এদিকে ক্রেতা উপস্থিতি কম হলেও নিত্যপণ্যের বাজার চড়া নিয়ে ভিন্নমত দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। বিক্রেতারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমেছে, এ কারণে পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে পণ্যের।
বুধবার (০১ এপ্রিল) রাজধানীর সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, ধূপখোলা মাঠ, রায়সাহেব বাজার ও নয়াবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
রাজধানীর বাজারগুলোতে মান ভেদে প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২২ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শিম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মূলা ২০ থেকে ৩০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ও ক্ষিরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুনদল, ঝিঙা ৪০ থেকে ৫০, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কাঁচা আম ১৮০ টাকা, সাজনা ১৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। এছাড়া কাঁচা কলা প্রতি হালি ৩০ থেকে ৪০, মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ২০ থেকে ২৫ টাকা, প্রতি আঁটি পাট শাক ১০ টাকা, লাল শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ২০ টাকা, ডাটা ২৫ থেকে ৩০ টাকা। তবে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে লেবু। প্রতি হালি মান বেধে লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।
কয়েকজন সবজি ব্যবসায়ী জানান, ক্রেতার অভাবে তারাও তরিতরকারি বিক্রি করতে পারছেন না। পাইকারি বাজার থেকে বিক্রির জন্য খুব অল্প করে তরিতরকারি আনলেও তা বিক্রি হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়বে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের কারণে এখন বাজারে পণ্য সরবরাহ কমেছে। এ কারণে পাইকারি বাজারে দাম বেশি। যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করি।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রাসেল বাংলানিউজকে জানান, করোনার কারণে সরকার দুই ধাপে ১৭ দিন ছুটি দিয়েছে। অনেকেই গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। আমরা যারা ঢাকায় আছি প্রায় সকলে গৃহবন্দি। প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছি না। আজ চারদিন পর কাঁচা বাজারের প্রয়োজনে বাইরে এসেছি। বাজারে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। তবে ক্রেতা কম। কিন্তু কোনো জিনিসেরই দাম কমে নাই। ব্যবসায়ীদের কাছে দাম না কমার কারণ জানতে চাইলে বলে, পাইকারি বাজারে মাল কম আসে। ফলে দাম বেশি। কিন্তু বাজারে কোনো মালের ঘাটতি না থাকলেও দাম বাড়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি।
এদিকে, অপরিবর্তিত আছে পেঁয়াজের দাম। এসব বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। প্রতিকেজি রসুন দেশি (মানভেদে) ৭০ থেকে ১০০ টাকা, চায়না ১৩০ থেকে ১৫০, তিন কোয়া রসুন ১৮০, আদা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। দাম বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেলের।
খোলা সয়াবিন (লাল) বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা লিটার। মুসুর ডাল প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১৩০ টাকা, বুটের ডাল ৮০ টাকা, মুগ ডাল ১৪০ টাকা, মটর ডাল ৯০, আটা ২ কেজির প্যাকেট ৬০, সুজি হাফ কেজি ২৮ টাকা, সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা। লাল ডিম প্রতি ডজন ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা, দেশি মুরগি ১৫০ টাকা, সোনালি ১৪০, হাঁস ১৩০ টাকা, কোয়েল প্রতি ১০০ পিস ২০০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা যায়, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজিদরে। আগের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মহিষ ও খাসির মাংস। মহিশের মাংস ৬০০ টাকা, খাসির মাংস ৮০০ টাকা, বকরির মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে তুলনামূলক দাম কমেছে মুরগির। এসব বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, লেয়ার ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা, সাদা লেয়ার ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকা, ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০, ছোট ইলিশ আকারভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। প্রতিকেজি কাঁচকি ৪০০ টাকা কেজি, মলা ৪০০ টাকা, ছোট পুঁটি (তাজা) ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি (গলদা) ৫০০ থেকে ৮৫০ টাকা, বাগদা ৪৫০ থেকে ১০০০ টাকা, দেশি চিংড়ি ৪০০ থেজে ৫০০ টাকা, রুই (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, মৃগেল ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাঙাস ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কাতল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গত ১৫ দিনে চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। প্রতি কেজি মিনিকেট (সাধারণ) চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায়। মিনিকেট (উত্তম) বিক্রি হয়েছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, নাজিরশাইল প্রতিকেজি ভালো ৬০ থেকে ৬২ টাকা, সাধারণ ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা, মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৪২-৫০ টাকা, ২৮ চাল প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৪ টাকা, ২৯ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা ও ইরি চাল ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২০
জিসিজি/এইচএডি/