ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যানবাহন নেই, তবুও দেখানো হলো পেট্রোল-রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১৯
যানবাহন নেই, তবুও দেখানো হলো পেট্রোল-রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মোটরযান ও পেট্রোল।

ঢাকা: প্রকল্পের আওতায় গাড়ি কেনার জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। এরপরও মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৬০ লাখ এবং পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট কেনার জন্য ২৪ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। প্রকল্প থেকে এ দুই খাতের ব্যয় বাদ দেওয়ার সুপারিশের পাশাপাশি এ কাজের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। একইসঙ্গে এ খরচ কেন দেখানো হয়েছে তার ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে।

এ ঘটনা ঘটেছে প্রস্তাবিত ‘জাতীয় আরকাইভস ও জাতীয় গ্রন্থাগার ডিজিটাইজেশন, অনলাইন সেবা সম্প্রসারণ এবং আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের ক্ষেত্রে।

সম্প্রতি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা করেছে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক বিভাগ।

সভায় এ প্রকল্পের আওতায় মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণ এবং পেট্রোল ও লুব্রিকেন্ট কেনার জন্য অপ্রয়োজনীয় খরচ দেখানোর বিষয়টি উঠে এসেছে।

সভা সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় কোনো যানবাহনের দরকার নেই।  অথচ প্রকল্পের আওতায় যানবাহন মেরামত ও পেট্রোল বাবদ ব্যয় রাখা হয়েছে।  সুপারিশ করা হয়েছে, এসব ব্যয় যেন প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়।

সভায় উপস্থিত থাকা পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, পিইসি সভায় এমন ঘটনা আর ঘটেনি।  প্রকল্পের আওতায় কোনো যানবাহন রাখা হয়নি, অথচ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় পেট্রোল ও যানবাহন মেরামত ব্যয় নিয়ে কী করবে তা আমাদের জানা নেই।  ফলে এসব ব্যয় আমরা প্রকল্পে কোনোভাবেই রাখতে পারি না।  তাই প্রায় এক কোটি টাকা প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছি। একইসঙ্গে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংশোধন করে নতুন ডিপিপি আনতে বলেছি।

অন্যদিকে সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) দিলীপ কুমার সাহা।

প্রকল্পের আওতায় মেরামত ও পেট্রোল বাবদ ব্যয় চাওয়ার বিষয়ে দিলীপ কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আমি আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর থেকে চলে এসেছি।  এ বিষয়ে কিছু বলবো না।  পরিকল্পনা কমিশনের রেজ্যুলেশন হাতে এসে এখনও পৌঁছায়নি। পৌঁছালে সে অনুযায়ী সংশোধন করা হবে।  যেহেতু এ মন্ত্রণালয় থেকে চলে এসেছি, সুতরাং বিষয়টি নিয়ে কিছু বলবো না।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে আরও অসঙ্গতির খোঁজ পেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।  এ প্রকল্পের মোট ব্যয় চাওয়া হয়েছে ৩৬২ কোটি ৭০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।  এরমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই যাবে পরামর্শকের পকেটে। প্রকল্পের আওতায় এর জন্য ১৮১ কোটি ৭০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।  অথচ সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে কোনোভাবেই পরামর্শক খাতে ১৫ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না।  

পরামর্শক খাতে অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পের আওতায় চার ধরনের পরামর্শক সেবা নেওয়া হবে।  এর মধ্যে ইনফরমেশন সিকিউরিটি ও কোয়ালিটি সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান সংস্থা বা আন্তর্জাতিক মানক সংস্থার সনদ গ্রহণ করতে হবে।  স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের (এসওপি) ক্ষেত্রে কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ, বুয়েট থেকে সেবা গ্রহণ এবং ডিজিটাইজেশন সার্ভিসের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।  অধিদপ্তরের সংরক্ষিত ৮ কোটি ৫০ লাখ ইমেজের স্ক্যানিং, ক্রপিং, এডিটিং, পিডিএফ তৈরি, মেটা-ডাটা তৈরি এবং সার্ভারে আপলোড করতে হবে।  এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের স্ক্যানারসহ যাবতীয় যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করবে। ফলে পরামর্শক খাতে এ ব্যয় ধরা হয়েছে।

প্রকল্পের নানা খাতের ব্যয় নিয়ে ইতোমধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের মধ্যে।  প্রকল্পের আওতায় অযৌক্তিক ব্যয় রাখার কারণেই মূলত বেঁকে বসেছে পরিকল্পনা কমিশন।  প্রকল্পে ২ কোটি টাকা ভ্রমণ ব্যয়ের পাশাপাশি ১ কোটি ৩২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ ব্যয় চাওয়া হয়েছে। যদিও ভ্রমণে কমিয়ে প্রশিক্ষণে ব্যয় বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। শুধু তাই-ই নয় প্রকল্পের আওতায় ১৮ কোটি টাকার আসবাসপত্রও চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানায়, বেশিরভাগ আসবাবপত্র স্ট্যাক ব্লক হিসেবে ব্যবহৃত হবে।  স্ট্যাক ব্লকে ডিজিটাল রেকর্ড সংরক্ষণের জন্য মিডিয়াম ডিউটি র‌্যাক, মোবাইল র‌্যাক, ফায়ার প্রোটেকশন ডোর, ট্রলি, বিভিন্ন কম্পিউটারের চেয়ার ও টেবিল প্রসেসিং ক্যারেট থাকবে।  অন্যদিকে আসবাবপত্র কেনার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় সংস্কার কাজের জন্য চাওয়া হয়েছে ৫ কোটি টাকা।  

আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর জানায়, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার (আরকাইভস), বঙ্গবন্ধু কর্ণার (গ্রন্থাগার) ও মিলনায়তন আধুনিকায়নের জন্য সংস্কার কাজ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় অধিদপ্তরে সংরক্ষিত ৯ কোটি পৃষ্ঠা আরকাইভ ডকুমেন্ট ডিজিটাল সেবায় রূপান্তর, স্বল্প জায়গায় অধিক আরকাইভ ডকুমেন্ট সংরক্ষণ করা হবে।  সংগ্রহশালাকে স্থায়ী সংরক্ষণাগার হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে  ঐতিহাসিক রেকর্ড সংরক্ষণ করা হবে।  ফলে পাঠক, গবেষক, ব্যবহারকারীদের প্রচুর সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।  ডিজিটাইজড নথির নিরাপত্তা ও দ্রুত অনুসন্ধানে আধুনিক পদ্ধতি চালু করাসহ কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে।  প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৯
এমআইএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।