প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধা-১ আসনে নিজ দলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। বিতর্কিত এই এমপি বর্তমানে পলাতক।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশটি ইতিবাচক নি:সন্দেহে। এমপি লিটন একটি শিশুর দু’পায়ে গুলি করে ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি করেছেন। তার ‘ট্রিগার হ্যাপি’ মানসিকতা দল ও সরকারকে সমালোচিত ও বিব্রত করেছে। দল ও সরকারের ভাবমূর্তি হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের ইতিবাচক অর্জনকে করেছে ম্লান।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠেও এ-নিয়ে ক্ষোভ ঝরেছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক মন্ত্রী জানান, এ-ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী খুবই মর্মাহত। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কিছু ব্যক্তির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সারাদিনে ভালো যা কিছু অর্জন করছে, বিকেলে সেই অর্জন ধ্বংস করছে বিতর্কিত কিছু লোক। তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের অপকর্মের দায় সরকার নেবে না। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ খুবই সময়োচিত ও যথার্থ। এমপি লিটন এর আগেও নিজের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ার ঘটনা একাধিকবার ঘটিয়েছেন। জনবান্ধব হওয়ার, জনগণের সমর্থন ও ভালোবাসা অর্জনের বদলে বন্দুকের নলকেই তিনি প্রিয় ভেবেছেন। তিনি হয়ে উঠেছেন ‘ট্রিগার হ্যাপি’ এমপি। এই বিপজ্জনক স্বভাব জননন্দিত করার বদলে তাকে বরং করেছে জননিন্দিত।
বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে নিরীহ সাধারণ মানুষকে আহত, ভীত-আতঙ্কিত তিনি আগেও করেছেন। নির্বাচনী এলাকায় বরাবরই নিন্দিত-সমালোচিত তিনি। পত্রিকান্তরে এর আগেও তার মাতলামির প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। মাতাল অবস্থায় যাত্রাদলের মঞ্চে উঠে সেখানে চলমান অশ্লীল নৃত্যে অংশ পর্যন্ত নিয়েছেন তিনি। এসবই তার নিম্নরুচির পরিচায়ক।
দেশে বেশ কিছু শিশু-নির্যাতন ও শিশুখুনের ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে। এ-অবস্থায় এমপি লিটনের মতো মানুষদের শিশুদের সুরক্ষা দেবার কথা। অথচ তিনি নিজেই হলেন শিশু-নিপীড়ক। এর আগেও সরকারি দলের এবং সরকারের সমর্থক ছাত্র ও যুব সংগঠনের কারো কারো অপকর্ম সরকারকে বিব্রত সমালোচিত করেছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা, মাগুরায় মায়ের পেটে শিশুকে গুলিবিদ্ধ করার ঘটনা, বিশ্বজিৎকে পুলিশের সামনে কুপিয়ে হত্যা---এরকম অসংখ্য পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে। একটির রেশ না ফুরাতেই আরেকটি। চরম নেতিবাচক এসব ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করেছে। সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করেছে। ক্ষোভ, হতাশা ও ভীতির জন্ম দিয়েছে। এমপি লিটন অপকর্মের সেই বিপজ্জনক রিলে রেসেই নিজের নামটা লেখালেন।
সরকার ঘরে ও বাইরে নানা সমস্যায় বিব্রত। মেডিক্যালের প্রশ্নফাঁসের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্তরের শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। গুলশানে ইতালীয় নাগরিক হত্যা, গাইবান্ধায় জাপানি নাগরিককে হত্যার ঘটনায় বিব্রত সরকার। ঠিক এমন সময়ই এমপি লিটন নিজের খল চেহারাটি দেখালেন। যে ক্ষমতা তাকে এতোটা বলদর্পী করেছে, তা জনগণই তাকে দিয়েছে। জনগণের দেওয়া ক্ষমতাকে তিনি জনগণের হিতসাধনে ব্যয় করেন নি। বরং দল ও সরকারের জন্য দুষ্ট ক্ষতের ভূমিকাই পালন করলেন।
দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন---কথাটার বাস্তবমূল্য এদেশে খুব একটা নেই। বরং মুষ্ঠিমেয় দুষ্টের দৌরাত্ম্যে বিপুল অধিকাংশ মানুষের জীবন বিপন্ন। কম ক্ষেত্রেই অন্যায়ের প্রতিকার মেলে। দীর্ঘকাল প্রতিকারহীন থাকলে অন্যায় সমাজে শেকড় গেঁড়ে বসে। এটা কারোরই জন্য ভালো ফল বয়ে আনে না। বরং তা এক সময় বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমপি লিটনের ব্যাপারে যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন তা যেন ঠিকভাবে প্রতিপালিত হয়। আড়াল থেকে তাকে রক্ষার চেষ্টা যেন করা না হয়।
এক্ষেত্রে চাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষতা। অপকর্মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি সরকারের ভাবমূর্তিকেই উজ্জ্বল করবে। মানুষের মনে আস্থা ফেরাবে। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে?
বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৫
জেএম/জেডএম