদের অনেকে বলছেন, আমাদের আম ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ কিংবা রাজশাহীর বাগান থেকে সরারসি আনা। যদিও তাদের কথার সঙ্গে বাস্তবতার মিল কতোটুকু আছে, তারাই ভালো বলতে পারবেন।

তবে রাজধানীর মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকায় ক্রেতার চোখে ধুলা দিয়ে সম্পূর্ণ অভিনব কায়দায় এক শ্রেণির বিক্রেতারা আম বিক্রি করছেন। তারা আমের তাজা ডালের সঙ্গে কৃত্রিমভাবে ঝুলিয়ে রেখেছেন আম।

বলছেন, ডালে লেগে থাকা অবস্থায়ই আম আনা হয়েছে। এখান থেকেই কেনা যাবে আম। তবে দাম বেশি।

এসব ডালে পর্যাপ্ত পাতা থাকায় দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, ডালের সঙ্গে বাস্তবেই আম ঝুলছে, না-কি অন্য গাছের আম এসব ডালের সঙ্গে টেপ দিয়ে লাগানো হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গাছ থেকে পাড়ার সময় যেসব ডাল আমসহ ভেঙে পড়ে, সেগুলো আমরা নিয়ে আসি। সেবস ডাল থেকেই ক্রেতারা নিজে দেখে আম নিতে পারছেন। যদিও ডালে ঝোলানো আম বিক্রি করতে দেখা যায়নি কারও কাছে। ক্রেতারা না বুঝেই ডাল থেকে মাত্রই নামানো হয়েছে এমনটি শুনে সরল মনে বেশি দামে আম কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। অন্যদিকে, প্রতারণার মাধ্যমে বড় অঙ্কের মুনাফা নিচ্ছে বিক্রেতা চক্রটি। আম কিনছেন ক্রেতারা।  ছবি: বাংলানিউজরাজধানীর মতিঝিল সিটি সেন্টার সংলগ্ন গলি, শাপলা চত্বর ও গুলিস্থান এলাকায় এভাবেই মানুষকে বোকা বানিয়ে আম বিক্রি করতে দেখা যায়। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর বাংলানিউজ তাদের প্রতারণার বিষয়টি তুলে ধরতে সক্ষম হয়।

মতিঝিল সিটি সেন্টার এলাকায় সবুজ নামে এক বিক্রেতা নিজের ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে আম বিক্রি করছেন। তাদের ভ্যানগাড়ির সঙ্গে একটি তাজা আমের ডাল টাঙানো। ডালটির সঙ্গে রয়েছে প্রচুর পাতা। আর এসব পাতার ভাঁজে ভাঁজে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে আমগুলো লাগিয়ে রাখা। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এসব আম আসলে তাদের লাগানো, ডালের আম নয়। আমের কোনোটি সুতা দিয়ে, কোনোটি আবার সাদা টেপ দিয়ে লাগানো হয়েছে।

বিক্রেতা সবুজ ক্রেতাদের বলছেন, আমাদের আমের অধিকাংশই ডালসহ রাজশাহী থেকে আনা। যদিও তার কথার সঙ্গে মোটেও মিল নেই। ক্রেতারা ডালের আম চাইলেও তাদের দিতে দেখা যায়নি একবারও।

একইভাবে রাশেদ নামে একজন আম বিক্রি করছেন মতিঝিল মোহামেডান ক্লাব মাঠের গলির ভেতরে, শফিক বিক্রি করছেন মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকার আরামবাগের দিকে, কালু বিক্রি করছেন জীবনবীমা ভবনের সামনে।

এসব আম ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন তারা। আর তাদের অভিনব কায়দায় বিক্রির নামে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা।

ব্যাংক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সিটি সেন্টার এলাকা থেকে পাঁচ কেজি আম কিনেছেন। তিনি ডাল থেকে কয়েকটি আম ছিড়ে নিতে চাইলেও বিক্রেতা দেবো দেবো করে দীর্ঘ সময় পার করলেন। বিক্রেতা সাইফুলকে বললেন, স্যার মাত্র ডাল থেকে আম নামিয়েছি। সে আমগুলোই আপনাকে দেওয়া হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ডালে লাগানোগুলো না নিয়ে নিচেরগুলোই নেন তিনি।

বাংলানিউজকে সাইফুল বলেন, আমগুলো দেখতে ভালো ও টাটকা মনে হচ্ছে। আমের অধিকাংশই ডালসহ নিয়ে আসা। হয়তো এটাতে কোনো ফরমালিন নেই।

তবে এই প্রতারণার ফাঁদ প্রকাশ হওয়ার পরপরই সাইফুল তার কেনা আমগুলো বিক্রেতার কাছে ফেরত দিতে যান। এসময় বিক্রেতা তার ১০০ টাকায় কেনা আমগুলো কেজিতে ৭৫ টাকা করে রেখে বলেন, মামা আম ভালো, কোনো বিষ নেই এতে।

এসময় প্রতারণার বিষয়ে এ ক্রেতা প্রশ্ন করলে ‘সরি’ বলে উত্তর দেন বিক্রেতা সবুজ।

এ বিষয়ে আম বিক্রেতা রাশেদ বাংলানিউজকে বলেন, আসলে মামা এর আগে বেশ কয়েকটি আমের চালান এনে বড় লোকসানে পড়েছি। এরপর থেকে এভাবে আম বিক্রি করলে দাম বেশি হলেও ক্রেতারা কিনে নেন।

তার প্রতিদিন ২০০ কেজির ওপরে আম বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

এভাবে আম বিক্রি করা তো প্রতারণার মধ্যে পড়ে- এমন প্রশ্ন করতেই সবুজের জবাব, আমি তো চুরি করি না। ওজনে কম দিই না। ব্যবসা করে খাই। যদিও এটা ঠিক হচ্ছে না। তবে পেটের দায়ে এমন করি।

বাংলাদেশ সময়: ১০২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
ইএআর/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।