ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ন্যাপকিন তৈরির কাঁচামালে কর প্রত্যাহারের পরামর্শ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৪ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৯
ন্যাপকিন তৈরির কাঁচামালে কর প্রত্যাহারের পরামর্শ

ঢাকা: স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে কর প্রত্যাহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

শনিবার (২০ জুলাই) দুপুরে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের (ইডব্লিউএমজিএল) কনফারেন্স রুমে দৈনিক কালের কণ্ঠ আয়োজিত ‘স্যানিটারি ন্যাপকিনে ভ্যাট-ট্যাক্স হ্রাস, প্রভাব ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ পরামর্শ দেন তারা।

বিশিষ্টজনেরা বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে কর থাকলে এর উৎপাদন খরচ বাড়বে।

ফলে পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। এতে ন্যাপকিন ব্যবহারে নারীরা নিরুৎসাহিত হবে। ফলে, নারীস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়বে। ন্যাপকিন ব্যবহার নারীর অধিকার। তাই, এ পণ্য তৈরির কাঁচামালে কর আরোপ করা উচিত নয়।

‘বাংলাদেশে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারকারী নারীর সংখ্যা মাত্র ৬০ লাখ। প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ নারী ন্যাপকিন ব্যবহারের বাইরে রয়েছেন। কর আরোপের ফলে পণ্যের দাম বাড়লে, ন্যাপকিন ব্যবহারের আওতার বাইরে থাকা নারীদের এটি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা তো যাবেই না, বরং যারা ব্যবহার করেন, তাদের অনেকেও এটি ব্যবহার বন্ধ করে দিতে পারে। ’ 

বক্তারা বলেন, উপবৃত্তির সতো প্রতিটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্যানিটারি ন্যাপকিন কর্নার’ তৈরি করা যেতে পারে। সরকার বাজেটে এ খাত সৃষ্টি করে বরাদ্দ দিতে পারে। তাহলে, স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়বে, আর নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে।

আয়োজিত বৈঠকে সঞ্চালনার ফাঁকে দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে কালের কণ্ঠ। যেকোনো বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো সবচেয়ে জরুরি। মানুষ সচেতন হলে যেকোনো সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব। সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যান, তাহলে সব সমস্যার সমাধান হবে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিষয়েও সুন্দর একটি সমাধান আসবে।

ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. খাইরুল ইসলাম বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার নারীর অধিকার। নিত্য-ব্যবহার্য এ পণ্যের কাঁচামালের ওপর কর আরোপ করলে, এর প্রভাব বাজারে পড়বে। আশা করি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃপক্ষ বিষয়টির সুন্দর সমাধান বের করবে।  

তিনি বলেন, বর্তমানে পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো বিজ্ঞাপন। এর মাধ্যমে সমাজে ন্যাপকিন ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ন্যাপকিন তৈরি করা সব কোম্পানিকেই ৫০ পয়সা করে হলেও এ পণ্যের দাম কমিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এতে ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে মানুষের ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।

বসুন্ধরা গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ হাইজিন প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগে অগ্রিম বাণিজ্য কর ছিল না। কিন্তু, এখন অগ্রিম কর দিয়ে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। ফলে, পণ্য বিক্রি হোক বা না হোক, ভ্যাট দিতেই হয়। তাই, বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতা থাকলে হয়তো এ পণ্যের দাম বাড়বে না। সেটা না থাকলে দাম বাড়বেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ সেক্টরে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। এখন সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী ৭৫ কোটি টাকা ও ২৫০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান করা হলে যে ১০ শতাংশ ইনসেনটিভের কথা বলা হচ্ছে, সেটা ক’জনে করতে পারবে। কারণ, ন্যাপকিন উৎপাদনের জন্য ১২ কোটি টাকা দিয়ে একটি মেশিন কিনে উৎপাদন শুরু করলে, সর্বোচ্চ ২০ জনের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী, একটি মেশিনের বেশি লাগছেও না। সুতরাং, আপাতত সেটাও করা যাচ্ছে না। তাই, ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থেই কাঁচামালের কর প্রত্যাহার করা জরুরি।  

মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য ভারত সুন্দর একটি প্রকল্প নিয়েছে। প্রয়োজনে আমরাও সে মডেল অনুসরণ করতে পারি।

এনবিআরের ফার্স্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ তারিক হাসান রিকাবদার বলেন, দাম কোনো ফ্যাক্টর না। দাম যদি ফ্যাক্টর হতো, তাহলে ৬০ লাখ নারী ন্যাপকিন ব্যবহার করতেন না। দামের চেয়েও বড় বিষয়, ব্যবহার বাড়ানো। সেজন্য সরকার স্বাস্থ্য খাতের আওতায় একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিতে পারে।

‘সে প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও পাবলিক স্থানগুলোতে স্যানিটারি ন্যাপকিন কর্নার তৈরি করা যেতে পারে। সেখান থেকে বিনামূল্যে নারীরা ন্যাপকিন নিতে পারবে। স্টেক হোল্ডারসহ আপনারা সবাই মিলে সরকারকে এ ধরনের একটি প্রস্তাবনা দিতে পারেন। ’

তিনি আরও বলেন, আমরা কোনো সেক্টরকেই করের বাইরে রাখতে রাজি নই। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এনবিআর রক্ষণশীল। আগে বিভিন্ন পণ্যে কর অব্যাহতি দিয়ে দেখা গেছে, জনগণ এর সুবিধা পায় না।

এনবিআরের এ কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু এ বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাই আমরা বিষয়টি নিয়ে আরও বিশ্লেষণ-অধ্যয়ন করবো। যেহেতু আমরা খুব অল্প সময়ে সেটা করেছি, তাই কিছু ফাঁক থাকতে পারে। যদি তা থাকে, তাহলে সবার মতামতের ভিত্তিতে সন্তোষজনক সমাধান করবো।

গোল টেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কালের কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল। এতে আরও অংশ নেন ওজিএসবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী, এসিআই লিমিটেডের বিজনেস ডিরেক্টর কামরুল হাসান, প্র্যাক্টিক্যাল অ্যাকশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীতা গাজী রহমান, টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ ২৪’র হেড অব নিউজ শাহনাজ মুন্নী, বাংলাদেশ হেলথ রিপোটার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, স্কয়ার টয়লেট্রিজের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাবেদ, ব্লাস্টের লিগ্যাল অফিসার অ্যাডভোকেট আয়েশা আক্তার, সেভ দ্য চিলড্রেনের ডা. ওয়াহিদা সিরাজ, ওয়ার্ল্ড ভিশনের কো-অর্ডিনেটর মন্দিরা গুহ নিয়োগি, সাজেদা ফাউন্ডেশনের অ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর মো. ফজলুল হক ও গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
টিএম/এসএ/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।