ঢাকা: করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে মানুষের জীবন যাত্রার পাশাপাশি লেনদেনের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। পণ্য অথবা সেবা কিনতে নির্ভরতা বাড়ছে ই-কর্মাস সাইটগুলোতে।
লেনদন করতে ব্যাংকে যেতে চান না ৯৬ শতাংশ মানুষ। তবে মানুষের এমন চাহিদা পূরণে প্রস্তুতি নেই অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।
হিসাব বলছে, ৬৬ শতাংশ মানুষ এখন অনলাইনে কেনাকাটায় আগ্রহী। সহজ এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা আছে এমন সব ব্র্যান্ডের প্রতি ঝুঁকছে ৮১ শতাংশ ক্রেতা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্জেন্ট বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ ও ডেলোয়েট’র গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ডেলয়েট ইন্ডিয়ার আর্থিক পরিষেবা শিল্প নেতা সঞ্জয় দত্ত বলেন, ভোক্তাদের আচরণে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। সশরীরে শপিংয়ে না গিয়ে অনলাইনে কেনাকাটায় উল্লেখ করার মতো পরিবর্তন এসেছে।
শুধু কেনাকাটা নয়, মহামারির এই সময়ে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনও বেড়েছে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে। জরিপ বলছে, টাকা জমা কিংবা তোলাসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সেবা ডিজিটাল মাধ্যমে পেতে চান ৯৬ শতাংশ ব্যাংক গ্রাহক। ফলে ব্যাংক এবং গ্রাহক উভয়পক্ষেরই সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান বিকাশের চেয়ারম্যান শ্যামেরান আবেদ বলেন, কোনো ধরনের পাইলটিং, ক্যাম্পেইন ও বহন করা ছাড়াই জুলাই মাসে মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানের সাত লাখ গ্রাহক বিকাশের মাধ্যমে কিস্তি পরিশোধ করেছে। এখন ডিজিটাল লেনদেন বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করছে মানুষ। আমি মনে করি এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এবিবি চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার বলেন, গত দুই মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলো গ্রাহককে ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহ দেওয়ার পাশপাশি শারীরিকভাবে ব্যাংকে যেতে নিরুৎসাহী করেছে। এটা খুবই ভালো সংকেত। তবে ঝুঁকি হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা ও জালিয়াতি রোধে আমাদের অনেক উদ্যোগ নিতে হয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কেটে গেলে এই চ্যালেঞ্জ আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারলে ছিটকে পড়তে পারে অনেক প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে পুঁজিবাজারেও ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় নিয়ে আসার প্রস্তাব উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আফতাবুল ইসলাম বলেন, কোভিড পরবর্তী পরিবর্তনগুলি বাস্তব এবং আর্থিক পরিষেবাকে ডিজিটালাইজেশনের দিকে অগ্রসর হতে হবে প্রক্রিয়াটিতে কোন বিলম্ব না করেই। কারণ, দিন যাবে আর গ্রাহকের লেনদেন সংক্রান্ত আচরণ পরিবর্তন হবে।
মাস্টারকার্ড ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, কোভিড-১৯ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুতেই প্রভাব ফেলেছে। আমরা দেখেছি এই করণাকালে কন্টাক্টলেস লেনদেনের প্রতি সাধারণ মানুষ ঝুঁকে পড়েছে। বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম না। আমরা সবাই জানি কোভিড-১৯ এর আগেই বাংলাদেশে অনলাইন লেনদেন-ডিজিটাল লেনদেন ছিল ১০-১২ শতাংশ, যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কিন্তু এই করণাকালে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। কিছু কিছু ই-কমার্স সাইটে প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত লেনদেন বেড়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের ডিজিটাল-অনলাইন লেনদেনও প্রায় ৩৫ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে, যা আগে ১০ শতাংশ ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২০
এসই/এমজেএফ