ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বন্যায় নষ্ট চিনাবাদাম, চরাঞ্চলের কৃষক পরিবারে হাহাকার

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
বন্যায় নষ্ট চিনাবাদাম, চরাঞ্চলের কৃষক পরিবারে হাহাকার

লালমনিরহাট: গেল বন্যার পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের কৃষকের মাটির সোনা খ্যাত চিনাবাদাম। ফলে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না বাদাম চাষিরা।

জানা গেছে, তিস্তা, ধরলা আর সানিয়াজান নদীবেষ্টিত জেলা লালমনিরহাট। জেলার ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা তিস্তা আর ধরলা নদী। তিস্তা নদী জেলার দক্ষিণ দিয়ে ৫টি উপজেলার বুক চিড়ে বয়ে চলেছে আর খরস্রোতা ধরলা জেলার সদর উপজেলার উত্তর পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে চলেছে। সব মিলে নদী দু'টি দুই দিক দিয়ে জেলার সীমান্তকে আগলে রেখেছে। বর্ষা মৌসুমে ধরলা আর তিস্তার খরস্রোতে প্রতি বছর গৃহহারা হচ্ছে শত শত পরিবার। ভিটে মাটি আর চাষাবাদের ফসলি জমি হারিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে দুই নদীর তীরবর্তী মানুষ। বর্ষা শেষে শুষ্ক মৌসুমে মাঠের পর মাঠ বালুচরে পরিণত হয়। জেলা জুড়ে প্রায় ৩৬টি চরাঞ্চল রয়েছে নদীর বুকে।

কৃষকরা জানান, শুষ্ক মৌসুমে কঠোর পরিশ্রম করে ধূ ধূ বালুর ওপর সবুজ ফসলে চরাঞ্চল ভরে তোলেন চাষিরা। শুষ্ক মৌসুমের এই স্বল্প সময়ে চাষাবাদের আয়ে চলে চরাঞ্চলের মানুষের সারা বছরের সংসার। কেউ ঋণ করে আবার কেউ বাকিতে বীজ, সার, কীটনাশক ক্রয় করে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করেন। ফসল উঠে গেলে ঋণ ও দোকানের পাওনা পরিশোধ করে বাকি সময়টুকু বিকল্প পেশায় আয় রোজগার করে সংসারের চাকা সচল রাখেন।

কিন্তু এ বছর ঘটেছে উল্টো। ধূ ধূ বালুর ওপর হঠাৎ বন্যার আঘাত লাগে তিস্তা পাড়ে। আগাম বন্যায় অনেক ফসল ঘরে তুলতে পারেনি চরাঞ্চলের চাষিরা। এছাড়াও শীতকালিন ফসল আলু, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা ও তামাক নষ্ট হয়েছে শিলাবৃষ্টিতে। পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচসহ বিভিন্ন সবজি চৈত্র মাসের আগাম বন্যায় ডুবে নষ্ট হয়েছে। বাকি ছিল চরাঞ্চলের সোনা খ্যাত চিনাবাদাম। সেই বাদামও চলতি মাসের টানা বন্যার পানি ডুবে নষ্ট হয়েছে। সব মিলে এ বছর চরাঞ্চলের চাষিরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এ বছর শুষ্ক মৌসুমের কোনো ফসলই ঘরে তুলতে পারেননি তারা। ফলে চলতি বছর ঋণ ও বাকিতে কেনা বীজ, সার ও কীটনাশকের টাকাও পরিশোধ করতে পারেননি অনেক কৃষক। বড় বিপদ হচ্ছে শুষ্ক মৌসুমের ফসল রাখেন বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকালিন সময়ের সম্বল হিসেবে। সেটাও এ বছর সঞ্চিত রাখতে পারেননি চাষিরা। ফলে নদীপাড়ের কৃষকের মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই।

তিস্তা নদীর বাম তীরের গোবর্দ্ধন গ্রামের বাদাম চাষি জমির উদ্দিন বলেন, চরের বালু জমিতে কম খরচে অধিক মুনাফা পেতে বাদাম চাষের জুড়ি নেই। প্রতি ২৭ শতাংশ জমিতে বাদাম চাষে খরচ পড়ে মাত্র ৪ হাজার টাকা। আর বাদাম উৎপাদন হয় ৪/৫ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতিমণ সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। গেল বছরও শুষ্ক মৌসুমের বিভিন্ন ফসল বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি। এ বছর উৎপাদন খরচও পেলাম না। সব নষ্ট হয়েছে শিলাবৃষ্টি আর আগাম বন্যায়।

একই এলাকার চাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, এক একর জমিতে বাদাম চাষ করেছি। কিছু দিন পরেই বাদাম ঘরে তুলতে পারতাম। এরই মধ্যে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সব। পানি কমে যাওয়ায় কিছু বাদাম ডুবে ডুবে তুলেছি। যা আবার অঙ্কুরোগম হতে শুরু করেছে। কিছু পচে নষ্ট হচ্ছে। বেশির ভাগই বন্যার বালু চাপা পড়ে নষ্ট হয়েছে। লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠবে না। ঋণ আর বাকিতে কেনা সার বীজের টাকা পরিশোধ নিয়ে পড়েছি বিপাকে।

মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর চরাঞ্চলের কোনো কৃষক লাভবান হতে পারেনি। প্রতিটি ফসল শিলাবৃষ্টি আর বন্যায় নষ্ট হয়েছে। চরাঞ্চল জুড়ে কৃষক পরিবারে রয়েছে হাহাকার। খাদ্য ঘাটতিসহ আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষ। এসব কৃষককে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক হামিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, জেলার ৫টি উপজেলায় গেল বন্যায় ৩৮৩ হেক্টর ফসলি জমি ডুবে ছিল। যার মধ্যে ২০১ হেক্টর জমির বাদাম, আউশ ধান, ভুট্টা, পাট ও আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৮ হাজার ৩শ চাষিকে পুনর্বাসনের বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে চাষিদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।