নদীতে জাল ফেলে কোনো জেলেই খালি হাতে ফিরছেন না। মধ্যরাত পর্যন্ত কেনা-বেচায় মাছঘাটগুলো হয়ে উঠেছে সরগরম।
মেঘনা উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। জেলার রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও সদর উপজেলা উপকূলীয় এলাকা। এ চার উপজেলায় প্রায় ৬৫ হাজার জেলের বসবাস। তারা মেঘনা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। ভরা মৌসুমে মেঘনায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়েনি। শেষ মুহূর্তে এসে ইলিশ ধরা পড়লেও জেলেদের পুজিঁ উঠেনি, দাদনদার-মহাজনদের দেনা শোধ হয়নি। শীতে ইলিশ ধরা পড়ায় দাদনদার-মহাজনদের দেনা শোধ করছেন জেলেরা।
মাঘের শীতে ইলিশ ধরা পড়ায় রামগতি, আলেকজান্ডার, কমলনগরের মতিরহাট, লধূয়া ও রায়পুর উপজেলার মাছঘাটগুলো দিন-রাত সরগরম থাকে। জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে ঘাটে তোলেন। ইলিশ ব্যবসায়ীরা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থান সরবরাহ করেন।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাতে লক্ষ্মীপুর শহরের রামগতি বাসস্টান্ড, উত্তর তেমুহনীসহ বিভিন্ন স্থানে জমজমাট ইলিশের হাট বসতে দেখা গেছে। মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে ইলিশ বেচা বিক্রি। এদিকে কমলনগর উপজেলার হাজিরহাটে প্রতিদিন জমজমাট ইলিশের হাট বসে। বাজারে বোয়াল, কোরাল ও পোয়া মাছ থাকলেও ইলিশের দখলেই থাকে পুরো হাট। দামও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। মাঝারি সাইজের (৫০০ গ্রাম) ওজনের প্রতি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় ক্রেতাদের আগ্রহ ইলিশে।
স্থানীয়রা জানান, রামগতি ও কমলনগর মধ্যরাত পর্যন্ত ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হাওয়া ঘাট থেকে দ্রুত হাট বাজারে পৌঁছে তাজা ইলিশ। লক্ষ্মীপুর শহর ছাড়াও চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, জকসিন, তেওয়ারিগঞ্জ, ভাবনীগঞ্জ, দালাল বাজার, কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট লরেন্স, করইতলা, তোরাবগঞ্জ, করুনানগর, রামগতি উপজেলার রামগতিরহাট, আলেকজান্ডার রায়পুরের বিভিন্ন বাজারে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তবে শহরের চেয়ে মাছঘাট ও উপকূলীয় বাজারগুলোতে দাম কম।
ব্যবসায়ীরা জানান, সব মৌসুমেই ইলিশের কদর। যে কারণে বিক্রি বেশি হয়। মধ্যরাতেও বাজারে ইলিশের ক্রেতা থাকে। ঘাটেও প্রচুর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।
রামগতি উপজেলার সেবা গ্রামের জেলে আনোয়ার মাঝি, সজল মিয়া, আলী আব্বাস বলেন, প্রতিদিন নদীতে মাছ শিকার করেন তারা। জালে ইলিশ ধরা পড়ায় নদীতে যেতে আগ্রহ বেড়েছে। দুই সপ্তাহের ইলিশ বিক্রির টাকায় দেনা শোধ করেছেন।
কমলনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস বলেন, মেঘনা নদীর চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের রামগতি পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র। সাগর থেকে এ এলাকায় ইলিশ ডিম ছাড়তে আসে। যে কারণে সারা বছরই কম-বেশি ইলিশ ধরা পড়ে মেঘনা নদীতে। এবার শীত মৌসুমেও ইলিশ ধরা পড়ছে প্রচুর।
রামগতি উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। কারেন্ট জালের ব্যবহার রোধ ও জাটকা না ধরতে জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে। জাটকা রক্ষা ও ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে মৎস্য বিভাগ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২০
এসআর/ওএইচ/