ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

দেড় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হাতছাড়া হচ্ছে বিমানের!

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
দেড় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হাতছাড়া হচ্ছে বিমানের!

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কিছুতেই কমছে না দুর্নীতি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চোরাচালান, যাত্রীদের লাগেজ চুরি, হয়রানিসহ নানা অভিযোগ।

এবার এই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। পর্যায়ক্রমে, অন্যান্য দায়িত্বও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা।

চলমান সমালোচনার মধ্যেই সর্বশেষ (২২ সেপ্টেম্বর) সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের দুই খেলোয়াড়ের লাগেজ থেকে ডলার, মালামাল হারানোর ঘটনা যেন আগুনে ঘি ঢালার উদাহরণ।

এই ঘটনায় বিবৃতিও দিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলামের সই করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাফ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ বিজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল গত ২১ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টা ৪২ মিনিটে বিজি-৩৭২ ফ্লাইটে কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় অবতরণ করে।  

পরে বাফুফের প্রটোকল প্রতিনিধি ইমরান, মিডিয়া এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত ফুটবল দলের দুই জন নারী সদস্যের ব্যাগ থেকে ডলার এবং টাকা চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে ঘটনার সত্যতা প্রতীয়মান হয়নি মর্মে নিশ্চিত হয়েছে।

সিসিটিভি বিশ্লেষণের তথ্য দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, দুপুর ১টা ৪২ মিনিটে বিমান ল্যান্ডিং করে। ১টা ৫৮ মিনিটে ব্যাগেজ মেক আপ এরিয়ায় ট্রলি আসে। ১টা ৫৯ মিনিটে ব্যাগেজ মেক আপ এরিয়ায় প্রথম লাগেজ ড্রপ হয়। ২টায় কনভেয়ার বেল্ট ৮ এ প্রথম লাগেজ ড্রপ হয়। ২টা ৮মিনিটে ব্যাগেজ মেক আপ এরিয়ায় শেষ ব্যাগেজ ড্রপ হয়। পরে বাফুফে প্রটোকল প্রতিনিধি ও দুজন টিম অফিসিয়াল কর্তৃক লাগেজ ট্যাগ চেক করে সম্পূর্ণ অক্ষত এবং তালাবন্ধ অবস্থায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লাগেজগুলো বুঝে নিয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

এ অবস্থায় বিমানের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডেলিং কার্যক্রম হারাতে যাচ্ছে সরকারি সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সক্ষম কোন বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নির্মীয়মাণ থার্ড টার্মিনালের দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এর ফলে বিমানের প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হাতছাড়া হবে।

মন্ত্রী বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের সেবা আন্তর্জাতিক মানের করতে সরকার বদ্ধপরিকর। এই স্পেশালাইজড কাজটা রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় সংস্থার চালানো খুব কঠিন কাজ।  

ইতোমধ্যে, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং ও কার্গো সার্ভিসের দায়িত্ব পেয়েছে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ডানাটা’।

এ বিষয়ে সম্প্রতি একই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, আধুনিক মানের বিমানবন্দর এবং সেবার মান নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার, তাই করব। বিমান আমাদের একটা রাষ্ট্রীয় সংস্থা। এটার প্রতি আমাদের সফট কর্নার সব সময়ই থাকবে।

অন্যদিকে, কাজ পেতে চাইলে বিমানকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের চাহিদা অনুযায়ী সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মুফিদুর রহমান।  

তিনি বলেন, সেবার মান কি হবে, যারা সেবা দেবে তাদের কি পরিমান ইক্যুইপমেন্ট থাকতে হবে, জনবল থাকতে হবে, কি পরিমাণ প্রফিট হবে, কি পরিমাণ রেভিনিউ হবে এবং সিভিল এভিয়েশন কি পরিমাণ পাবে, তা যদি বিমান বাংলাদেশ ফুলফিল করতে পারে, তাহলে কাজ পাবে। অন্যথায় অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে। আমরা সেবার মান নির্ধারণ করে দেব। যারা সেটা নিশ্চিত করবে, তারাই দায়িত্ব পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২
এমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।