ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দেশেই উৎপাদন হচ্ছে মার্কিন ‘ব্রাহমা’ জাতের গরু

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
দেশেই উৎপাদন হচ্ছে মার্কিন ‘ব্রাহমা’ জাতের গরু ব্রাহমা জাতের বাছুর, ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: গত কোরবানি ঈদের ব্রাহমা জাতের গরু ‘বাদশাহ’ প্রায় ২৯ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। বাদামি রংয়ের এই ‘বাদশাহ’র আগমন সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে। গতবছর কার্গো প্লেনে প্রায় ৩৩ ঘণ্টার আকাশপথে বাংলাদেশে পৌঁছে ‘বাদশাহ’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত লাল ও কালোর সংমিশ্রণে ব্রাহমা জাতের গরুর দেহ প্রকাণ্ড। তাই কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে পয়সাওয়ালাদের কাছে এই জাতের গরুর আকর্ষণ রয়েছে।

তাই আগে-ভাগেই খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মে বর্তমানে ব্রাহমা জাতের মোট ২০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা। দুই মাস আগে এখানেই একটি গাভী বাচ্চা দিয়েছে। সেই বাছুরও দেখতে অনেকটা দেশীয় জাতের বড় গরুর সমান। এর মধ্যে ১৪টা গাভী ও পাঁচটি ষাঁড়। কয়েকটির বয়স বছর-দুয়েকের বেশি হবে।  

সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার ঈদে ব্রাহমা জাতের তিনটি গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘মেসি’, ‘বস’ ও ‘রোজো’। বাংলাদেশেই পিওর ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে ‘বাবা’ হয়েছে ‘রোজো’। এছাড়া আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ‘বাবা’ হতে যাচ্ছে ‘মেসি’ ও ‘বস’। ব্রাহমা জাতের গরু, ছবি: শাকিল আহমেদব্রাহমা জাতের গরু ‘মেসি’র রং বাদামি। উচ্চতা ৬ ফুটের বেশি। লম্বায় ৮ ফুট। বয়স সাড়ে তিন বছর। ওজন ১ হাজার ২০০ কেজি। এবার ঈদে এর দাম হাঁকা হচ্ছে ৩৫ লাখ টাকা।

এই জাতের আরেকটি গরুর নাম ‘বস’। ‘বসে’র বয়স চার বছর। ধূসর সাদা রঙের গরুটির ওজন ১ হাজার ৫০০ কেজির মতো। এর দাম চাওয়া হচ্ছে ৪৫ লাখ টাকা। লাল-বাদামি ব্রাহমা জাতের গরু ‘রোজো’র দাম হাঁকা হচ্ছে ২২ লাখ টাকা। এর ওজন ১ হাজার ১০০ কেজি। এসব গরু আকাশপথে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রাহমা জাতের গরু পালন ও পরিচর্যার জন্য আলাদা শেড করা হয়েছে। প্রায় সময়ই পরিচর্যায় ব্যস্ত পাঁচ থেকে ছয়জন কর্মী। প্রতিটা গরুর খাবার তালিকায় রয়েছে দৈনিক ২০ কেজি গম, ভুট্টা, খেসারির ভুষি। পাশাপাশি দেওয়া হয় ২৫ কেজি ঘাস ও ৮ কেজি খড়।

শেডে রাখা হয়েছে ২৪ ঘণ্টা ফ্যানের ব্যবস্থা। শেডের সামনে ছোট মাঠও রয়েছে। বিকেল গড়িয়ে গেলে মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয় গরু।  ব্রাহমা জাতের গরু, ছবি: শাকিল আহমেদসাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের গরু পরিচর্যাকারী রাসেল সর্দার বাংলানিউজকে বলেন, ব্রাহমা জাতের গরু দেখতে বেশ বড়। ২৪ ঘণ্টায় চোখে চোখে রাখতে হয়। একটা সন্তান যেভাবে দেখভাল করতে হয় ব্রাহমা জাতের গরুকেও সেভাবেই যত্ন-আত্তি করতে হয়। খাবার, তিন বেলা গোসল ও ঘুম-সব কিছুই নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে।

আমেরিকা থেকে কোরবানির গরু আমদানি প্রসঙ্গে সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্ত্বাধিকারী ইমরান হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সরাসরি কার্গো প্লেনে করে আমেরিকা থেকে ঢাকায় গরু  এনে ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। দেশের বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই জাতের গরুর চাহিদা বেশি। তবে আকাশপথে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে গরু আনা বেশ ব্যয়বহুল। গতবছর সাতটি গরুর জন্য প্লেন ভাড়া বাবদই খরচ পড়েছে ১৫ লাখ টাকা।

দেশেই ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদন প্রসঙ্গে এই ব্যবসায়ী বলেন, দেশেই কীভাবে পিওর ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদন করা যায় সে বিষয়টি নিয়ে ভাবি। পরে কিছু গাভী ও বুল আমেরিকা থেকে আমদানি করি। এখন পিওর ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশেই বাচ্চা দিয়েছে আমেরিকান ব্রাহমা জাতের গরু।

‘আমার মনে হয় এমন ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম। আমেরিকান ষাঁড়-গাভী বাংলাদেশে জন্ম দিয়েছে ব্রাহমা জাতের গরু। ’ব্রাহমা জাতের গরু, ছবি: শাকিল আহমেদতিনি বলেন, সামনে ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদনে আরো সফলতা পেতে চাই। আশা করি একদিন বড় বড় ব্রাহমার জন্য আর ট্রাম্পের (ডোনাল্ড ট্রাম্প) দেশে যেতে হবে না। সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশেই ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদন করা সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে ব্রাহমা জাতের গরু নিয়ে কোনো ধরনের গবেষণা হয় না। তবে ব্যক্তি উদ্যোগে ব্রাহমা জাতের গরু উৎপাদনে সফলতা পেয়েছে সাদিক অ্যাগ্রো।

প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  ননী গোপাল দাস বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য গরু মহিষ নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা চলমান। তবে ব্রাহমা জাতের গরু নিয়ে কোনো গবেষণা হয় বলে আমার জানা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৯
এমআইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।