রোববার (৫ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর মিরপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিয়ালবাড়ীর রূপনগর ঝিলপাড় বস্তি ও মহাখালীর সাততলা বস্তি এলাকায় এ চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।
এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই রূপনগরে ১০ টাকা দরে চাল নিতে মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। বর্তমানে দেশের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ কার্যক্রম চলার কথা থাকলেও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো সেটি মানছেন না। গা ঘেঁষে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ১০ টাকা দরে চাল নিচ্ছেন অসহায় মানুষগুলো। একাধিকবার নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার কথা প্রশাসন থেকে মাইকে বলা হলেও কেউ তা মানছেন না। কে আগে চাউল নেবে সেটি তাদের মূল লক্ষ্য ছিল।
এ ব্যাপারে রূপনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শত চেষ্টা করেও সঠিকভাবে জনগণকে দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড় করাতে পারছি না। শত বুঝানোর পরও তারা গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন।
এদিকে, সকাল ১০টায় এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তফাজ্জল হোসেন টেনু। এসময় তার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
রূপনগরে ওএমএসের কার্যক্রম মনিটরিং করছেন এলাকার রেশনিং কর্মকর্তা ডি-৭ এর মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দূরত্ব বজায় রেখেই কাজ করার চেষ্টা করছি। সকাল ১০টা থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৬০০ পরিবারকে আমরা এ চাল বিতরণ করবো। আমাদের এখানে তিন মেট্রিক টন চাল রয়েছে। সপ্তাহে তিনদিন এ এলাকায় চাল বিতরণ করা হবে।
তবে, এ কার্যক্রম তদারকি করতে দেখা গেছে মহিলা আওয়ামী লীগের রূপনগর থানার আহ্বায়ক নাসরিন মজিদকে। তিনি সহ বেশ কয়েকজন কর্মী মাস্ক বিতরণ ও লাইনে দাঁড়ানোর বিষয়টি তদারকি করছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা জনগণকে সচেতন করতে অসহায় মানুষদের মাস্ক বিতরণ করছি। একই সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি বলে তিনি জানান।
এদিকে সকাল সাড়ে দশটার দিকে এই কার্যক্রম পরিদর্শন করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন মনিরা।
একটি পরিবারের একজনই ৫ কেজি চাল নিতে পারবেন। তবে সেটি অনেকেই মানছেন না। একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল নিতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে রূপনগরে বস্তিতে থাকা সাইফুল জানান, পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনেক ৫ কেজি চাল একদিনেই লাগে। তাই চাল নিতে একাধিক সদস্য দাঁড়িয়েছি।
ওএমএসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ট্রাক থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি করে চাল কিনতে পারছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ফটোকপি জমা দিয়ে চাল নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ওএমএস ডিলার শাহ আলম বলেন, এখান থেকে তিন মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে। প্রতিটি পরিবার থেকে একজন পাঁচ কেজি চাল সর্বোচ্চ নিতে পারবেন। তবে এনআইডির ছাড়াও ফজলুল হক নামক এক মুক্তিযোদ্ধাকে চাল নিতে দেখা গেছে।
খাদ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, রোববার থেকে রাজধানীতে ওএমএসে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। শিগগিরই এটি উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হবে। ঢাকা মহানগরে মোট ৭৩টি বস্তি আছে। এ বস্তিগুলোতে ৩৯ হাজার ১৮০টি পরিবার আছে। এখানে মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ।
ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে জানা যায়, এরা কেউ সরকারের খাদ্য সহায়তা পায়নি। ঢাকা মহানগরে ওএমএস ডিলার কেন্দ্রের সংখ্যা ১২০টি। এ ডিলারদের তালিকা থেকে ২৪ জন ডিলার বাছাই করে সপ্তাহে ৩ দিন পর্যায়ক্রমে ৭৩ বস্তি বা ৩৯ হাজার ১৮০টি পরিবারের কাছে ওএমএসের ৫ কেজি করে চাল বিক্রয় করা হবে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এ কার্যক্রম ঢাকা জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় বা খাদ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে ঢাকা রেশনিং ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবে।
গত ২৬ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময়ে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। শহর এলাকায় বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন শহরে বসবাসরত খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠী হকার, রিকশা, ভ্যানচালক, দিনমজুর, বাস ড্রাইভার ও হেলপার। যারা এ পরিস্থিতিতে শহরে রয়েছেন তাদের এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সরকারের মূল উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০২০
এসএমএকে/ওএইচ/