ঢাকা: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব এবং কারিগরি শিক্ষার প্রসারে বসুন্ধরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের (বিটিআই) ভূমিকা শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) ঢাকার দোহার উপজেলা পরিষদে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া তাবাসসুম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মেজর মো. মহসিনুল করিম (অব.), বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র জিএম এ কে এম নওশেরুল আলম এবং বসুন্ধরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কাজী মো. শওকত-উল ইসলাম।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন দোহার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রকিব হাসান। সেমিনার সঞ্চালনা করেন বসুন্ধরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র উপদেষ্টা শাফী আহমেদ।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্যে বসুন্ধরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ কাজী শওকত-উল ইসলাম কারিগরি শিক্ষার বর্তমান অবস্থা, কর্মসংস্থানে এর অবদান এবং বিটিআইয়ের চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন। বর্তমানে অত্র প্রতিষ্ঠানটি সিভিল, কম্পিউটার, ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি নিচ্ছে ও পাঠদান করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি কোর্স এছাড়াও এখানে বিভিন্ন দেশের ভাষা শেখার সুযোগ রয়েছে। বিটিআই নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলছে, যারা পরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিল্পখাতে কর্মসংস্থান পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কেরানীগঞ্জ এলাকায় কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে অত্র এলাকার জীবন মানের উন্নয়নে বসুন্ধরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অংশীজন হতে চায়। এ বিষয়ে উপস্থিত সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সেমিনারে নওশেরুল আলম বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি আমাদের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী। এ জনগোষ্ঠীকে যদি দক্ষতায় রূপান্তর করা না যায়, তবে তা আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে, কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে এই তরুণদের দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করে আমরা একটি উৎপাদনশীল ও টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারি।
তিনি এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদাহরণ টেনে বলেন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নতির পথে এগিয়েছে—আমরাও পারি, যদি সেই পথ অনুসরণ করি।
সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রকিব হাসান বলেন, কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হতে পারে। বর্তমান বিশ্বে শুধু সাধারণ শিক্ষার ওপর নির্ভর করে টিকে থাকা কঠিন। পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর শ্রমবাজারে টিকে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আর এই দক্ষতা অর্জনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো কারিগরি শিক্ষা।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া তাবাসসুম দোহার উপজেলার যুব সমাজের বর্তমান চিত্র ও চ্যালেঞ্জগুলো অত্যন্ত বাস্তবধর্মীভাবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের অনেক তরুণ আজও বেকারত্ব, দিকনির্দেশনার অভাব এবং দক্ষতা সংকটে ভুগছে। অনেকেই উচ্চশিক্ষা লাভ করেও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। এই প্রেক্ষাপটে তিনি কারিগরি শিক্ষাকে একটি কার্যকর ও সময়োপযোগী সমাধান হিসেবে তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, কারিগরি শিক্ষা শুধু চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ায় না, বরং একজন তরুণকে আত্মকর্মসংস্থানের দিকেও পরিচালিত করে। ফলে এটি কেবল ব্যক্তির নয়, গোটা সমাজ ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ খুলে দেয়।
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, বসুন্ধরা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এ অঞ্চলের তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য যে প্রশিক্ষণ ও সুযোগ প্রদান করছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আমি আশা করি, এই প্রতিষ্ঠান আগামী দিনে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করে আমাদের যুব সমাজকে একটি গঠনমূলক পথে নিয়ে যাবে।
তিনি উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা কারিগরি শিক্ষাকে উৎসাহিত করেন এবং তরুণ প্রজন্মকে এর দিকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন দোহার উপজেলার ২৬টি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকমণ্ডলী, সি আই ইলেকট্রিকাল টেকনোলজি, বিটিআই মনসুর আলম ও বিটিআই অন্যান্য শিক্ষকরা। এ সেমিনারের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং বিটিআই-এর ভূমিকা আরও সুদৃঢ়ভাবে তুলে ধরা হয়।
আরআইএস