অপরদিকে তিনদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। এছাড়াও ডিমের দামও প্রতি হালিতে ৫ টাকা করে বেড়েছে।
করোনার কারণে দেশব্যাপী কড়া সতর্কতায় সংকট দেখা দিতে পারে-এমন আশঙ্কায় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি নিত্যপণ্য কিনছেন ক্রেতারা। ফলে সৃষ্ট কৃত্রিম সংকটের কারণে বেড়ে চলেছে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম।
শুক্রবার (২০ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার কাঁচাবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। যা ২৪ ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) রাতে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
আল-আমিন, শহীদুল ইসলাম ও আব্দুল আজিজসহ একাধিক খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা জানান, আড়তে পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়ছে। এ কারণে আমাদের বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে বলে জানান তারা। ক্রেতারাও প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ কিনছেন বলে জানান এসব ব্যবসায়ীরা।
গোশালা কাঁচা বাজার পেঁয়াজের আড়তের আড়তদার শাহাদত হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি করা হয় ৩৫ থেকে ৪১ টাকা। শুক্রবার সকালে সেটা ৫৫ ও দুপুরে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে।
অপরদিকে পৌর এলাকার চালের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাটারিভোগ, নাজিরশাইল ও মিনিকেটসহ উন্নতমানের চাল প্রতি কেজিতে ৫ টাকা করে বেশি বিক্রি করা হচ্ছে। রনজিত, স্বর্ণা ৫ অন্যান্য চাল কেজিতে ৬ থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। এতে ক্রেতারা বিপাকে পড়লেও সামনে সংকট পড়বে এমন আশঙ্কায় প্রয়োজনের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি চাল কিনছেন।
কথা হয় শহীদুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, ইয়াছিন আলীসহ বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে। তারা জানান, করোনার কারণে বাজারে আসাই বন্ধ হচ্ছে। তাই বেশি দাম হলেও দুই থেকে তিন মাসের চাল কিনেছেন তারা।
সাখাওয়াত হোসেন, আজাদ, বাদশা আলম, দুলাল হোসেনসহ একাধিক খুচরা বিক্রেতারা বলেন, তিনদিন আগেও স্বর্ণা-৫ চাল ৫০ কেজির বস্তা ১৪শ টাকায় পাইকারি কিনেছি। এখন সেটা ১৭শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যে কারণে বাধ্য হয়ে কেজি প্রতি ৬ থেকে ৭ টাকা করে বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে। কাটারিভোগ ৫৫-৫৬ টাকা কেজি ছিল, এখন সেটা ৬০ টাকায় বিক্রি করছি।
খুচরা বিক্রেতারা আরও বলেন, বেশি দাম হলেও গত দুদিন ধরে বিক্রি বেড়েছে দ্বিগুণ। যে ব্যক্তি প্রতি মাসে ২০ কেজি চাল নিতেন তিনি ১শ কেজি নিয়ে যাচ্ছেন।
মূল্য বাড়ার ব্যাপারে আড়তদার হাজী জুড়ান আলী, লিটন ও সাধন চন্দ্র ঘোষ বলেন, গত ১৫ দিন ধরে পর্যায়ক্রমে ধানের দাম বাড়ছে। এ কারণে বস্তাপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০শ টাকা বেশি বিক্রি করতে হচ্ছে।
এছাড়া করোনার প্রভাবে ক্রেতারা কয়েকগুণ বেশি চাল কিনছেন। ৫০ কেজির এক বস্তায় যার মাস চলে যেতো তিনি ৫ বস্তা চাল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বলে জানান আড়তদাররা।
এ ব্যাপারে জেলা মার্কেটিং অফিসার আইয়ুব আলী বাংলানিউজকে বলেন, করোনার প্রভাবে গ্রাম থেকে এসেও প্রয়োজনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পেঁয়াজ কেনার কারণে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। চাল, ডিম, আলুসহ অন্যান্য দ্রব্যাদির দামও এ কারণেই বাড়ছে। করোনায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হলে সংকট দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কায় ক্রেতারা কয়েক মাসের নিত্যপণ্য ক্রয় করছেন। তবে আগামীকাল শনিবার থেকে অভিযান শুরু করা হবে। বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি বিক্রি করলে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, জনগণ না বুঝে আতঙ্কে পড়ে যেখানে একমণ প্রয়োজন সেখানে তিনমণ ক্রয় করছেন। এতে ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে যায়। জনগণ যাতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি নিত্যপণ্য না কেনে সে বিষয়ে সচেতন করতে হবে।
এছাড়াও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করতে হবে। রোববার (২২ মার্চ) ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা বৈঠক করবো। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্টে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০২০
আরএ