ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবিতে বিভক্ত ছাত্রলীগ!

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১২
জাবিতে বিভক্ত ছাত্রলীগ!

জাবি: অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগ ও মূলধারা ছাত্রলীগে বিভক্ত হয়ে তারা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মকা- চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।



অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির উপাচার্য থাকার সময় মূলধারার ছাত্রলীগ নিস্ক্রিয় থাকলেও সক্রিয় ছিল উপাচার্যপন্থি সে সময়ের ছাত্রলীগ।

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ১৯ মে রাশেদুল ইসলাম শাফিনকে সভাপতি ও নির্ঝর আলম সাম্যকে সাধারণ সম্পাদক করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার কমিটি গঠিত হয়।

নির্দ্দিষ্ট একটি অঞ্চলের নেতাকর্মীরা ওই কমিটিতে পদ না পাওয়ায় কমিটিকে তারা বিতর্কিত করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালায় বলে সে সময় অভিযোগ করেছিলেন কমিটিতে পদ পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা।

পরবর্তীতে ২০১০ সালের ২৩ মে গভীর রাতে তৎকালীন উপাচার্যপন্থি ছাত্রলীগ নেতা সরকার মো. আজগর আলী গ্রুপের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাশেদ রেজা ডিকেনের ওপর হামলা করেন।

এ ঘটনায় রাশেদ রেজা ডিকেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজও সে বিচার করতে পারেনি।

উপরোন্তু রাশেদ রেজা ডিকেন আশুলিয়া থানায় মামলা করতে গেলে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবিরের প্রভাবের কারণে আশুলিয়া থানা সে মামলা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ ডিকেনের।

পরবর্তীতে তিনি হামলার সঙ্গে জড়িত মওলানা ভাসানী হলের উপাচার্যপন্থি ছাত্রলীগ নেতা এবং ৩৩তম ব্যাচের আজগর আলী, জাকির হোসেন, ৩৪তম ব্যাচের বায়োজিদ হাসান সোহান, ৩৬তম ব্যাচের শাকিল, মাহাতাব মেহেদী স¤্রাট, ৩৭তম ব্যাচের ফেরদৌস, উল্লাস, রানা ও রাজকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন।

সে মামলায় আদালতে আত্মসমর্পন করতে গেলে শাকিল, সম্রাট, উল্লাস ও রাজকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। পরে তারা জামিনে বেরিয়ে আসেন।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সহসভাপতি রাশেদ রেজা ডিকেন বলেন, ‘তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির তার নিজস্ব বাহিনীকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য মূলধারার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। ’

তিনি বলেন, ‘২ বছর মূলধারার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হলেও তার পদত্যাগের পর আবার জেগে উঠেছেন মূলধারার ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। ’

২০১০ সালের ৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলে ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ বাঁধে। সে সময় ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় সংগঠনের জাবি শাখার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম শাফিন ও সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলম সাম্যসহ কমিটির অন্যান্য নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করে তৎকালীন প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ জাবি শাখার সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত করে।

পরে অধ্যাপক শরীফ তার পছন্দ মতো কিছু নেতাকর্মীকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় করেন এবং মূল ধারার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক বহিস্কার হওয়ার পর ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলেও ক্যাম্পাসের ভেতরে তাদের পক্ষে থাকা নেতাকর্মীদের নিস্ক্রিয় করে দেন।

কমিটিতে কোনো পদ না থাকলেও জাবি ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নীতিনির্ধারক হিসেবে উপাচার্যের মদদপুষ্টদের সব সময় দেখা যায়।

পরে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরপন্থিরা প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন।

২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের ‘নির্দেশে’ তৎকালীন প্রক্টর আরজু মিয়া শামীম-শরীফ গ্রুপকে বঙ্গবন্ধু হলে পুনর্বাসিত করতে যান। ওই সময় শরীফের কোমর থেকে অস্ত্র পড়ে গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রক্টরসহ তাদের ধাওয়া করেন।

পরে ওই রাতেই পুলিশি পাহারায় উপাচার্যপন্থি সন্ত্রাসী গ্রুপকে হলে ওঠানো হয়। বিতাড়িত হন শতাধিক শিক্ষার্থী। বিতাড়িত শিক্ষার্থীদের একজন ছিলেন জুবায়ের আহমেদ, যিনি পরবর্তীতে ছাত্রলীগের এ অংশের হাতেই খুন হন।

এদিকে, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরপন্থি ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়ে পরের দিন নিহত হন।

এ ঘটনার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখলে রাতে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে উপাচার্যকে বের করে নিয়ে আসে উপাচার্যের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীর বিভিন্ন দিবসে তৎকালীন উপাচার্য তার মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

‘এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নামে মিছিলকারী ও হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কেউ নয়, তারা সন্ত্রাসী। ওই সব সন্ত্রাসীরা ছাত্রলীগের কোনো পর্যায়েরই কর্মী বা সমর্থক নয়। এসব সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো যোগাযোগ নেই’- এ ধরনের বক্তব্য দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।

ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ওই বার্তায় বলা হয়, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বারবার তারা ছাত্রলীগ নয় বলা হলেও এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা।

তারা তাদের ব্যর্থতার দায়ভার কোনোভাবেই ছাত্রলীগের কাঁধে দিতে পারেন না। ছাত্রলীগ শিক্ষাঙ্গনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে এসব সস্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছে।

ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর নামের সঙ্গে গণমাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বা সমর্থক না ব্যবহারেরও অনুরোধ জানানো হয়।
 
পরবর্তীতে ১৭ মে অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করার পর ক্যাম্পাসে মূল ধারার ছাত্রলীগ সক্রিয় হয়। এরপর অধ্যাপক শরীফ পদত্যাগের পর আবার সক্রিয় হয় মূল ধারার ছাত্রলীগ।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলম সাম্য বাংলানিউজকে বলেন, ‘যারা ছাত্রলীগের নীতি ও আদর্শে বিশ্বাস করেন না, তারা কখনোও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারেন না। ক্যাম্পাসে যারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম করছে, তারা কখনো ছাত্রলীগ করতে পারে না। কারণ, ছাত্রলীগ কখনও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দেয় না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১২
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।