ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দেশের অর্থনীতিতে বড় ক্ষতি বয়ে আনবে করোনা

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২০
দেশের অর্থনীতিতে বড় ক্ষতি বয়ে আনবে করোনা

ঢাকা: করোনা পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। তারা আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার দুর্বলতা এই ক্ষতির গভীরতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

তাদের মতে, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আমাদের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কম আদায় হবে।

এই ঝুঁকি মোকাবিলা করে দেশের শিল্প-কারখানা টিকিয়ে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তবে কোথায় কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে সে জন্য দ্রুত সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও তদারকি ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর অনেক দেশেই তাদের জিডিপির ১০ শতাংশের বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে। আমাদের যদি তার অর্ধেকও হয়, তাহলেও ১ লাখ কোটি টাকা বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে।

করোনার প্রভাবে রপ্তানি আয়ের সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ রেমিট্যান্সসহ আরও বেশকিছু খাত বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। প্রবাসী আয়ে আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা খুবই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এই সংকটে প্রবাসী আয়ও অনেক কমে যাবে। পৃথিবীর অনেক দেশে আমাদের শ্রমিকেরা কাজ করছেন। সেসব দেশে বেতন কমে যাবে, অনেকে চাকরি হারাবেন। ফলে এইসব শ্রমিকরা দেশে ফিরলে অর্থনীতি বড় ধরনের চাপে পড়বে।

পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরের কারখানা বন্ধ, শ্রমিক ছাঁটাই, নিয়োগ বন্ধ, বেতন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সতর্কভাবে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকারের সহায়তা বাড়াতে হবে। এতে করে ব্যয় বাড়লেও সরকারের আয় কমবে। ফলে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে। সব দিক দিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘করোনা সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নিঃসন্দেহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের আগে থেকেই রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ছিল। এখন এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে। এরই মধ্যে অনেক দেশ ক্রয়াদেশ স্থগিত বা বাতিল করতে শুরু করেছে। বৈদেশিক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় বিমানের আয় কমে যাবে, অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারী এবং কল-কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকেরা চাকরি হারাবেন। এতে বেকারত্ব বাড়বে। নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনমানের আরও অবনতি ঘটবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আহরণও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কমে যাবে। সার্বিকভাবে এসব বিষয় দেশের অর্থনীতিতে বড় সংকট তৈরি করবে। তবে এর পরিমাণ কত হবে সেটা বলা মুশকিল। করোনা পরিস্থিতিতে এডিবি একটা ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদের প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক এক বা দুই শতাংশ কমে যাবে। কিন্তু আমার মনে হয় ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি  হবে। ’

‘কঠিন’ এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার যে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রনোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তা যদিও প্রয়োজনের তুলনায় কম তবে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলার জন্য ছোট-বড় সব প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী যেসব প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন এটি বাস্তবসম্মত। তবে এটি বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। কারণ এই প্যাকেজের বেশিরভাগই হচ্ছে ঋণ। ব্যাংকগুলো ৯ শতাংশ সুদ হারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেবে। প্রণোদনায় শুধু এসএমই খাতে সরকার ৫ শতাংশ দেবে আর বাকি ৪ শতাংশ এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিতে হবে। অন্যান্য খাতের যে সকল প্রতিষ্ঠান ৯ শতাংশ হারে ঋণ নেবে তারা সাড়ে ৪ শতাংশ দেবে সরকার বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ দেবে। এখন ব্যাংক কাদের ঋণ দেবে, এটা দেখার বিষয়। যাদের ঋণ দেবে তারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কি না?’

ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা আছে কিনা সেটা দেখার বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকের আমানত কমে যাবে। ফলে ব্যাংকগুলতে তারল্য সংকটসহ ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমবে। এ অবস্থায় ঋণ বিতরণ কীভাবে করবে। তহবিলের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে কোনো ধরনের নিয়মনীতি কী করা হচ্ছে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ’

এটি ভালোভাবে বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট তালিকা, সঠিক নীতি ও তদারকি ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘করোনার প্রভাবটা আমরা আসু, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ এই চার পর্যায়ে প্রভাব ফেলছে আমাদের অর্থনীতিতে। তবে কি পরিমান প্রভাব ফেলবে তা নির্ধারণ করা কঠিন। আইএলও, এডিবি কিছু হিসাব দিয়েছে, যেটা প্রারম্ভিক প্রাক্কলন করেছে সেটা এই পরিস্থিতির জন্য যুক্তিযুক্ত না। আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে আমরা কতোটা করোনা হ্যান্ডেল করতে পারি। এই করোনা হ্যান্ডেলের দুর্বলতা আমাদের অর্থনীতির ক্ষতির গভীরতা বাড়াবে। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের চারটি ধাপের মধ্যে আসুর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেশি। সমস্ত কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়াতে মানুষের জীবন জীবিকা এক রকমের বন্ধ। এটা মানুষের আয় ও খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে। এটা শুধু নিম্ন আয়ের মানুষ না, সীমিত, মধ্য ও সকল পর্যায়ে ঝুঁকি বাড়ছে। স্বল্প মেয়াদে আগামীতে যদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমে আসে, তখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলে তা কোন পর্যায়ে কতটুকু কার্যক্রম চালু রাখা সুযোগ হবে তা ভাবতে হবে। এখনতো বাংলাদেশে ঝুঁকি বাড়ছে। কতোদিন এই পরিস্থতি থাকবে ও সামগ্রিকভাবে উৎপাদন বিনিয়োগ রপ্তানি এবং দেশের ভিতরে খাদ্যপণ্য উৎপাদন আমদানির ওপর একটা প্রভাব থাকবে। এখন যেমন আছে আগামীতেও থাকবে। ’

‘মধ্যমেয়াদে যদি এ পরিস্থিতি কমে আসে, তখন অর্থনীতি আগের অবস্থায় যাওয়ার ক্ষেত্রে যে উদ্যোগগুলো নেয়া হবে সেটার জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক চাহিদা থাকতে হবে। মানুষের পণ্য ক্রয়ের সক্ষমতা থাকতে হবে। ব্যবসায় শুধু বিনিয়োগ ও উৎপাদন করে বসে থাকলে হবে না। মধ্যম মেয়াদে এই চ্যালেঞ্জগুলো থাকবে। দীর্ঘ মেয়াদে হলো দারিদ্রসীমার নিচে যদি একটা অংশ পড়ে যায়। তাদের কিভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় আগের অবস্থানে উঠিয়ে আনা হবে, সেখানে প্রশ্ন থেকে যায়। ’
 
তিনি বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, সেখানে আসু, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ সবগুলোর কথা বলেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে আসুকরণীয়গুলো। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। এজন্য এক্ষেত্রে করণীয়গুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো হবে, এই কর্মসূচির বাইরে যারা ছিল, যেমন- কামার কুমার নাপিত, মাটিকাটার লোক, দৈনিক দিনমজুর তাদের নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে দ্রুত এদের তালিকা তৈরি করতে হবে। ’

সিপিডির এই সিনিয়র গবেষক বলেন, ‘আমাদের সমাজে নিম্ন শ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা হাত পাততে পারে না বা বাইরে দাঁড়াতে পারে না, তাদের আয় ৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। এদের আলাদা ক্যাটাগরি করে দ্রুত সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য, সেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, উবার, বাস চালক যাদের এই মুহূর্তে চাকরি নেই, তাদের জন্য ঘোষিত ওয়ার্কিং ক্যাপিটালে একটা অংশ শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ব্যয় করতে হবে। এটার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ৪ শতাংশ সুদ না নিয়ে গার্মেন্টসের মতো ২ শতাংশ সুদের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ মুহূর্তে ব্যবসা করতে চাইবে না ও ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে চাইবে না। এজন্য আসু করণীয় বিষয়ে বেশি নজর দিতে হবে। ভবিষ্যতের স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এ ঘোষণাটা ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করবে। তাই এইমুহূর্তে আসুকরণীয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ’

এদিকে রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে গার্মেন্টসহ দেশের অন্তত ১৩ থেকে ১৪টি খাতে। বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কার পাশাপাশি কিছু পণ্যের সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিতে পারে। করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতে। এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, রপ্তানি বাজার ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। কারণ, রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলো করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রও বিপদে আছে। বিপদ কেউ আঁচ করতে পারছে না। তবে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত তাদের বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে।

ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাস বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভাইরাসের কারণে রপ্তানি খাত সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়েছে। তার মধ্যেও আবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তৈরি পোশাক খাত। কারণ এই খাতে আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। এসব এলাকার অনেক দেশই ক্রয়াদেশ বাতিল করছে, স্থগিত করছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজকে স্বাগত জানাই। আমরা প্রথম থেকে বলে আসছিলাম এ বছরটা আমাদের একটু কঠিন যাবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই প্যাকেজ সহযোগী ভূমিকা রাখবে। সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে যাতে কেউ চাকরি না হারায়। এই প্যাকেজ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কৃষি ও সেবাভিত্তিক খাতের উদ্যোক্তারা সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন। করোনা ভাইরাসের কারণে কোনো ব্যক্তি চাকরি হারালে তার ৬ মাসের জন্য বেতন-ভাতার ব্যয় নির্বাহ করবে সরকার। আপাতত প্রধান লক্ষ্য হলো, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক করা এবং আমাদের কোনো মানুষ যেন মারা না যায় সেজন্য আমাদের সকলকে ঘরে থাকতে হবে। তবে আমাদের বিশ্বাস, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করে এই কঠিন সময় উত্তরণে সক্ষম হব। ’

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘করোনার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তৈরি পোশাক খাত। ইতোমধ্যে এ শিল্পের রপ্তানি অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করা শুরু করেছেন ক্রেতারা। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকা। দুঃখজনক, সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত হয়েছে এসব জায়গায়। এ কারণে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি কমে যাবে, এটাই সত্য। আমরা স্বাগত জানাই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজ সহযোগী ভূমিকা রাখবে। সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে যাতে কেউ চাকরি না হারায়। এই প্যাকেজ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন। ’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মো. আসিফ ইব্রাহিমও বলছেন, ‘অর্থনীতির সব খাতই করোনাভাইরাসের কারণে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। দেশের শিল্প-বাণিজ্য থেকে শুরু করে আমদানি-রপ্তানি, শেয়ারবাজার- সবই বিপর্যয়ের মুখে। প্রতিদিনই ব্যবসা-বাণিজ্যে ধ্বস নামছে। সব মিলিয়ে আমরা আতঙ্কিত। আর প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজকে আমরা স্বাগত জানাই। ’

এদিকে রোববার গণভবনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিভিন্ন খাতে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব এবং উত্তরণের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়া ৯টি খাতের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়া খাতগুলো হচ্ছে: আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের পরিমাণ অর্থবছর শেষে হ্রাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান মেগা প্রকল্পসমূহে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা। সার্ভিস সেক্টর বিশেষত হোটেল-রেস্টুরেন্ট, পরিবহন এবং অ্যাভিয়েশন সেক্টরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। প্রবাসী আয়ে বিরুপ প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি হতে পারে। স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা হতে পারে। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হবে। এর ফলে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২০
জিসিজি/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।