ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ২৭ প্রস্তাব ইআরএফ’র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২১
বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ২৭ প্রস্তাব ইআরএফ’র

ঢাকা: আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রাক-বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে ২৭টি প্রস্তাব দিয়েছে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) দুপুরে ভার্চ্যুয়ালি এনবিআর চেয়ারম্যান কাছে প্রস্তাবনাগুলো সংগঠনটির পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রতির বড় স্বীকৃতি, যা আমাদের জন্য গৌরবের। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নেগোসিয়েশনে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে শক্ত অবস্থানে থাকবে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে বাংলাদেশকে। বিশেষত এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি বাণিজ্যে প্রমিত হারে শুল্ক পরিশোধ করে প্রবেশ করতে হবে বাংলাদশি পণ্যকে। যেমন আমাদের সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার ইউরোপের বর্তমানে ইবিএ’র আওতায় শুল্কমুক্তভাবে পণ্য রপ্তানি করলেও তখন প্রায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। কোনো কোনো দেশে এ হার আরো বেশি হবে। অথচ একই সময়ে ভিয়েতনামের মতো দেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) কারণে ইউরোপের বাজারে পর্যায়ক্রমে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে। ফলে বাড়তি প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।

এমন পরিস্থিতি মেকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ বা পিটিএ (প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট) করার বিষয়ে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশও সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যে শুল্কমুক্ত কিংবা শুল্ক ছাড়ের সুবিধা দিতে হবে। ফলে এনবিআরের বিপুল পরিমাণ আমদানি শুল্ক বাবদ সম্ভাব্য রাজস্ব কমে যেতে পারে। এ লক্ষ্যে এনবিআরকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।  

এছাড়া আমদানি রপ্তানির ভলিউম বিবেচনায় কোন দেশের সঙ্গে চুক্তি করা যায়, তারও হোমওয়ার্ক করা দরকার। তবে আমদানি শুল্কনির্ভর রাজস্ব থেকে অদূর ভবিষ্যতে বেরিয়ে আসার বাস্তবতায় এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতিমালা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি হিসেবে এখন থেকেই কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

বাংলাদেশে ট্যারিফ হার অনেক বেশি। ট্যারিফ হার কমানোর পাশাপাশি একটি যুগোপযোগী ট্যারিফ পলিসি প্রণয়নের প্রয়োজন। একইসঙ্গে বলবো বন্দর ও কাস্টমস সেবা আরও সহজ ও দ্রুততর করার সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিকভাবে ট্রেড ফ্যাসিলেটেশন বাড়ানোর প্রতি আরও নজর দেওয়া দরকার বলে আমরা মনে সংগঠনটি মনে করে।

এ সময় ইআরএফের প্রেসিডেন্ট শারমীন রিনভী বলেন, করোনা ভাইরাস বিবেচনায় ব্যক্তির আয় কমেছে। তাই ব্যক্তি করমুক্ত সীমা ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ এবং নারী ও ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সের ব্যক্তিদের জন্য ৫ লাখ করা যেতে পারে।  

তিনি বলেন, ডিজিটাল এনবিআরের স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এখনো আয়কর ও ভ্যাট রিটার্ন দিতে হয়রানির স্বীকার হতে হয়। রিটার্ন দাখিল পদ্ধতিতে যুগোপযোগী ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রয়োজন। এতে এনবিআর ও করদাতাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন কমবে বলে মনে করছি।  

শারমীন রিনভী বলেন, বন্ড লাইসেন্সের অপব্যবহার করে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। বলা যায় বাণিজ্য নির্ভর অর্থ পাচার সবচেয়ে বেশি। ২০১৫ সালে মানিলন্ডারিং আইনে এনবিআরকে বিদেশে টাকা পাচারকারীদের সাজা দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা মনে করি, প্রশিক্ষিণ প্রাপ্ত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ইউনিট গড়ে তোলা এবং লোকবল নিয়োগ দেওয়া জরুরি।  

ইআরএফ প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে তুলনা করে করপোরেট কর হার কমানো দরকার। এ হার ৫ শতাংশ কমালে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। বর্তমানে দেশে সাধারণ ননলিস্টেট কোম্পানির ক্ষেত্রে সাড়ে ৩২.৫ শতাংশ, লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছ।  

এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় বলতে চাই, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এবং তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মধ্যে করপোরেট করের ব্যবধান বাড়ানো প্রয়োজন।  

আয়কর, শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকিবাজ ধরতে পারলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পুরস্কার দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিরোধিতা করছে, এতে দুর্নীতি করছে বলে তাদের অভিযোগ। তবে আমার মনে হয় সাধারণ মানুষদের জন্য পুরস্কার দেওয়ার বিষয়টি চালু করে তথ্য দেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারেন। এতে রাজস্ব পদ্ধতির সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়বে।

উপজেলা বা মফস্বলে এনবিআরের নিজস্ব অফিস নেই। কর আওতা বাড়াতে হলে সেখানে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে হবে। এলাকার শিক্ষিত তরুণদের কাজে লাগতে পারেন। ফলে কর্মসংস্থান বাড়বে।

বাড়ির মালিক যারা তাদের বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন তাদের করের আওতা আনা জরুরি। সিটি করপোরেটশন বা স্থানীয় নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে এটি করা যেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২১
এসএমএকে/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।