ঢাকা: এক সপ্তাহ পর দেশে পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আসায় কমছে দাম।
রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) দেশব্যাপী বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজি প্রতি প্রায় ১০-১৫ টাকা দাম কমেছে পণ্যটির। ফলে আরও দাম কমার অপেক্ষায় ক্রেতা সমাগম নেই বাজারে। একই সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। এছাড়া তুরস্ক, মিসর এবং চীনের পেঁয়াজ এখন বাংলাদেশের পথে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান এস আলম ও মেঘনা গ্রুপ দ্রুত পেঁয়াজ আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছে।
এদিকে, এক বাজারের ওপর নির্ভরতা কমানোসহ বিকল্প হিসেবে অন্য দেশ বা বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ও মজুদদারের ওপর কড়া নজরদারি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে, পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজির জন্য আড়তদার ও পাইকাররা এর পুরো দায় চাপাচ্ছেন আমদানিকারকদের সিন্ডিকেটের ওপর।
গতকাল শনিবার হিলি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে ১১ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ৮ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আটটি ট্রাকে ২১৩ টন পেঁয়াজ এসেছে। ওপারে এখনো আটকে আছে প্রায় ৫০০ টন পেঁয়াজ। সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ২৫-৩০টি পেঁয়াজবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
এছাড়া ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর বিকল্প দেশ হিসেবে মিয়ানমার থেকে আমদানি শুরু হয়েছে। শনিবার মিয়ানমার থেকে প্রায় আড়াই মাস পড় পেঁয়াজের প্রথম চালান এসেছে। দু’টি ট্রলারে করে ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।
বানিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজের বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রাতারাতি অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। গত বছরও একই কায়দায় ফায়দা লুটেছে অসাধু চক্র। এবার বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রতিযোগিতা কমিশন। দেশের বাজারে একচেটিয়া বা মনোপলি ঠেকাতে কাজ করা সরকারের এই প্রতিষ্ঠান চলতি সপ্তাহেই এক সভার আয়োজন করেছে। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, কৃষি মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের ডাকা হবে। চলতি সপ্তাহে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত যেকোন মুহূর্তে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের আদেশ প্রত্যাহার করে নিতে পারে। এ লক্ষ্যে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। রপ্তানি বন্ধ করায় ভারতের স্থানীয় কৃষকরা এখন ন্যায্যদাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পেঁয়াজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা। এছাড়া সাত দেশ থেকে যেভাবে পেঁয়াজ আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ, তাতে ওই পেঁয়াজ দেশে এসে গেলে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। গত বছর রপ্তানি বন্ধের পর কম দামেও তাদের আমদানিকৃত অতিরিক্ত পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হয়নি (চাহিদার কারণে ভারত আমদানি করেছিল)। কারণ ওই সময় নতুন পেঁয়াজ উঠা শুরু হয় বাংলাদেশে। উপরন্তু কৃষকদের ন্যায্যদাম নিশ্চিত করতে চলতি বাজেটে আমদানির ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এখন পেঁয়াজ আমদানি সহজ করতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
এছাড়া পেঁয়াজের চলমান সঙ্কট নিরসনে এস আলম গ্রুপ মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া মেঘনা গ্রুপও পেঁয়াজ আমদানি করবে। আগামী সপ্তাহে আমদানি ঋণপত্র খোলা হবে। বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজযোগে এ চালানের পেঁয়াজ আসবে চট্টগ্রাম বন্দরে।
এ বিষয়ে সস্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, পেঁয়াজের বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকার প্রথম দিন থেকেই নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজের একটি চালান এসে পৌঁছেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করানো হবে। ব্যবসায়িক উদ্দেশে বা লাভের জন্য এ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে না। এটি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ব্যবসায়ীরা করবেন। এসব পেঁয়াজের বেশিরভাগ সরকার কিনে নেবে। তবে টিসিবির বাইরে অন্য মাধ্যমে এসব পেঁয়াজ বিক্রি করা হতে পারে। ইতোমধ্যে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে টিসিবি। শীঘ্রই অনলাইনে টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আশা করছি আমরা পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব।
রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন বন্দরে আটকে থাকা পেঁয়াজ দেশের প্রবেশ করার প্রভাব পড়েছে বাজারে। পাইকারিতে শুক্রবারের চেয়ে গতকাল শনিবার কেজিতে পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০ টাকা। আর খুচরা বাজারে কমেছে ১৫ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের বাজার আরও কমে আসবে।
পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা কেজিদরে। যা শুক্রবার ছিল ৮৫ টাকা। দেশি কিং পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ (এলসি) বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে। যা গত শক্রবার ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। সব থেকে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকায়, যা গতকাল ছিল ৭৭ টাকা এবং তিন দিন আগে ছিল ৮৫ টাকা। অপরদিকে, আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজিতে, যা আগে ছিল ৬০-৬৫ টাকা।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেশি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে, দেশি কিং বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। যা শুক্রবারও ছিল ৯০-১১০ টাকা। অপরদিকে, আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, যা গতকাল ছিল ৭০-৮০ টাকা।
এদিকে, পেঁয়াজের বাজারে উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে ক্রেতা। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় ক্রেতারা বেশি কেনায় তারা বাজারমুখি হচ্ছেন না। আর ক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজ পরিস্থিতির শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেই তারা বাজারে যাবেন।
এ বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা মোশারফ বাংলানিউজকে বলেন, পেঁয়াজবাজারে ক্রেতা কমে গেছে এটা সত্য। অনেকের পেঁয়াজ প্রয়োজন এককেজি তিনি কিনেছেন ১০ কেজি। ফলে পেঁয়াজ কিনতে অনেক ক্রেতার কয়েক মাস বাজারে আসা লাগবে না।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এতে এদিনই ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম খুচরা বাজারে বেড়ে ১২০ টাকা হয়ে যায়। আর পাইকারিতে ৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয় ৮৫ টাকা। এমন দাম বাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে বাড়তি পেঁয়াজ কেনার হিড়িক পড়ে ক্রেতাদের মধ্যে।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০
জিসিজি/এমআরএ