ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বেসিক ব্যাংকের সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমর্থন

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২০
বেসিক ব্যাংকের সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমর্থন

ঢাকা: দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বেসিক ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ঋণ পুনঃতফসিল না করার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

যৌক্তিকভাবে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ পুনঃতফসিলের প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে।

বিষয়টি অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।  

ঋণ খেলাপিদের পুনঃতফসিল সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে মতামত চাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই চিঠি পাঠিয়েছে।

বেসিক ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাল কাগজপত্র, ভুয়া জামানত ও হালনাগাদ সিআইবি রিপোর্ট যাচাই না করে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

ঋণ বিতরণে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও ঋণ গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।  

দেশের ব্যাংকিংখাত থেকে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দিয়ে ২০১৯ সালের ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।  

ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের অর্থনীতির জন্য তা একটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাপক সমালোচনার মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই প্রজ্ঞাপন জারির পর বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য পরিচালনা পর্ষদে উত্থাপন করেছিল। কিন্তু পর্ষদ তা বাতিল করে করে ওইসব ঋণ পুনঃতফসিল না করার সিদ্ধান্ত নেয়।  

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ঋণ পুনঃতফসিল করার প্রস্তাব অনুমোদন এবং প্রত্যাখান করার কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ধারা ১৫ (বি) এর উপ-ধারা (১) এর অধীনে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদকে এ ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার জন্য দায়বদ্ধ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক মতামতে আরও উল্লেখ করেছে, জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ঋণ পুনঃতফসিলের অনুমোদন না দেওয়া পরিচালনা পর্ষদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার একটি অংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

তিনি আরও বলেন, এসব ঋণ ইতিমধ্যে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, পুনঃতফসিল করা হলে তারা নতুন করে আরও ঋণ পাবেন। ফলে তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় কঠিন হয়ে পড়বে।

যারা অবৈধ উপায়ে ঋণ নিয়েছেন তারা যেন আর কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ না পায় সেই উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গর্ভনর আরও বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনও সরকারি হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। হস্তক্ষেপের কারণে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জুন শেষে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬শ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২০
এসই/এজে
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।