ফেনী: সকাল সাড়ে ৯টা। এ সময়ে ফেনী শহরের দাউদপুরস্থ সবজির আড়তে প্রচুর হাঁক-ডাক থাকার কথা।
চলতি বছরের এ সময়ে সবজির যে দাম, গেল বছরের তুলনায় তা তিন গুণেরও বেশি। এ বছর সবজির পাইকারি দর বেড়েছে তিনগুণ। মিষ্টি কুমড়া, বরবটি এমন সহজলভ্য সবজির দর বেড়েছে আরও বেশি। হতাশার বিষয় হলো- এমন পরিস্থিতি চলবে আরও একমাস। এমন তথ্যই জানালেন ফেনী শহরের দাউদপুর সবজির আড়তের আড়দার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।
অস্বাভাবিক বাজার দর প্রসঙ্গে দাউদপুর সবজির আড়তের এম এম ট্রেডিংয়ের মালিক আবদুল মতিন পারভেজ জানান, সবজি উৎপাদনে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা এবং বগুড়া দেশের অন্যতম প্রধান জেলা। দীর্ঘদিনের বন্যায় এসব এলাকায় আবাদি জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বাজারে দেখা দিয়েছে কাঁচা পণ্যের সংকট। এতে করে দাম বাড়ছে হু হু করে।
দাউদপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, শসা ও বরবটি এসেছে নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এ বাজারের অপর আড়তদার আবুল কালাম জানান, বাগেরহাট থেকে এসেছে মুলা, মিষ্টি কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি।
তিনি জানান, বুধবার ফুলকপির প্রতিকেজি পাইকারি দর ছিল ৫৫ টাকা ও বাঁধাকপি ৩৫ টাকা। একইভাবে পেঁপে ২০ টাকা, শসা ৫৫ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
তবে ফেনীর খুচরা বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি সিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, টমেটো ১৩০ টাকা, বেগুন প্রকারভেদে ১০০ টাকা, ফুলকপি ৯০ টাকা, পেঁয়াজ ৯০ টাকা, আলু ৫৫ টাকা, পেঁপে ৪৫ টাকা, পটল ৭০ টাকা।
খুচরা বাজার দরের এমন চিত্রে নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে।
ফেনী শহরের পাঠান বাড়ি এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক কবির আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, মাস শেষে যা আয় হয় তাতো সবজি কিনতেই চলে যাবে। বাকি দিনগুলো কীভাবে চলবে। এভাবে তো আর চলা যায় না।
একইভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন শহরের বড় বাজার, পৌর হকার্স মার্কেট, মহিপাল কাঁচা বাজার ও মুক্তবাজারে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা।
আলুর দাম খুচরা বাজারে এরই মধ্যে ৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই।
ব্যবসায়ী পারভেজ আলু ও পেঁয়াজের অসহনীয় দামের কারণ হিসেবে দেখছেন করোনাকালে অপরিকল্পিত খাদ্য সহায়তা।
তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে চাহিদার অতিরিক্ত আলু ও পেঁয়াজ নিম্নআয়ের মানুষের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। এতে কোল্ড স্টোরেজে আলুর পরিমাণ কমে গেছে। চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য মানুষ না খেয়ে নষ্ট করেছে।
নতুন আলু বাজারে আসবে আগামী নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি। তবে তা হবে অপরিপক্ক ও ছোট, ফলে খেতে সুস্বাদু হবে না বলেও জানান পারভেজ।
তিনি জানান, বাজারের চাহিদা মেটাতে একমাস বয়সের গাছ উত্তোলন করে আলু সংগ্রহ করা হবে। সাধারণত আলু পরিপক্ক হতে একশো দিন সময় লাগে। আলুর বাজার পূর্বের পর্যায়ে আসতে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। একই অবস্থা সবজির ক্ষেত্রেও।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২০
এসএইচডি/আরআইএস