ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দারিদ্র্য ঠেকাতে পারেনি ওদের সাফল্য

টিএম মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১২

বগুড়া: বাবা রিকশাচালক, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন, কোনোরকমে দিন চলে। ছেলেকে বাড়তি কোনো প্রাইভেট বা কোচিংয়ে পড়ানোর সুযোগ হয়নি রিকশাচালক বাবার।



তবু থেমে ছিল না সন্তান রাজিব হাসানের লেখাপড়া। এক ভাই ও এক বোনের সংসারে মা-বাবার আশির্বাদ এবং স্কুল শিক্ষকদের সহযোগিতায় গোল্ডেন-এ প্লাস পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে।

চলতি বছর অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় জেলার শেরপুর ডি.জে. হাইস্কুল থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে রাজিব হাসান।

বাবা মো. আনিসুর রহমান ও মা হাফিজা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, পরীক্ষায় ভালো ফল করলে যে সাংবাদিক বাড়িতে আসেন, তা আগে জানা ছিলনা।

সন্তান বড় হওয়ার জন্য টাকা যাতে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, তার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।

রাজিব বাংলানিউজকে জানান, তার স্কুলের শিক্ষক বিপ্লব, সোহেলীসহ অন্যান্য স্যারের সহযোগিতায় দৈনিক ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পড়ালেখা করে সে এই সাফল্য পেয়েছে।

তবে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য মা-বাবাকেই সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দিতে চায় সে।

মা অসুস্থ বলে বড় হয়ে ভালো ডাক্তার হতে চায় রাজিব। মায়ের চিকিৎসার মধ্যি দয়ে সে তার চিকিৎসা জীবন শুরু হরতে চায়।      

অন্যদিকে, মাত্র ২ বছর বয়সে বাবা ও ৪ বছর বয়সে মাকে হারিয়ে রাজ্জাকের ঠাঁই হয় রিকশাচালক বৃদ্ধ নানা মোজাফফর রহমানের বাড়িতে।

এক সময় নানা অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজ্জাককে সংসারের হাল ধরতে হয়। তারপরও এবারের দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

রিকশা চালিয়ে পেটের ভাত যোগাড় করে অতিকষ্টে লেখাপড়া করে  দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

রাজ্জাক বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর উত্তরপাড়া দাখিল মাদ্রসার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। সে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে ভবিষ্যতে একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হতে চায়।

মাদ্রাসার সুপার জাহেদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চেষ্টা অব্যাহত থাকলে এবং অনুকূল পরিবেশ পেলে রাজ্জাক অবশ্যই একদিন বড় হতে পারবে।

প্রায় একই অবস্থা উপজেলার চকলোকমান খন্দকার পাড়ার হতদরিদ্র হোসনে আরার।

উপজেলার বেজোড়া উচ্চ বিদ্যালয় মানবিক বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে সে।

২য় শ্রেণিতে লেখাপড়া অবস্থায় বাবা আলীমুদ্দিন মারা যান। ১ ছেলে ও ৪ মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েন বৃদ্ধা মা আফরোজা বেওয়া।

সংসার চালাতে হোসনে আরার একমাত্র ভাই কাঠমিস্ত্রির কাজ শুরু করে। লেখাপড়ার সুযোগ তো দূরের কথা, পেটের ভাত আর পরনের কাপড় পরাই দায় হয়ে দাঁড়ায় তাদের।

প্রাথমিকের গণ্ডি না পেরুতেই শ্বশুরবাড়ি যেতে হয় তার ৩ বোনকে। কিন্তু, শত বাধা পেরিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে না বসে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে ওঠে হোসনে আরা।  

একই বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষার্থী বেজোড়া মুন্সিপাড়ার আল আমিন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে।

উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় সে। কিন্তু হতদরিদ্র রিকশাভ্যান চালক বাবা বাচ্চু মিয়া কি পারবেন তার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ জোগাতে?

অর্থাভাবে লেখাপড়া ছেড়ে তার বড় ভাই দিন মজুরের কাজ করছেন। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে বোন বিউটিকে যেতে হয়েছে শ্বশুর বাড়ি। নিরুপায় হয়ে ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে মা রোকেয়া বেগম পরের বাড়িতে আয়ার কাজ করছেন।  

অপরদিকে, উপজেলার রানীরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে দিনমজুর তাহেরুল ইসলামের ছেলে মাহবুবুর রহমান।

দারিদ্র্যের কারণে বিদ্যালয়ের বেতনাদি ঠিকমতো পরিশোধ করতে না পারলেও শিক্ষকদের সহযোগিতায় সে এ সাফল্য অর্জন করেছে।

বড় হয়ে মাহবুব একজন ডাক্তার হতে চায়। কিন্তু দারিদ্র্য তাকে কতদূর নিয়ে যাবে, তা নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেছে সে।          

বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১২
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।