ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর গ্রাহকের আস্থা কমেছে

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৬, ২০২০
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর গ্রাহকের আস্থা কমেছে ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সময়মতো গ্রাহকের অর্থ ফেরত না দেওয়া ও অনিয়মের কারণে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণে ধারবাহিকভাবে গ্রাহকের আস্থা কমছে দেশে কার্যরত নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। তারই অংশ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত তুলে নিচ্ছেন গ্রাহকরা।

গ্রাহকের আস্থা কমে যাওয়ার কারণে ধারাবাহিকভাবে অর্থ উত্তোলনের কারণে ২০১৯ সালে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত বেশি তোলা হয়েছে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ বা ২ হাজার ৪শ’ ২৮ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের হিসাবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ৪৫ হাজার ৫শ’ ৪৯ কোটি টাকা তুলেছেন গ্রাহকরা। আগের বছরের একই সময়ে গ্রাহকের টাকা তোলার পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ১শ’ ২১ কোটি টাকা।

যদিও কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকিং খাতেও আমানত প্রবৃদ্ধি কমেছে। তারপরও করোনাভাইরাসের কারণে যখন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্থবির তখনও আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ শতাংশের কাছাকাছি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে একের পর এক কেলেঙ্কারির কারণে গ্রাহকের আস্থা হারিয়ে গেছে। যে কারণে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত তোলার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। যার ফলে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান খুবই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জনসাধারণের আস্থাহীনতার পাশাপাশি অনেক ব্যাংকও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তহবিল তুলে নিয়েছে। নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তহবিল তুলে নেওয়া বন্ধ করতে উৎসাহ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশন।

নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেনে তোলার জন্য চলতি বছরের জুনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নগদ জমা সংরক্ষণ হার অনুপাত ভিত্তিতে ১ শতাংশ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তার কারণে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো  ৩৫০ কোটি বেশী ব্যবহার করতে পারছে।

অপর দিকে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো করোনাভাইরাস মহামারিতে আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও দিয়েছে।

সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশ নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাক অর্থায়ন প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশে কার্যরত ৩৪টি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রিন জোনে রয়েছে। বাকি ৩০ প্রতিষ্ঠানই ইয়োলো এবং রেড জোনে প্রবেশ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে বলা হয়েছে, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানতের ৯৬ দশমিক ৪৫ শতাংশই স্থায়ী আমানত। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বা ২ হাজার ৩৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ২২ কোটি ৫৮ লাখ টাকায়। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪৪ হাজার ৬০ কোটি ২ লাখ টাকা।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ আমানত ৪২৮ কোটি ৯ লাখ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮১ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭শ ৯ কোটি ৫২লাখ টাকা।

বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অর্থ ফেরত দিতে না পারার কারণে নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আমানতকারীদের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, জনগণের টাকায় ব্যবসা করার জন্য সবসময় আমানতকারীর আস্থা অর্জন করতে না পারলে তা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। শুধু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যবসা করার জন্য সবধরনের প্রতিষ্ঠানকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২০
এসই/এমজেএফ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।