ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডিজিটাল লেনদেনে শাপে বর করোনার হানা

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২০
ডিজিটাল লেনদেনে শাপে বর করোনার হানা প্রতীকী ছবি

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ ঘন ঘন ব্যাংকে, এটিএম বুথে না গিয়ে ঘরে বা অফিসে বসে লেনদেন করায় সম্প্রতি ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের মে ও জুন মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস), ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) এবং ই-কমার্স ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অনেকেই মনে করছেন, করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে এখনও বেশ ভালোভাবেই প্রভাব বিস্তার করে আছে এবং তা আগামী কয়েক মাস অব্যাহত থাকতে পারে। তারা বলেছেন, শারীরিক দূরত্ব মেনে সীমিত চলাফেরার কারণে গত কয়েক মাসে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের গতি বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মে-জুন মাসে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সংখ্যা এবং পরিমাণ বেড়েছে। জুন শেষে ইন্টারনেট ব্যাংকিং গ্রাহকের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৪০ হাজারে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার।

একই সময়ে ই-কর্মাস গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমানও রেকর্ড সংখ্যক বৃদ্ধি পেয়েছে। মে এবং জুন মাসে ই-কমার্স গ্রাহক রেকর্ড সংখ্যক বেড়েছে। জুনে ই-কমার্স চ্যানেলের মাধ্যমে সর্বমোট ১ কোটি ৫৪ লাখ গ্রাহক লেনদেন করেছেন এবং লেনদেন হয়েছে ৪৯১ কোটি টাকা, যা ২০১৯ সালের একই মাসের তুলনায় প্রায় ১৯০ শতাংশ বেশি।

জুন মাসে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারও (ইএফটি) আগের চেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৩৮০৮ কোটি টাকা। আগের বছর একই সময়ে লেনদেন হয়েছিল ১২৬৭০ কোটি টাকা।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মে মাসে লেনদেনের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৪৭৩৭০ কোটি টাকা এবং জুন মাসে লেনদেন হয়েছে ৪৪৮৩০ কোটি টাকা।

২০১৯ সালের মে মাসে লেনদেনের পরিমান ছিল ৩১৭০৮ কোটি টাকা এবং জুন মাসে লেনদেন হয়েছিল ৪২২৩৬ কোটি টাকা।

মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস থেকে নেওয়া সেবাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল টকটাইম ক্রয়, বিভিন্ন সেবার ইউলিটি বিল প্রদান ও কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান।

জুন মাসে মানুষ ৬২৬ কোটি টাকার টকটাইম ক্রয় করেছেন ভোক্তা। আগের বছরের একই সময়ে ভোক্তারা ৪৫৪ কোটি টাকার টকটাইম ক্রয় করেছিলেন।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইউলিটি বিল পরিশোধ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দাঁড়িয়েছে ৯৯২ কোটি টাকায়।

অন্যদিকে, মানুষ বাইরে বের না হওয়ায় এটিএম বুথ থেকে নগদ টাকা উত্তোলন এবং পয়েন্ট অব সেল মেশিনে লেনদেনের পরিমান কমে গেছে।

ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের দুটি মূল মাধ্যম অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) এবং পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিনে লেনদেন বাড়লেও করোনা ভাইরাস মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে মে মাস থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও ই-কমার্সের প্রতি গ্রাহক বিশেষভাবে উৎসাহী হয়েছে। তারা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এপ্রিল মাসে মানুষের চলাচল কমে যাওয়ায় ব্যাংকে গিয়ে লেনদেন খুবই কম হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, এপ্রিল মাসে আমরা ডিজিটাল পেমেন্ট নিষ্পত্তি ব্যবস্থা রিয়েল টাইম গ্রোস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) সেবা বন্ধ রেখেছিলাম।

এ বিষয়ে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনা ভাইরাসের বড় প্রভাব পড়েছে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে। প্রযুক্তির সহায়তায় লেনদেন অনেক বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রাহককে বিকল্প চ্যানেলে লেনদেনে আগ্রহী করে তুলতে অনলাইন শপগুলোর সঙ্গে আমরা অংশীদারিত্ব চুক্তি করছি।

দেশের শীর্ষ মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি অনেককেই ডিজিটাল চ্যানেল ব্যবহার করে লেনদেনে বাধ্য করেছে।

তিনি আরও বলেন, এমএফএস লেনদেন বাড়ার পেছনে মূল কারণ ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। আগামী দিনগুলোতে এই প্রবণতা আরও বাড়বে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২০
এসই/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।