মৌলভীবাজার: ফসলের মাঠে হাসছে সবুজ ধানের হাসি। প্রান্তর ছুঁয়ে শুধুই আজ সবুজের সমারোহ।
পাশাপাশি আশার কথা হচ্ছে, ধানের চলতি মৌসুমে মৌলভীবাজার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার ২৮০ হেক্টর জমি বেশি চাষ করা হয়েছে। এটা রেকর্ড। বিষয়টিকে কৃষি সংশ্লিষ্টরা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, আমন ধানের ফলন কৃষকের কাছে এক ধরনের আমানত। যেমনটি আমনের অর্থও বলছে। আরবি শব্দটির অর্থই আমানত। আবহমান বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ কৃষকের গোলাভরা ধান। এই আমানত স্বরূপ ধানই তার যথার্থ প্রতীক।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী দাস বাংলানিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে মৌলভীবাজার সদরে ১৮ হাজার ১৬০ হেক্টর, শ্রীমঙ্গলে ১৫ হাজার ৫৬৫ হেক্টর, রাজনগরে ১৩ হাজার ১০৫ হেক্টর, কমলগঞ্জে ১৭ হাজার ২৯৫ হেক্টর, কুলাউড়ায় ২০ হাজার ১৯০ হেক্টর, বড়লেখায় ৮ হাজার ৬৭০ হেক্টর এবং জুড়িতে ৮ হাজার ৪৫০ হেক্টরসহ মোট এক লাখ ১৪৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ হয়েছে।
গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে মৌলভীবাজার সদরে ১৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর, শ্রীমঙ্গলে ১৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর, রাজনগরে ১২ হাজার ৬১৩ হেক্টর, কমলগঞ্জে ১৭ হাজার ৩০০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর, বড়লেখায় ৮ হাজার ৫৪০ হেক্টর এবং জুড়িতে ৮ হাজার ৪৪৭ হেক্টরসহ মোট এক লাখ ১৫০ হেক্টর জমিতে এই ফসল ফলেছিল বলে জানান কৃষ্ণা।
শ্রীমঙ্গলের ইছুবপুর এলাকার কৃষক জুবায়ের আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আশ্বিন-ভাদ্র মাসে আমরা প্রায় চার থেকে পাঁচ জাতের ধান করেছি। আমাদের পরিবার পুরোপুরিভাবে কৃষি নির্ভর। আমাদের প্রায় দেড়শ’ কেয়ার (বিঘা) ধানি জমি রয়েছে। এখানে আমরা রোপণ করেছি বিআর এগারো ধান, বীনা ধান বিশ, বিআর তেইশ ধান, চিকন স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণা, চিনিগুঁড়া চাল এবং দেশি বিরুইন (বিন্নি) ধান। পুরো জমিতেই ধান লাগানো হয়েছে। এক তোলাও ফাকা নেই!
তিনি বলেন, আমাদের চার থেকে পাঁচ জাতের ধান লাগানোর অর্থ হলো- দু-একটায় যদি ফসল কম দেয়, তাহলে অন্যটা দিয়ে কাভার দেওয়া যাবে। আমরা কৃষক মানুষ তো। পুরোপুরি ধানের ওপরই নির্ভরশীল। আমরা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে যে ধানটি লাগিয়েছি, সেটা হলো গুটি স্বর্ণা ধান। এই ধানটি কেয়ার প্রতি ১৫ থেকে ১৬ মণ পাই। অপরদিকে, পরিমাণে কম লাগিয়েছি এগারো এবং তেইশ ধান। এই ধানগুলো দিয়ে অগ্রহায়ণের শুরু হবে।
‘আমি নিজেই প্রায় পাচশ’ মণ ধান পাই। আমার আরেক চাচা আছেন তিনিও বেশ পরিমাণে ধান পেয়ে থাকেন। দেড়শ’ কেয়ারে আমাদের পুরো পরিবার মিলে চলতি মৌসুমে প্রায় এক হাজার মণ ধান পাব। ’
শ্রীমঙ্গল কৃষি অফিসের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রথিন্দ্র দেব বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কৃষকদের দেশি উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান লাগাতে সবসময় উৎসাহিত করি। তবে কেউ কেউ আমাদের পরামর্শ না শুনে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারতীয় ভ্যারাইটি চিকন স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণা এগুলো রোপণ করেন। এগুলোতে রোগবালাই বেশি হওয়ায় উৎপাদন কম হয়ে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, মৌলভীবাজারে চলতি মৌসুমে এক লাখ এক হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২০০ হেক্টর। অর্থাৎ এক হাজার ২৮০ হেক্টর বেশি হয়েছে।
‘এর বেশির ভাগই রোপণ হয়েছে হাওরাঞ্চলে। যেখানে এর আগে কোনোদিন আমন হতো না। সেখানে বোরো ধানই হতো। এবার পাম্পের মাধ্যমে হাওর-জলাশয়ের পানি নিষ্কাশন করায় এখানে ধানের আবাদ বেড়ে গেছে। ’
রোপা আমন ধান পানিতে ডুবে গেলে সমস্যা হয়। তা না হলে কোনো সমস্যা হয় না। পরিমাণ মতো পানি তো লাগেই। পানিতে সমস্যা যে ধানে হয় না, সেটার চাষ এখন কমে গেছে। সেটাকে বলা হয় বুনা আমন। স্থানীয় ভাষায় বলা হয় কাতারি। কাতারি ধান যেখানে করা হতো, সেখানে এখন রোপা আমন ধান করছেন বলে জানান উপ-পরিচালক।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০
বিবিবি/টিএ