ঢাকা: এবার বন্যার প্রকোপে চলতি মাসে পুরো দক্ষিণ এশিয়াতে এক মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যাকবলিত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি শ্রমিকদের রক্ষার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), অক্সফাম বাংলাদেশ এবং গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি যৌথভাবে ‘বন্যা বিমা’ নামে একটি নতুন স্কিম চালু করেছে।
সোমবার (৩ আগস্ট) এই তিন সংস্থার যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জুলাইয়ের শুরু থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত বিদ্যমান বর্ষা মৌসুমে বন্যায় সৃষ্ট দুর্যোগে শ্রমিকরা মজুরি হারিয়েছে। তাই এই স্কিমের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলা সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন ও চিলমারী উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত দুই হাজার অনিয়মিত শ্রমিককে এবছর আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হবে। বন্যায় মজুরি হারানোর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রত্যেক শ্রমিক পরিবার দুই হাজার ৭শ’ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহযোগিতা পাবেন।
বাংলাদেশে ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর রিচার্ড রেগান বাংলানিউজকে বলেন, বার্ষিক বন্যায় যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয় তার বিপরীতে বাংলাদেশের মানুষের কোনো সুরক্ষা নেই। তাই ডব্লিউএফপি একটি বন্যা বিমা স্কিম চালু করছে যা এ ধরনের প্রথম উদ্যোগ।
কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা) অর্থায়নে পরিচালিত এই ঝুঁকি স্থানান্তর সমাধানমূলক প্রকল্পের সার্বিক লক্ষ্য হল পরিবার ও কমিউনিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাতে তারা জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলা করতে পারেন এবং দুর্যোগকালীন সময়ে ঝুঁকি কমিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারে।
কোইকা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইয়ং-আ দোহ বাংলানিউজকে বলেন, উঁচু এলাকা থেকে অতিমাত্রায় পানির প্রবাহ এরই মধ্যে শুধুমাত্র প্রকল্প এলাকাগুলোকেই নয় বরং দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোকে প্লাবিত করেছে। অরক্ষিত জনগণ, বিশেষ করে অনিয়মিত ও বর্গাদার চাষিরা মজুরি ও কৃষিজাত ফসল হারিয়ে সব থেকে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। কোইকা বিশ্বাস করে যে, এই নব্য প্রবর্তিত পদ্ধতিসমূহ- যেমন সূচকভিত্তিক বন্যা বিমা, পূর্বাভাস ভিত্তিক অর্থায়ন এবং মৌসুমি জীবিকা নির্বাহ ইত্যাদি পদ্ধতি যা এই প্রকল্পে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হবে। মানুষের ভোগান্তি কমাতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কাউকে বাদ না দিয়ে মানুষকেন্দ্রিক শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে কোইকা বাংলাদেশের মানুষের পাশে আছে।
অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর দীপঙ্কর দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, যদিও জলবায়ুর পরিবর্তন আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করে, কৃষিখাতের অনিয়মিত শ্রমিকদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষজন এই প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন যা কি-না সামাজিক বৈষম্য আরও প্রকট করে তুলছে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে এদের ভূমিকা সব থেকে নগণ্য। আমরা আশা রাখি, যে আমাদের এই সদ্য চালু করা সূচকভিত্তিক বন্যা বিমা পণ্যের আদলে সরকার একই ধরনের প্রকল্প আরও বিস্তৃত পরিসরে পরিচালনা করবে, যাতে দেশের কৃষিখাতে জড়িত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রকট সংকটের ঝুঁকি ও বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।
এই পণ্যটির উন্নয়নে ১৯ বছরের স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য কাজে লাগানো হয়েছে। একে আরও বৈধতা দিয়েছে পানির উঁচ্চতা ও বৃষ্টিসংক্রান্ত তথ্য। পূর্বনির্ধারিত বন্যা সূচকের ভিত্তিতে এই আর্থিক অনুদান দেওয় হবে, অর্থাৎ মোট ভৌগলিক এলাকার কত শতাংশ প্লাবিত হয়েছে এবং কতদিন ধরে সেখানে বন্যা চলছে। গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বিমাকারক হিসেবে সমস্ত ঝুঁকি বহন করবে।
গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ফারজানা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ডব্লিউএফপি ও অক্সফাম বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আমি উচ্ছ্বসিত কেননা এই পণ্যটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি শ্রমিকরা যেসব সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন সেগুলোর সমাধানে কাজ করবে। এছাড়াও, বিধ্বংসী বন্যার সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) লক্ষ্য অর্জনকে আরও শক্তিশালী করা হবে।
কারিগরি সহায়তাকারী হিসেবে ওয়েদার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সারভিসেস (ডব্লিউআরএমএস), ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট (আইডব্লিউএমআই) এবং সেইভ আর্থ ক্লাইমেট সারভিসেস লিমিটেড ঐতিহাসিক তথ্যাদি সরবরাহ করে সূচকভিত্তিক এই বন্যা বিমা পণ্য উন্নয়নে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০২০
টিআর/এসআরএস