ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যশোরের পণ্য সারাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে ব্র্যান্ড হিসেবে

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২১
যশোরের পণ্য সারাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে ব্র্যান্ড হিসেবে উদ্যোগী এই মানুষগুলোই যশোরের পণ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে সারাদেশে

যশোর থেকে: তৃণমূল মানুষের জীবন জীবিকায় গ্রামের হাট সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। এখন সেই হাটের গুরুত্ব বেড়েছে গ্রাম ছাড়িয়ে শহরেও।

একুশ শতকের বাংলাদেশ গ্রাম-শহরের দূরত্ব ঘুচিয়ে এনেছে নতুন সময়। তাইতো গ্রামের স্থানীয় পণ্য এখন সারাদেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে ব্র্যান্ড হিসেবে।

যশোরের ‘গ্রামের হাট’ (https://gramerhat.com/)  তেমনি একটি ব্র্যান্ড। যারা ই-কমার্সের মাধ্যমে এখন নিজেদের গ্রামের পণ্য ছড়িয়ে দিচ্ছেন সারাদেশে। যশোরের বিখ্যাত খেজুরের গুড়, শীতল পাটি, নকশি কাঁথা ও অন্যান্য গ্রামীণ পণ্যগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ই-কমার্সটি স্বপ্ন দেখছে রপ্তানিরও।

শুধু গ্রামের হাট নয়, সরকারের উদ্যোগ এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পৃষ্ঠপোষকতায় আনুকূল্য পেয়ে জেলা পর্যায়ে যশোরের অনেকেই এখন হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। আইটি খাতের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিতেও রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই খাতে বেশ এগিয়েও আছেন তারা। যশোর থেকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পরিচালিত একাধিক ই-কমার্স সাইট বর্তমানে জনপ্রিয়তাও পেয়েছে বেশ। এসব উদ্যোক্তা যশোরের স্থানীয় পণ্যকে সারাদেশে ব্র্যান্ড হিসেবে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

তেমনি আরও একটি ই-কসার্স সাইট ‘দেশী ফেরিওয়ালা’ (https://www.deshiferiwala.com/)। এই সাইটটি যশোরের স্থানীয় গুড়-পাটালি, মধু, ঘি, নকশী কাঁথানসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খাবার পৌঁছে দিচ্ছে সারাদেশে। বর্তমানে এই উদ্যোগে কাজ করছেন ১০ জন স্টাফ। যুক্ত আছেন ১৫০ জন গাছি এবং ৮০ জন নারী। যারা খেজুরের গুড়, পাটালি গুড়, নকশী কাঁথাসহ বিভিন্ন খাবার সরবরাহ করে থাকেন।

এছাড়া যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়-পাটালির অনলাইন বিপণন বাজার ‘কেনারহাট’ (https://kenarhat.com/) ই-কমার্সটিও বর্তমানে ব্যবসা সফল। বর্তমানে এই উদ্যোগে ১০ জন স্টাফ কাজ করছেন এবং এর সঙ্গে ১০০ জন গাছি যুক্ত রয়েছেন যারা খেজুরের গুড় ও পাটালি গুড় সরবরাহ করে থাকেন।

জেলা পর্যায়ে ই-কমার্স খাত নিয়ে ‘গ্রামের হাট’ এর উদ্যোক্তা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, আমি উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করি ২০১২ সালে। যেহেতু আমি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করি, সেখান থেকে আমার লক্ষ্য ছিল তৃণমূলের যে পণ্যগুলো আছে, গ্রামের মানুষ যে পণ্যগুলো উৎপাদন করে, সেগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া। বর্তমানে আমাদের গ্রামের হাট ২৫টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমাদের বিভিন্ন জেলাতে ভেন্ডর আছে এবং সেই ভেন্ডরের মাধ্যমে আমরা ওই জেলার বিখ্যাত বা ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো ক্রেতাদের সরবরাহ করে থাকি। যেমন যশোরের গুড়, সিলেটের চা, রাজশাহীর আম ইত্যাদি।

তিনি বলেন, আমরা অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। সরকারের জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের যে বিষয়টা, সেটিও আমাদের গ্রামের হাটের সঙ্গে এখন সম্পৃক্ত। আমরা তৃণমূলের পণ্যগুলো বা জেলার ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলো নিয়ে কাজ করি। অন্যান্য ই-কমার্সে শুধু গাড়ি-বাড়ি-ইলেকট্রিক্যাল পণ্য বিক্রি হয়, কিন্তু আমাদের তা নয়। বরং স্থানীয় উদ্যোগে যে পণ্যগুলো আছে, আমারা সেটাই সেল করার চেষ্টা করি। এখন সারাদেশে আমারা পণ্যগুলো সরবরাহ করছি। এখন আমাদের পণ্যগুলো রোলিং হয়। অর্থাৎ সারাবছরই কিছু না কিছুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে এবং নতুন পণ্যগুলো বিক্রি করি। যেমন গুড়, পাটালি, আম, কুমড়ার বড়ি। কিছু না কিছুর চাহিদা প্রতিমাসে থাকেই এবং ক্রেতাদের সাড়াও অনেক বেশি।

এছাড়া যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বছর ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে অনলাইন পশুর হাটে ১২ কোটি ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকার পণ্য কেনা-বেচা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। তাদের তৈরি ‘যশোর হাট’ (www.jashorehat.com) থেকে এই সফলতা অর্জন হয় গত ১১ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ১০ দিনে। এ সময় অনলাইনে এক হাজার ৭৮৮টি পশু কেনা-বেচা হয়। পছন্দের পশু বাড়ি থেকে ক্রেতারা সংগ্রহ করেছেন নগদ লেনদেন ছাড়াও ডিজিটাল গেটওয়ে প্লাটফর্মের মাধ্যমে। আর এই পণ্যগুলো শুধু বিক্রি নয় বরং জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্য হিসেবে কাজ করছে এবং ই-কমার্সগুলো সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ভোক্তাদের দোরগোড়ায়।

সার্বিক বিষয়ে সরকারের আইসিটি বিভাগ জানায়, যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের মাধ্যমে এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। এতে রয়েছে বিজনেস সেন্টার, এমটিবি সেন্টার এবং ডরমেটরি ভবন। পার্কে মোট বিনিয়োগকারী ৫৬ জনের মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৪৬ জন। কর্মরত রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার জনবল। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ সুবিধা যেগুলো আছে, সেগুলো খুব সহজেই প্রাপ্ত হচ্ছে এই জেলার মানুষরা। আর তা কাজে লাগিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করছেন তরুণরা, ব্র্যান্ডিং করছেন নিজ জেলার।

এছাড়া ই-কমার্সের প্রতি বর্তমানে সাধারণ মানুষের একটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এলেও এই ই-কমার্সগুলো তা থেকে মুক্ত। ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেমের ফলে পণ্য হাতে পাওয়ার পর সিস্টেম রয়েছে টাকা প্রদানের। তাই একদিক থেকে যেমন ডেলিভারি সিস্টেম, অন্যদিক থেকে পণ্যের গুণগত মানেও বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গায় মান রেখেছে আস্থার, বলেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২১
এইচএমএস/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।