নাটোর: চলতি অর্থবছরে নাটোরের দু’টি চিনিকলে উৎপাদিত চিটাগুড় বিক্রি করে ৮ কোটি টাকারও বেশি আয় করেছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। এর মধ্যে নাটোর চিনিকলের আয় ৫ কোটি টাকা ও লালপুরের নর্থবেঙ্গল চিনিকলের আয় ৩ কোটি টাকা।
অথচ এর আগে ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের কারণে সঠিক দামে সঠিক সময়ে মিলের উৎপাদিত চিটাগুড় বিক্রি করা যেতো না। ফলে সম্ভাবনাময় এক খাতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ঘাটতি হতো।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নাটোর চিনিকলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. রফিকুল ইসলাম ও নর্থবেঙ্গল চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হুমায়ুন কবীর বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
তাদের দাবি, সিন্ডিকেট ভাঙার কারণেই এবার বেশি দামে চিটাগুড় বিক্রি করা সম্ভব হয়েছে। ফলে গত অর্থবছরের তুলনায় এবার অন্তত ৮ কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে। আরও বিপুল পরিমাণ চিটাগুড় মজুত রয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে বিক্রি করা হবে। এ ব্যাপারে করপোরেশনের চেয়ারম্যান সনত কুমার সাহা প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন।
জানা যায়, চিনিকলে উৎপাদিত এসব চিটাগুড় সাধারণত গো-খাদ্য, ডিসটিলারি, মাছের খাদ্য ও স্টিল মিলে ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি স্পিরিট তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এর বাইরে বর্তমানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব চিটাগুড় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান হলেও একটি সিন্ডিকেট চক্রের কারণে মিল কর্তৃপক্ষ এর সঠিক দাম পায় না।
অথচ এ চিটাগুড় বিক্রি করেই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করা সম্ভব মিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব ও সিন্ডিকেট চক্রের প্রভাবে অনেক সময় চিটাগুড় নিয়ে মিল কর্তৃপক্ষকে বিপাকে পড়তে হয়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই সিন্ডিকেট চক্র দীর্ঘদিন ধরে মুনাফা লুটে নিচ্ছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষ।
লালপুরের নর্থবেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হুমায়ুন কবীর বাংলানিউজকে জানান, চলতি অর্থবছরে চিটাগুড় উৎপাদিত হয়েছে ৯ হাজার ১৭০ টন। বেশ কয়েক ধাপে টেন্ডারের মাধ্যমে এ গুড় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে আরও মজুত রয়েছে ৪ হাজার ৭৫০ টন। তার দাবি, গত অর্থবছরে এ চিটাগুড় বিক্রি হয়েছে ১১ হাজার ৭১১ টন। সে তুলনায় মূল্য পাওয়া যায়নি। তবে করপোরেশনের বর্তমান চেয়ারম্যান সনত কুমার সাহা দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছেন। ফলে গত বছরের তুলনায় চিটাগুড়ের দাম অনেকাংশে বেড়েছে।
তিনি জানান, চিটাগুড় উৎপাদনের একমাত্র জায়গা হচ্ছে চিনিকল। এক্ষেত্রে কোনো বিকল্প উৎপাদক না থাকায় বাজারের চেয়ে কম দামে গুড় বিক্রির বিপক্ষে অবস্থান নেন করপোরেশনের চেয়ারম্যান। এভাবে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে ওই দাম এখন উঠেছে ২২ হাজার ১৪৭ টাকা প্রতি টন। ফলে এখন পর্যন্ত মিলের গুড় বিক্রি করে গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩ কোটি টাকা বেশি আয় হয়েছে।
একই কথা জানালেন নাটোর চিনিকলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে জানান, এখন পর্যন্ত নাটোর চিনিকলে উৎপাদিত চিটাগুড়ের মধ্যে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টন মজুত রয়েছে। বিক্রি হওয়া চিটাগুড় থেকে গত অর্থবছরের তুলনায় এবার ৫ কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে। মজুত চিটাগুড় বিক্রি করতে পারলে আরও বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২০
এফএম