প্রস্তাবিত এ সড়কের কাজ শেষ করতে ১ হাজার ২০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে একটি সহায়ক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর বাইরেও কমিটি আরও ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ ব্রিফিংয়ে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন।
প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ৬ হাজার ২৭৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ২ হাজার ৯৬২ কোটি ৩২ লাখ টাকা বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।
মন্ত্রী জানান, অর্থ দিয়ে প্রকল্প এলাকার জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন করা হবে। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী পরামর্শক ও স্বাধীন প্রকৌশল পরামর্শক সেবার মাধ্যমে নির্মাণ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম তদারকি করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় কম্পিউটার সামগ্রী, ভাড়াভিত্তিক যানবাহন ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৭২ জন সরকারি কর্মকর্তা বিদেশ সফর করবেন। তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানান এম এ মান্নান।
সূত্র জানায়, সড়ক বিভাগের প্রস্তাব অনুসারে হাতিরঝিল সংলগ্ন রামপুরা সেতুর কাছ থেকে শুরু হয়ে বনশ্রী-মেরাদিয়া-শেখের জায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। সড়কটির একটি অংশ ডেমরা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোডে শেষ হবে। আরেকটি অংশ সুলতানা কামাল সেতু হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাবো লিংক মহাসড়ককে যুক্ত করবে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুসারে, অনুমোদন পেলে চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শেষ হবে।
হাতিরঝিল সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবিত এ সড়কটি ফোর লেনে উন্নীত হলে প্রতিদিন এটি দিয়ে ১১ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। মহাসড়কটি রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগর চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জসহ অন্য জেলার সংযোগ ঘটাবে। প্রস্তাবিত র্যুটটি গুলশান, বাড্ডা, ফার্মগেট, তেজগাঁও, বনানী, রামপুরা ও উত্তরার যানবাহনও আকৃষ্ট করবে। এছাড়া, এটি দুই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গেও সংযুক্ত হবে।
প্রস্তাবিত সড়কের মূল প্রকল্পের অংশ রয়েছে ৩টি। প্রথমটি হচ্ছে রামপুরা ব্রিজ থেকে ডেমরা সার্কেল, দ্বিতীয়টি ডেমরা সার্কেল থেকে চিটাগাং রোড ও তৃতীয়টি ডেমরা থেকে তারাবো মোড় পর্যন্ত।
প্রথম অংশটি সাড়ে ৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে রামপুরা থেকে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত। বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত ১.২৫ কিলোমিটার সড়ক ও জনপথের আওতাভুক্ত। রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত বর্তমানে সড়কের পাশে লেক রয়েছে। লেক ও বিদ্যমান সড়কের মধ্যে অব্যবহৃত সড়কের ঢালে পিয়ারের মাধ্যমে এলিভেটেড সড়ক নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাইপাস এ সড়কটি হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি অনুমোদন পেলে সিলেট ও চট্টগ্রামবাসীর জন্য খুবই ভালো হবে। কোনো জটলা ছাড়াই ঢাকা থেকে সিলেট ও চট্টগ্রামে যাতায়াত করতে পারবো আমরা। গুরুত্বসহকারে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
নির্বাচনের আগে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটির কাজ সভায় অনুমোদিত ৯টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে। এর বাইরে অন্য প্রকগুলোর মধ্যে রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ভান্ডাল জুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৫৮ কোটি ৮৫ কোটি টাকা। মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭৯৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জ লিংক সড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ৪৪৯ কোটি ৫৮ লাখ, আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ১৪৭ কোটি, সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার আওতাধীন সুরমা নদীর ডান তীরে অবস্থিত দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, লক্ষীবাউর ও বেতুরা এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৯১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এছাড়া অনুমোদন পাওয়া মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীতীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৯৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২০
এমআইএস/এইচজে