ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সাগর উত্তাল থাকায় ইলিশ শিকারে যেতে পারছে না জেলেরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯
সাগর উত্তাল থাকায় ইলিশ শিকারে যেতে পারছে না জেলেরা বন্দরে নোঙর করা ফিশিংবোট, ইনসাটে জেলেদের ব্যস্ততা। ছবি: বাংলানিউজ

ব‌রিশাল: দীর্ঘ দুইমাস নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে মাছ ধরা শুরু করেছেন জেলেরা। শুরু থেকেই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন আকারের রুপালি ইলিশ। তাই ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) নিষেধাজ্ঞার শেষ হওয়ার পর সাগরে মাছ শিকারে নেমে আবার অল্প সময়ের মধ্যেই ফিশিং বোটগুলো ফিরে আসছে বরিশাল, পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকার মৎস অবতরণ কেন্দ্র ও বন্দরগুলোতে।

আর ইলিশকে ঘিরেই দীর্ঘ ৬৫ দিন ঝিমিয়ে থাকা মৎস অবতরণ কেন্দ্র ও বন্দরগুলো কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। তবে লঘুচাপের কারণে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় জেলেদের মুখের হাসি অনেকটাই মলিন হতে বসেছে।

ইলিশ শিকার মৌসুমের শুরুতেই বিরূপ আবহাওয়া জেলেদের মধ্যে নতুন করে উদ্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। সমুদ্র উত্তাল থাকায় অনেক ফিশিং বোটই ফিরে এসেছে তীরে।  ফলে শনিবার থেকে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে মৎস অবতরণ ও বন্দরগুলো। বন্দরগুলো ফেরত আসা বোটগুলোতে যে মাছ পাওয়া যাচ্ছে তাই সম্বল বাজারের।

জেলেরা বলছেন, সাগর উত্তাল হয়ে ওঠলে মাছ ধরা সম্ভব হয় না, আর বর্তমান বৈরী আবহাওয়ার কারণে উত্তাল থাকায় সমুদ্রে মাছ শিকার বন্ধ বললেই চলে। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বৃষ্টি হলে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশাবাদী তারা।

পটুয়াখালীর আলিপুর মৎস বন্দরে নোঙর করে রাখা এফবি ফয়সাল নামক বোটের মাঝি শাহ জালাল বাংলানিউজকে বলেন, আবহাওয়ার কারণে হঠাৎ সাগর উত্তাল হওয়ায় মাছ শিকার বন্ধ করে তীরে ফিরে এসেছেন। যে মাছ নিয়ে এসেছেন তা খুবই সামান্য। নোঙর করা ফিশিংবোট, ছবি: বাংলানিউজজেলে মোবারক হোসেন বলেন, ৬৫ দিন অবরোধের কারণে পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে সময় কাটাতে হয়েছে। এখন মাছ শিকারে গিয়ে যদি আবহাওয়া অনুকূলে না থাকে তবে লোকসান ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

অপরদিকে পার্শবর্তী মহিপুর মৎস বন্দরের শ্রমিক মনির হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকে আলিপুর ও মহিপুর বন্দরে ইলিশের দেখা মিলতে শুরু করে। তবে বর্তমানে আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় গত ২ দিনে ইলিশের আমদানি কমে গেছে। এতে কাজের চাপ কমে শ্রমিকদের রোজগারও কমে গেছে।

আলিপুর মৎস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ফজলুল হক গাজী বলেন, সাগরে মাছ শিকারে নেমে দু’দিন যেতে না যেতেই সাগর উত্তাল হতে শুরু করে। ফলে শুক্রবার ও শনিবার স্থানীয় বেশিরভাগ ফিশিংবোট ফিরে এসেছে। যা নোঙর করা থাকলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এর প্রভাব শুধু ব্যবসায়ী নয়, জেলে-শ্রমিক, বোট মালিকসহ সবার ওপরে পড়বে।

এদিকে কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা বলেন, জানমালের হেফাজতের জন্যই ফিরে এসেছেন জেলেরা। এজন্য উপকূলীয় বাজারগুলোতে ইলিশের আমদানিতে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে।   তবে যে ইলিশ এখন পর্যন্ত সাগর থেকে এসেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে অল্প সময়ে প্রচুর ইলিশ আরোহণ করতে পারবেন জেলেরা।

অপরদিকে রোববার থেকে বরিশাল নগরের পোর্টরোডস্থ একমাত্র বেসরকারি মৎস অবতরণ কেন্দ্রে সমুদ্র থেকে কোনো ফিশিংবোট মাছ নিয়ে আসেনি। তবে এর আগে ২/৩ দিন বরিশালে সামুদ্রিক বোট থাকায় প্রচুর ইলিশ ছিল বাজারে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় নদীর ইলিশ বাজার দখল করে রেখেছে।

এতে করে ২ দিন আগের থেকে রোববারের বাজারে ১ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ইলিশের দর আকার অনুযায়ী মণপ্রতি বেড়ে গেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

মৎস ব্যবাসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পোর্টরোডের বাজারে গোটলা সাইজের ইলিশের দর মণপ্রতি ২২-২৩ হাজার, ভেলকা সাইজের দর ৩০-৩২ হাজার টাকা, এলসি সাইজ (৬ থেকে ৯শ গ্রাম ওজন) এর দর ৪২ থেকে ৪৪ হাজার টাকা, কেজি সাইজের ৫৫ হাজার টাকা, কেজির ওপরে ৬৫ হাজার টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের দর রয়েছে মণপ্রতি ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা।

যদিও নিষেধাজ্ঞার আগে সাইজ অনুযায়ী এসব ইলিশের মণপ্রতি দর ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল বলে যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯
এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।