ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

৪১ ব্যাচের সমন্বয়ে বিটিআরআই স্কুলে ‘পুনর্মিলনী’ অনুষ্ঠিত

  বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
৪১ ব্যাচের সমন্বয়ে বিটিআরআই স্কুলে ‘পুনর্মিলনী’ অনুষ্ঠিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা হয়ে গেল শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ‘ছড়িয়ে দিয়েছি তবু জড়িয়ে থাকি, স্মৃতি বাঁধন অটুট রাখি’ স্লোগানকে ধারণ করে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা হয়ে গেল শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। বন্ধুত্বের চিরকালীন সুর প্রতিধ্বনিত হয়েছে নবীন-প্রবীণের এই দিনব্যাপী উৎসবে।

 
 
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিটিআরআই) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠা হয়।  
 
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) বিদ্যালয়ের সম্মুখমাঠের বিশাল মঞ্চে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা এবং সাদা কবুতর উড্ডয়নের মাধ্যমে শুরু হয় ‘প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন। প্রধান অতিথি বক্তব্যের পর দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।  

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) পরিচালক ড. একেএম রফিকুল হক।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিটিআরআই স্কুলটির পথ চলা শুরু হয় ১৯৬১ সালের শেষের দিকে। প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবেই এর যাত্রা শুরু হয়। ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কোনো সুযোগ ছিল না। প্রায় জনমানবহীন কাঁচারাস্তা দিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শ্রীমঙ্গলের কোনো স্কুলে যাওয়া ছিল রীতিমত উদ্বেগজনক এবং দুঃসাহসিক ব্যাপার। এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন বিটিআরআই কর্মরত তৎকালীন শিক্ষানুরাগী একাধিক কর্তাব্যক্তিরা। ১৯৬২ সালের কাঁচাঘর নির্মাণের মাধ্যমে বিটিআরআই স্কুলটির অনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
 
আরও জানা যায়, ১৯৮৬ সালের কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এই বিদ্যালয়ের মোট ১১জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ১১জনের মধ্যে ১০জনই স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে এবং ১জন দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিল। তখন থেকে এই বিদ্যালয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে সংশ্লিষ্ট সবার নজরে আসে।
 
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিটিআরআই স্কুলের ‘পুনর্মিলনী’ অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে নবীন-প্রবীণ শিক্ষার্থীদের বিশাল মিলনমেলা। পাকা সড়কটি রাঙানো হয়েছে চমৎকার সব বাহারি রঙের আল্পনায়। প্রবেশমুখেই ছিল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনীর চমৎকার লোগো সম্বলিত বিশাল একটি বিলবোর্ড। শিক্ষার্থীরা একক, দ্বৈত এবং সম্মিলিতভাবে এখানে আলোকচিত্র ধারণ করে স্মরণীয় এ দিনটিকে স্মৃতিকোণায় ধরে রাখছেন। পুরো মাঠজুড়েই ছিল এখানে-ওখানে ছড়িয়ে থাকা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের বৃত্তাকার আড্ডা। প্রত্যেক রেজিস্ট্রেশনকারীকে দেওয়া হয় একটি সুদৃশ্য চটের ব্যাগ, আকর্ষণীয় টি-শার্ট, চেস্টকার্ড এবং একটি প্রকাশনামূলক বই।
 
প্রাক্তন শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের ১৪ সদস্য বিশিষ্ট আয়োজক কমিটির মুখপাত্র তহিরুল ইসলাম মিলন বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রথম এসএসসি ব্যাচ ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু করে ২০২১ সালের এসএসসি ব্যাচসহ মোট ৪১ ব্যাচের ৫৭০জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী এ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। সবাই এসেছেন। এমন একটি অনুষ্ঠান করতে পেরে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
 
প্রাক্তন শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আসা এসএসসি ১৯৯৩ ব্যাচের বাপ্পাদিত্য চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এই বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের কত স্মৃতি জড়িত। এখানে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগদান করে পুরাতন সহপাঠীদের সেসব নানান স্মৃতিগুলোর আমরা স্মৃতিচারণ করছি। শুধু আমাদের সহপাঠীদের স্মৃতিচারণই নয়, আমরা আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কথাও প্রসঙ্গক্রমে আলোচনা করেছি। একটু আগেই আমি আমাদের বিদ্যালয়ের এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জুয়েল মাজহার স্যারের কথা আমার প্রাক্তন এক সহপাঠীকে বলছিলাম।  
 
সিলেট থেকে এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া জুলিয়া সিদ্দিকা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, একটি দিন স্কুল জীবনের সব বন্ধুরা একত্রিত হওয়া অপ্রত্যাশিত একটি ব্যবহার ছিল। এই সম্ভব ব্যাপারটি সম্ভব হয়েছে আয়োজকদের জন্য। তারা যদি এই আয়োজনটুকু না করতেন তাহলে আমরা সব বন্ধুরা সারাদেশ থেকে শ্রীমঙ্গলে এসে একত্রিত হতে পারতাম না।  
 
প্রাক্তন শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের গৌরবময় আকর্ষণ এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সম্মাননা। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় আকর্ষণীয় ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র এবং গায়ে পড়ার শাল। প্রাক্তন এবং বর্তমান মোট ৪১ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে সম্মাননা গ্রহণ করেন শামসুল হক, মো. শাহ আলম, গৌরীবালা গোপ, দীজেন্দ্র লাল সিংহ, সাইফুল ইসলাম, জগদীশ গোস্বামী, হোসনে আরা বেগম, রীতা দত্ত প্রমুখ।   
 
মধ্যাহ্নভোজ শেষে চলে মঞ্চে স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান। মাঠজুড়ে গুচ্ছগুচ্ছ দলীয় আড্ডা। মঞ্চতে বিরতিহীনভাবে চলে প্রাক্তন এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও মূল আকর্ষণ হিসেবে ছিল জিবাংলার ‘সারেগামাপা’-এর আলোচিত শিল্পী নোবেলের গান এবং মিঙ্গেল ব্যান্ডদলের পরিবেশনা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২২
বিবিবি/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।