ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেকর্ড সংখ্যক চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫১ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২২
চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেকর্ড সংখ্যক চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম না পেয়ে এবং বিভিন্ন ট্যানারিগুলোতে পূঁজি আটকে যাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের চামড়া ব্যবসায়ীরা অনেকে এখন নিঃস্ব। সে কারণে অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

আর যারা টিকে আছেন তারা পারিপার্শ্বিক কারণে ছাগলের চামড়া না কেনার হুমকি দিয়েছেন। এতে জেলায় এ বছর রেকর্ড সংখ্যক চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

৪২ বছরের পুরানো চামড়া ব্যবসায়ী রশিদুল হক। বাড়ি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সত্রাজিতপুরে। ঢাকা ও নাটোরের ট্যানারি ও মোকামগুলোতে ২০ লাখ টাকা আটকে সর্বশান্ত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর তার একমাত্র ছেলে ফারুক হোসেন ব্যাংকে লোন করে এখন অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়েছেন। গড়ে তুলেছেন সিমেন্ট ও সিমেন্টের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ বিক্রির দোকান।  

একই অবস্থা তার দোকানের অপর কর্মচারী রাজিবুল হকের। তারও ১০ লাখ টাকা আটকে গেছে। তারা দুজনই টাকা ফেরত পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে চামড়া সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছেন গত বছর থেকে।  

শুধু তারাই নয়, ওদের মত সারা জেলায় প্রায় ৪০ জন লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী এ পেশা ছেড়ে এখন অন্য কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। ওইসব আড়তগুলোতে বর্তমানে তালা ঝুলছে।

ভুক্তভোগীদের দাবি মোকামে আটকে পড়া টাকাগুলো সরকার ব্যবস্থা করে দিলে এবং চামড়ার দাম বাড়ানো হলে আবারও ফিরবে সেই সুদিন। রক্ষা পাবে এ শিল্প।

চামড়া ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চামড়াজাত পণ্যের দাম বাড়লেও কাঁচা চামড়ার দাম না বাড়ানো, লেবার খরচ বেশি এবং লবণের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে চামড়া ব্যবসা ধ্বংসের মুখে।

এ ব্যাপারে চামড়া ব্যবসায়ী রাজিবুল হক জানান, ৪ জনের সংসার চালাতে গিয়ে এখন হিমসিম খেতে হচ্ছে। পাওনা টাকার জন্য বার বার তাগাদা দিয়েও কাজ না হওয়ায় তিনি ক্লান্ত। সে আশা বাদ দিয়ে এখন মানুষের দোকানে কাজ করে সংসার চালাতে হচ্ছে।  

তিনি জানান, তার এলাকার অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ী এ বছর কোনো চামড়া কিনবেন না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর লবণের দাম দ্বিগুণ এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে ৫শ টাকা হয়েছে। চামড়া কিনে লাভ না হওয়ায় তিনি শুধু ব্যবসার ধারাবাহিকতা রাখতে গরুর চামড়া কিনবেন। লোকসানের ভয়ে এ বছর তিনি ছাগলের চামড়া কিনবেন না।

লোকসান ও পুঁজি আটকে যাওয়ায় জেলার লাইসেন্সধারী ৫০ ব্যবসায়ীর মধ্যে মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ী সক্রিয় রয়েছে বলে জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাহাবুদ্দিন।  

তিনি আরও জানান, লাইসেন্স ও লাইসেন্সবিহীন প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ীর নাটোর ও ঢাকার মোকামগুলোতে প্রায় ৫ কোটি টাকা আটকে আছে। আর এ কারণে জেলার চামড়া ব্যবসায়ীর সংখ্যা এক অংকে নেমে এসেছে।

তবে চামড়া ব্যবসায়ীদের সবরকম সহায়তার আশ্বাস দিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপার এ এইচ এম আব্দুর রকিব। তিনি জানান, চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বার্থে রাস্তায় নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি দেশের চামড়া পাচার রোধে বিজিবি সহায়তা করবে।

অপরদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন, চামড়া ব্যবসায়ীদের এ দুর্দশার কথা তার জানা ছিল না। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে লোন এবং আটকে যাওয়া পুঁজি উদ্ধারে শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করার আশ্বাস দেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।