শ্রদ্ধেয় পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ মন্তব্য আপনারই। বুধবার সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলনের দ্বিতীয়দিনের তৃতীয় অধিবেশনে আপনার কাছ থেকে কথাগুলো শুনে নতুন করে প্রশ্ন জাগছে, তাহলে বন্যার সংজ্ঞা কী।
হাওরের ক্ষত এখনও দগদগে। উত্তরাঞ্চলের মানুষ সেই কবে থেকে পানিতে ভাসছে। চট্টগ্রামে ঢল, পাহাড় ধস। চলতি আষাঢ়-শ্রাবণের বর্ষণে বলা যায়, গোটা দেশই এখন পানির নিচে। চরম মানবিক বিপর্যয়ের কথা কোনো খবরই কি আপনার দৃষ্টিগোচর হয় না? নাকি ধর্তব্যের মধ্যেই ধরেন না?
বিচ্ছিন্নভাবে এখানে-ওখানে মানুষ একেবারে মারা যায়নি তাও তো নয়। এ প্রসঙ্গে কবীর সুমনের একটি গানের লাইন মনে পড়ে, ‘কতো হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে’। শ্রদ্ধেয় মন্ত্রী, আপনার সংখ্যাটি কতো?
অবশ্য আপনি দেশীয় রাজনীতির পরম্পরা অক্ষুন্ন রেখে অতি নিপুণতার সঙ্গে নিজের দায় এড়িয়েছেন। বলেছেন, ‘ডিসিরা বন্যার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তারা নদী ভাঙন রোধ নিয়ে আলোচনা করেছেন’। আমাদেরই ভুল, আপনার দায়িত্বের গণ্ডি সম্পর্কে আমাদের ধারণা ছিলো না। আপনি সেটি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
আরও বলেছেন, ‘এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় যে পানি বেড়েছে তা মূলত বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার পানি। আমাদের দেশে সাধারণত বন্যা হয় আগস্ট মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে। কিন্তু এবার যেটা হয়েছে তা মূলত বৃষ্টি ও অতিবৃষ্টির ফল। ইতোমধ্যে অন্য বছরের তুলনায় দুই-তিন গুণ গুণ বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে’।
এবং আপনি আশঙ্কাও করেছেন আগস্টে বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা তাহলে অপেক্ষা করি বন্যা হয় কিনা। আপনার ব্যাখা অনুযায়ী, মানুষ মারা যাওয়া জরুরি, সেটির জন্যও অপেক্ষা করা যেতে পারে।
আপনার সুন্দর এই ব্যাখ্যাটির মাধ্যমে আমরা জলাবদ্ধতার সামন্য ধারণা পেয়েছি। বড় ভালো হতো, একই সঙ্গে যদি বন্যার সংজ্ঞাটিও দিয়ে দিতেন। তাহলে হাওর ও উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি একটু মিলিয়ে নিতাম। একই সঙ্গে সারাদেশে চলমান এ ‘জলাবদ্ধতা’র ব্যাপারটিও বুঝতে সুবিধা হতো।
বন্যার সংজ্ঞা আমরা বইপড়ে ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যা জেনেছি, পানির উচ্চ প্রবাহ, যা কোনো নদীর প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম তীর অতিক্রম করে আশপাশের সমভূমি প্লাবিত করার মাধ্যমে জনমানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ালে তাকে বন্যা বলে। বন্যা মৌসুমী, আকস্মিক বা জোয়ারসৃষ্ট— প্রধানত এই তিন শ্রেণির হতে পারে।
আপনি পানিসম্পদ মন্ত্রী, এই তিন শ্রেণির বন্যার ব্যপ্তি ও রূপরেখা নিয়ে আপনি নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ে ভালো জানেন। সেইসঙ্গে আপনি হাটহাজারীর মানুষ। চট্টগ্রামের পাহাড়ি ঢল সম্পর্কেও আপনার সম্যক ধারণা থাকার কথা। আপনার নিজের উপজেলা যেখানে প্লাবিত, সেই জায়গা থেকে আপনার বন্যার সংজ্ঞাটি যদি জানিয়ে দিতেন এবং আমরা যেটি জানি সেটি কোথায় ভুল তা যদি ধরিয়ে দিতে তাহলে আমাদের চোখ আর কপালে উঠতো না।
আগস্টে বন্যার আশঙ্কা থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থেকে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বন্যার আগে বাঁধগুলো মেরামত করার নির্দেশ দিয়েছেন এটি অবশ্যই প্রশংসনীয়।
পাশাপাশি ‘আমরা তাদের বলেছি, এখন থেকে মন্ত্রণালয়ের যে বরাদ্দ থাকে তার অর্ধেক ব্যয় করবো নদী শাসন কাজে। এ কাজ করতে ডিসিদের কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছি’— এটিও প্রশংসার দাবি রাখে।
শুধু ওই একটি বিষয়, বন্যা ও জলাবদ্ধতার সংজ্ঞা!
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৭
এসএনএস