ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বাকৃবির ভিসির বিরুদ্ধে ৯ অভিযোগে তোলপাড়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
বাকৃবির ভিসির বিরুদ্ধে ৯ অভিযোগে তোলপাড়

ময়মনসিংহ:  বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভিসি (উপাচার্য) প্রফেসর ড. লুৎফুর হাসান মন্টুর বিরুদ্ধে নয়টি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।  

এ ঘটনায় ৬০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বাইরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার সমর্থিত গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম একাংশের সভাপতি প্রফেসর ড. এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাস স্বাক্ষরিত একটি লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনুপ্রবেশকারী, অসৎ ও আদর্শহীন ব্যক্তি দ্বারা প্রশাসন পরিচালনা করা, শিক্ষা ক্ষেত্রে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা, ৬৬৯ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প প্রপোজাল (ডিপিপি) বাস্তবায়নে ব্যর্থতা, নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে ক্যাম্পাসে ভিসির অনুপস্থিতি, ডিজিটাইজেশন ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) পিছিয়ে থাকা, বাসভবন ব্যবহারে ক্ষমতার অপব্যবহার, বাসা বরাদ্দে অনিয়ম, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামে বিভক্তি সৃষ্টি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিপি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার বলেন, অযাচিত হস্থক্ষেপ ও অদক্ষ প্রশাসনের কারণে ৬৬৯ কোটি টাকার উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। অথচ এ পর্যন্ত কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র সাত ভাগ কাজ। এখন তারা ব্যর্থতা ঢাকতে রিভাইসের আবেদন করেছে, কিন্তু একনেকে তা পাস হবে কিনা সন্দেহ।

তিনি আরও বলেন, আগের ভিসি এ বরাদ্দ এনে দিয়েছিলেন। তিনি পরিকল্পনাও করে গেছেন। কিন্তু তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন এ ভিসি। অথচ দক্ষ প্রশাসনের কারণে একই ধরনের প্রকল্প এগিয়ে রয়েছে দেশের অন্যান্য সব বিশ্ববিদ্যালয়।

সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নেই উল্লেখ করে প্রফেসর ড. এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার বলেন, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপর্যয় চলছে। সেই সঙ্গে ভিসির ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে সীমাহীন।

একই ধরনের বক্তব্য গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম একাংশের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলামের।  

তিনি বলেন, গত তিন বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের কোনো নির্বাচন দেওয়া হয়নি। সব চলছে জরুরি সভা দিয়ে। সময়মতো পিএইচডি ডিগ্রি না দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিগত পৌনে চার বছরে ক্যাম্পাসে ভিসির উপস্থিতি ছিল সর্বনিন্ম। টানা পাঁচ মাস ছিলেন দেশের বাইরে। অথচ ভিসি নিয়োগপত্রে ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক উপস্থিতি অত্যবশ্যকীয়।

 এছাড়াও অদক্ষ প্রশাসনের কারণে বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তিতে (এপিএ) সারাদেশের মধ্যে বাকৃবির অবস্থান বর্তমানে ৪০ এর পরে। এটা ঐতিহ্যবাহী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুঃখজনক, যোগ করেন তিনি।  
 
তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ নয়। আমাদের অভিযোগ অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতা অপব্যবহারের বিরুদ্ধে। এসব বিষয় সরকারের উচ্চ পর্যায়েও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করছি, তদন্ত করলে এসবের প্রমাণ মিলবে।  

তবে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম অপর অংশের দাবি ভিসির পক্ষে। তাদের দাবি, ভিসির বিরুদ্ধে উত্থাপিত নয় অভিযোগের পক্ষে সঠিক বা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।  

ফলে এসব অভিযোগ কয়েকজনের মনগড়া তথ্য বলে দাবি করেছেন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম অপর অংশের সভাপতি প্রফেসর ড. আবু হাদী নূর আলী খান।

তিনি বলেন, যারা এসব অভিযোগ করছেন, তারা আগের ভিসির সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোভনীয় পদের দায়িত্বে ছিলেন। তারা রাজনৈতিকভাবে বাম ঘরনার হলেও তাদের কর্মকাণ্ড সরকার বিরোধীদের মতো। মূলত আসন্ন শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভরাডুবির ভয়ে তারা এসব করছেন।

এ সময় তিনি ভিসির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, সহধর্মিনীর অসুস্থতার কারণে ভিসি স্যার ছুটি নিয়ে পাঁচ মাস ভারতে ছিলেন। এর আগে তিনি ক্যাম্পাসেই ছিলেন। তবে মাঝে মাঝে সরকারি কাজে ঢাকায় যাওয়া আসা করেছেন। এটা স্বাভাবিক বিষয়।

এছাড়া ভিসির বাসভবনটি ৫০ বছরের পুরোনো। এর ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। বর্তমানে এ ভিসি ভবন মেরামত করতে টাকা প্রয়োজন ৪০ লাখ। এ কারণে ভিসি স্যার ওই ভবনে মাঝে মাঝে অফিস করেন। তবে বসবাস করেন একজন প্রফেসর হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া বাসায়।

তবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে সামনে রেখে এ অভিযোগগুলো করা হয়নি বলে দাবি করেছেন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম একাংশের সভাপতি প্রফেসর ড. এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাস।

তাদের দাবি, এসব অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে। এতে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন বা জয় পরাজয়ের কিছু নেই। মূলত অভিযোগ ধামাচাপা দিতেই তারা উল্টাপাল্টা বলছেন।

সূত্র মতে, ভিসির পক্ষে বিপক্ষে সরকার সমর্থিক গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম অবস্থান নিলেও নিরব বিএনপিপন্থি শিক্ষক সংগঠন সোনালি দল। তারা ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগে এখন নিরব দর্শক। এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি পাওয়া যায়নি।  

এদিকে উত্থাপিত এসব অভিযোগের বিষয়ে বাকৃবির ভিসি  প্রফেসর ড. লুৎফুর হাসান মন্টু বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি নেই, যতটুকু হয়েছে, তা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। তবে ডিপিপি বাস্তবায়নে ২০১৪ সালের মূল্য অনুসারে (রেইট) প্রকল্প হয়েছিল। সেই রেইটের সঙ্গে ২০১৮ সালের রেইটে শতকরা ২১ ভাগ ব্যবধান। এখন ২০২২ সালের রেইটে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একনেকে পাস হলেই ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, এ জন্য সময়ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ৬৬৯ কোটি টাকার কাজের রেইট বেড়ে হবে নয়শত কোটির মতো।    

এছাড়া দুই ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ জন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় মেধার ভিত্তিতে। এসব নিয়োগে আমার কোনো স্বজন বা আত্মীয় নেই। তাছাড়া মিটিং বা ইউজিসিসির কাজ ছাড়া আমি কখনো ঢাকা যাই না। যেতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে। তাদের বিশেষ অনুদানে সুলতানা রাজিয়া ও রোজি জামাল হল হয়েছে, যোগ করেন তিনি।  

সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি নেই দাবি করে ভিসি আরও বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতির নিয়মে আগামী ৩১ জানুয়ারির আগে নবীণদের ক্লাস শুরু করার সুযোগ নেই। তবে করোনার কারণে আমরা একাডেমিকভাবে কয়েক মাস পিছিয়ে আছি, তা কাভার করার চেষ্টা চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।