ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নান্দনিক এক সড়কেই ঘুরে গেছে হাজারো মানুষের ভাগ্যের চাকা

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২০
নান্দনিক এক সড়কেই ঘুরে গেছে হাজারো মানুষের ভাগ্যের চাকা হাওরের সড়কে বিক্রেতাদের ভিড়। ছবি: বাংলানিউজ

ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) ঘুরে: কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা সদরের মোহরকোণা গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম। তিনি বছরের ছয় মাস ধানের জমিতে কাজ করতেন।

বাকি ছয় মাস হাতে কোনো কাজ থাকতো না। সুতরাং এসময় অলস বসে থাকা ছাড়া ছিল না কোনো উপায়। সেই আমিনুল এখন ইটনা বেড়িবাঁধে ফুচকা বিক্রি করেন। দৈনিক আয় হয় ১৫শ থেকে দুই হাজার টাকা। অভাবের সময় পেরিয়ে এখন খুব সুখেই আছেন তিনি।

আমিনুল ইসলামের ফুচকার দোকান থেকে হাত দশেক পরে মোটরসাইকেল পার্কিং দিয়েছেন একই গ্রামের বাসিন্দা আবু ইসহাক। প্রতি মোটরসাইকেলের জন্য পার্কিং খরচ ৫০ টাকা। শুক্রবার ও শনিবার গড়ে চার থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করা ইসহাক মাস খানেক আগেও ছিলেন বেকার। ফলে এখন যেন তিনি আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন।

হাওরের সড়কে ফুচকার দোকান।  ছবি: বাংলানিউজনিকলী বেড়িবাঁধের ভাই ভাই হোটেল। সাদা ভাত ও হাওরের মাছের জন্য বিখ্যাত। শুক্রবার ও শনিবার গড়ে ৫ হাজার টাকা আয় হয়। অন্যান্য দিন আয় হয় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা।

এই হোটেলের মালিক রতন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, হাওরবাসী রাষ্ট্রপতির কাছে (রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ) কৃতজ্ঞ। ওনার জন্ম এখানে না হলে আমাদের কষ্ট কখনই শেষ হতো না। হাওরের সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ করায় মানুষ আয় করতে পারছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিকলী বেড়িবাঁধে হাজারো মানুষ নানা পেশায় জড়িত। দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকদের ঢল নামে সেখানে। সবাই ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক দেখতে আসছেন। একটিমাত্র রাস্তা কীভাবে একটি জনপদের অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে দিচ্ছে তা বিষ্ময়কর। দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি, নয়নাভিরাম সড়ক ও হাওরের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকদের ঢল নামছে বেড়িবাঁধে।

ইটনা থেকে মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের ওই বেড়িবাঁধে যেতে হয় পানি পথ পাড়ি দিয়ে। ফলে মাঝিরা খুঁজে পেয়েছেন আয়ের উৎস।  
নিকলীর মাঝি আনিসুর রহমান। শ্যালো ইঞ্জিনের একটি ছোট ট্রলার আছে তার। অন্যান্য সময় এই ট্রলার দিয়ে মাছ ধরতেন। কিন্তু এখন নিকলী থেকে মিঠামইনে মানুষ পারাপার করে দৈনিক ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা আয় করেন।

নিকলীর পাশাপাশি মিঠামইন উপজেলার মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে এই বেড়িবাঁধ। বছরে ছয় মাস যে মিঠামইনবাসী অলস বসে থাকতো এখন তারা পর্যটকদের সেবায় মহা ব্যস্ত।

হাওরের সড়ক।  ছবি: বাংলানিউজশুনলে সবাই অবাক হবেন। মাত্র ১০ মিনিটে অনেকে ৫০০ টাকা আয় করছেন অটোরিকশা চালিয়ে। মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম সড়কের বড় সেতুর কাছে যেতে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। অথচ এই সড়কে একটি অটোরিকশার ভাড়া ৫০০ টাকা। মিঠামইনে অনেক হোটেল গড়ে উঠেছে। শুক্রবার ও শনিবার মিঠামইনে যেন মেলা বসে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে নান্দনিক এ সড়ক দেখতে হাজারো মানুষ ছুটে আসেন।

ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন মোহাম্মদ আহনাফ হোসেন তন্ময়। পরিবারের সদস্যসহ প্রায় ১০ জনের একটি গ্রুপ নিয়ে ভ্রমণে এসেছেন।  

মোহাম্মদ আহনাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ইচ্ছা থাকলে উন্নয়ন সম্ভব মহামান্য রাষ্ট্রপতি তা দেখিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশে এত চমৎকার সড়ক সত্যিই বিস্ময়কর। হাওরের সতেজ মাছ খাওয়াসহ ঘুরে বেড়ানোর জন্য মিঠামইন এখন অন্যতম পর্যটক স্থান বলে আমি মনে করি।

মিঠামইনে কটু মিয়ার হোটেলে শুক্রবার ও শনিবার গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মাছ-ভাত বিক্রি হয়। অধিকাংশ মানুষকে এই হোটেলে খাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

হাওরে নোঙর করা নৌকা ।  ছবি: বাংলানিউজনিকলী-ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণের ফলে হাজারো মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। তিনটি উপজেলার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হয়েছেন। ৮৭৪ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কে বহু মানুষ খুঁজে পেয়ছেন কর্মসংস্থান।

২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে সড়কটি নির্মিত হয়। কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর এলাকায়  ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে এসব এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। ২৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নান্দনিক এ সড়ক দেখতে লাখো মানুষ ভিড় করেন। ফলে এলাকায় ক্ষুদ্র দোকানি, রেস্তোরাঁ মালিক, নৌকার মাঝি, নসিমন-করিমন-লেগুনা-অটোরিকশার ড্রাইভার মিলিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য মানুষের।

মিঠামইন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা প্রভাংশু সোম মহান বাংলানিউজকে বলেন, হাওরের মধ্য দিয়ে নির্মিত হয়েছে অসাধারণ সড়ক। সড়কের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এরমধ্যে হঠাৎ করে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে এখানের অনেক মানুষ দিনে ৫০০ টাকা আয় করতে পারতো না। অথচ এখন একই ব্যক্তি দিনে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা আয় করছে। মিঠামইনে নতুন করে ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। একইভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে নিকলী-অষ্টগ্রাম-ইটনায়ও। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এত দ্রুত বদলে যাবে আমরা কল্পনাও করিনি। সবই সম্ভব হয়েছে আমাদের রাষ্ট্রপতির (মো. আবদুল হামিদ) কল্যাণে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২০
এমআইএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।