ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভিসি-রেজিস্ট্রারের ছবিসহ পোস্টার ছাপিয়ে ফাঁসি দাবি, অধ্যাপক বরখাস্ত

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
ভিসি-রেজিস্ট্রারের ছবিসহ পোস্টার ছাপিয়ে ফাঁসি দাবি, অধ্যাপক বরখাস্ত বরখাস্ত হওয়া অধ্যাপক মো. মেহেদী হাসান

পটুয়াখালী: পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ভিসি, রেজিস্ট্রার ও কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পোস্টার ছাপানোর অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর মো. মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে।

পোস্টারে ফাঁসির রশির ছবি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র দেবাশীষ হত্যার বিচার চাওয়া হয়েছে।

 

এমন পোস্টার ছাপিয়ে রীতিমতো আলোচনায় এসেছেন এই শিক্ষক। আর এমন পোস্টার ছাপানোর অভিযোগে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্তও হয়েছেন অধ্যাপক মেহেদী হাসান।  

যদিও মেহেদী হাসানের দাবি, তিনি এই পোস্টার ছাপানোর সঙ্গে জড়িত নন।

পোস্টারে দাবি করা হয়, ‘২০১৮ সালের ১৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী দেবাশীষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেন। সে হিসেবে এটি আত্মহত্যা নয়; দেবাশীষকে একরকম খুন করা হয়েছে। ’ 

পোস্টারে ‘হত্যাকারীদের’ প্রশ্রয়দাতা বর্তমান ভিসি ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবিও করা হয়।

পোস্টারগুলো অধ্যাপক মেহেদী হাসানই ছাপিয়েছেন বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মুকিতের। পোস্টারগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ নাকি অধ্যাপক মেহেদী হাসান দিয়েছিলেন তাকে।  

এ বিষয়ে মো. মুকিত বলেন, সেদিন রাতে আমাকে মেহেদী স্যার বলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িতে একটি প্যাকেট আসবে। আপনি উপজেলার গেট থেকে প্যাকেটটি নামিয়ে নেবেন। আমি ব্যস্ত থাকায় আমার এক নিরাপত্তা কর্মীকে দিয়ে প্যাকেটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নামিয়ে রাখি। সকালে যখন প্যাকেটটি খুলি তখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়রে ভিসি স্যার এবং রেজিস্ট্রার স্যারের ছবি দিয়ে পাশাপাশি তিনজন শিক্ষকের ছবিতে ফাঁসির রশি দিয়ে পোস্টার করা হয়েছে। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করে এমন একটি পোস্টার লাগাতে পারি না। তাৎক্ষণিক আমি রেজিস্ট্রার স্যারকে জানাই। রেজিস্ট্রার স্যার পোস্টার দেখার পর জানতে চাইলে আমি তাকে পুরো বিষয়টি বলি। এ সময় যে নিরাপত্তাকর্মী পোস্টার গাড়ি থেকে নামিয়েছেন, গাড়ির চালক এবং বরিশালের যে প্রেস থেকে ছাপানো হয়েছে সবার সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কথা বলেছে এবং বিষয়টি তখন প্রমাণ হয় যে মেহেদী স্যার পোস্টারগুলো আনিয়েছেন।

এদিকে পোস্টার সংক্রান্ত আলোচনার মধ্যে নতুন অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষক নিয়োগে যথাযথ যোগ্যতা না থাকলেও অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন মেহেদী হাসান।  

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের যে যোগ্যতা নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী মেহেদী হাসানের সিজিপিএ অনেক কম ছিল।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১০ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক (নন টেকনিক্যাল) পদে চাকরি পান মেহেদী হাসান। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এতে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট অনুষদে স্নাতক ডিগ্রির অধিকারী হতে হবে। শিক্ষা জীবনে সকল স্তরে প্রথম বিভাগ/শ্রেণি থাকতে হবে। পাশাপাশি প্রার্থীর জিপিএ/সিজিপিএ ৪ এর জন্য কমপক্ষে ৩.৭৫ হতে হবে। তবে শিক্ষক মেহেদী হাসানের সিজিপিএ ২.৯৫। এর পরও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

পোস্টারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন , ২০১৮ সালে যখন দেবাশীষ আত্মহত্যা করে। সে সময় আমি কোনো দায়িত্বে ছিলাম না। আর আমি দেশের বাইরে অবস্থান করছিলাম। তাই কি কারণে আমার ছবি ব্যবহার করে পোস্টারর ছাপানো হয়েছে তা হয়ত তিনি (মেহেদী হাসান) বলতে পারবেন।  

তিনি আরও বলেন, এ কারণে গত ২৮ মে ভিসি স্যারের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাংগুয়েজ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রফেসর মো. মেহেদী হাসানকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ১২ (১) এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সাধারণ আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধিমালা ৯(১) মোতাবেক চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

যোগ্যতা না থাকলেও মেহেদী হাসানো কীভাবে শিক্ষক নিয়োগ পেলেন জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, ‘তাকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তখন যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এ বিষয়ে বলতে পারবেন। তবে এ বিষয় অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব। ’ 

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড.স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘দেবাশীষ আত্মহত্যার বিষয় কারো কোন অভিযোগ নেই। আমি সে সময় (২০১৮ সালে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্বে ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে রেজিস্ট্রার কোনোভাবেই জড়িত থাকে না। ’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাময়িক বরখাস্ত শিক্ষক প্রফেসর মেহেদী হাসান বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। আমি ওইসব পোস্টার ছাপানোর সঙ্গে জড়িত নই। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে সাময়িক বরখাস্তের যে চিঠি দিয়েছে তাতে পোস্টার ছাপানোর বিষয়টি স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়নি।

সিজিপিএ কম থাকার পরও কীভাবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রশ্নে মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রাশাসন আমাকে যোগ্য মনে করেছে বিধায় নিয়োগ দিয়েছে। এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।