ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পোশাক খাতের রপ্তানিতে ইতিবাচক হাওয়া

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২০
পোশাক খাতের রপ্তানিতে ইতিবাচক হাওয়া

ঢাকা: বিশ্বব্যাপী করোনা সংকটে বাণিজ্যে ধীরগতি দেখা দিলেও রপ্তানি আয়ে চমক দেখাচ্ছে বাংলাদেশ। গত জুলাইয়ের পর আগস্টেও বেড়েছে রপ্তানি আয়।

দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর ভর করেই রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি।  

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস (জুলাই- আগস্ট) পণ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে ১.০৮ শতাংশ। একই সঙ্গে হালকা প্রকৌশল পণ্য, কৃষিপণ্য, ওষুধ, শুকনো খাবারসহ বেশিরভাগ পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে নেতিবাচক ধারায় রয়েছে চামড়া ও প্লাস্টিক রপ্তানি।

গত কয়েক মাস ধরে তৈরি পোশাক শিল্পে ধারাবাহিকভাবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির পর আগস্টে এসে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে নিট পোশাকে। ওভেন পোশাকে প্রবৃদ্ধি কিছু কম হলেও নিট পোশাকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি পোশাকশিল্পের জন্য সুখবর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসে (আগস্ট) ২৯৬ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই পরিমাণ মাসভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ কম হলেও গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ (৪.৩২) বেশি। আগস্টে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্ট মিলে মোট ৬৮৭ কোটি ৮১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ শতাংশ বেশি এবং গেল অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের আয়ের চেয়েও ২.১৭ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে (আগস্ট) তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে প্রায় ২৪৭ কোটি ডলার। জুলাই মাসে এর পরিমাণ ছিল ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে এই খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ৭৭ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অবশ্য, জুলাই ও আগস্ট, এই দুই মাস মিলে তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি।

ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

এ সময়ে, এ খাতের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫৬১ কোটি ১৬ লাখ ডলারের বিপরীতে হয়েছে ৫৭১ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর মধ্যে নিটওয়্যার থেকে এসেছে ৩১১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ আর গেল অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। একক মাস হিসাবে গত জুলাইয়েও নিটওয়্যারের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয় ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর মাস ধরে নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ওই মাসে ২৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি আয় এসেছেল নিট পোশাক রপ্তানি থেকে।  

তবে জুলাই-আগস্ট মিলেও ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির চক্কর থেকে বের হতে পারেনি ওভেন পোশাকের রপ্তানি আয়। এই দুই মাসে ওভেন থেকে এসেছে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর গেল বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ০৬ শতাংশ কম।  

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত হলো আরএমজি খাত। এই খাতের ওপর নির্ভর করেই রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি এসেছে। যদিও আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার মধ্যে কল কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার সময়োচিত ও সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে। এছাড়া নীতিগত সহায়তা, প্রণোদনা প্যাকেজসহ নানা উদ্যোগেসহ আমাদের কমার্শিয়াল কাউন্সিরদের কঠোর পরিশ্রম ও দূতাবাসগুলোর সহযোগিতায়। ”

তিনি বলেন, “রপ্তানি আয়ে বৈচিত্র্য আনতে আমরা বেশকিছু কৌশল গ্রহণ করেছি। তৈরি পোশাকের অর্ডার বাতিলের পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় আলোচনা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে- তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো এবং নতুন বাজার অনুসন্ধান। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশীয় পণ্যের মানোন্নয়নে প্রকল্পও গ্রহণ করা হচ্ছে। ”

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান জানান, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের পর দ্বিতীয় মাস আগস্টেও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি উৎপাদন শিল্পের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের আস্থা বাড়াতে সহায়তা করবে।  

তিনি বলেন, “করোনা সংকট শুরুর পর পরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানামুখী উদ্যোগের কারণে রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ”

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, করোনা সংকটের মধ্যেও গত জুলাইয়ে ২১ পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আগস্টেও ২০ ধরনের পণ্যে রপ্তানি আয় বেড়েছে। রপ্তানি আয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ (৪৯ দশমিক ৬৪) ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে সোনালী আঁশ পাট। বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে কৃষি পণ্যের রপ্তানি আয়। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৩২ দশিক ৬৪ শতাংশ বেশি। এই দুই মাসে হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হযেছে ৬১ শতাংশ (৬০ দশমিক ৯৯)। মসলা রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫২.৭৪ শতাংশ। এ সময়ে প্রায় শতভাগ (৯২ দশমিক ০৬) প্রবৃদ্ধি হয়েছে শুকনা খাবারের রপ্তানি আয়ে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চা রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১৩ শতাংশ। নতুন খাত হিসেবে ৩৩.৩৩ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে প্রসাধনী পণ্যের রপ্তানি আয়। আর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে ওষুধ রপ্তানি। প্রায় ১৯ শতাংশ (১৮ দশমিক ৯৪) প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এছাড়া জুট ইয়ার্ন রপ্তানিতে ৬৭ শতাংশ, কার্পেট ৬৩ শতাংশ, হ্যান্ডিক্রাফটস ৬০ শতাংশ, প্রকৌশল যন্ত্রাংশ ৫৬ শতাংশ, হোম টেক্সটাইল ৪৪ শতাংশ, ইলেকট্রিক পণ্য ৩৪ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে।

এদিকে গত দুই মাস মিলে (জুলাই ও আগস্ট) আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে দেশের ২য় বৃহত্তম রপ্তানিমুখী খাত চামড়া শিল্প। তবে, বড় ধরনের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতেই (১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ) আটকা পড়ে আছে এই খাত। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে প্লাস্টিক খাত। গেল দুই মাসে প্লাস্টিক খাতের আয় ১ কোটি ৭১ লাখ ডলার। ২ কোটি ৪ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ১৬ দশমিক ১ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২০
জিসিজি/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।