ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিক্ষা

টাইমস হায়ার র‌্যাংকিংয়ে অক্সফোর্ড প্রথম, ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’র অবস্থান কোথায়?

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:৫৯, অক্টোবর ১০, ২০২৫
টাইমস হায়ার র‌্যাংকিংয়ে অক্সফোর্ড প্রথম, ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’র অবস্থান কোথায়?

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’র র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ ৮০০-এর মধ্যে স্থান করে নিতে পারেনি।

সারা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে টাইমস এই র‌্যাংকিং প্রকাশ করে।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং ২০২৫’-এ বাংলাদেশের মোট ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ৮০০ থেকে ১০০০-এর মধ্যে বাংলাদেশের ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিয়েছে।

এগুলো হলো—ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ১০০০ থেকে ১২০০-এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।

এ বছরের র‌্যাংকিংয়ে কিছুটা এগিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টি গত বছর ১০০০ থেকে ১২০০তমের মধ্যে থাকলেও এবার ৮০১ থেকে ১০০০-এর তালিকায় প্রবেশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওভারঅল পয়েন্ট ৩৫.৫ থেকে ৩৮.৯-এর মধ্যে।

শিক্ষা, গবেষণার পরিবেশ, গবেষণার মান, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে সহযোগিতা সূচকের ওপর ভিত্তি করে টাইমস এই র‌্যাংকিং প্রকাশ করে। র‌্যাংকিং অনুযায়ী, এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার পরিবেশ সূচকে আগের বছরের তুলনায় ৩ পয়েন্ট অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়াও গবেষণার মান সূচকে ৯.৩, শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে সহযোগিতা সূচকে ১১.৮ পয়েন্ট অগ্রগতি হয়েছে।

কয়েকটি সূচকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবনতি হয়েছে। গত বছর শিক্ষার মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০.১ পয়েন্ট পেলেও এবার তা কমে ১৭.৭-এ দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক আউটলুক সূচকে গত বছর ৪৮.৩ থাকলেও এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫ পয়েন্টে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অবস্থানও একই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওভারঅল মান ৩৫.৫ থেকে ৩৮.৯-এর মধ্যে। এর মধ্যে এ বছর শিক্ষায় ১২.১, গবেষণায় ১৩.০, গবেষণার মান ৮১.৭, শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে সহযোগিতায় ২০.১ এবং আন্তর্জাতিক আউটলুকে ৬৫.৪ পেয়েছে।

প্রথম হয়েছে কে, এশিয়ায় শীর্ষে কারা
এ বছর প্রথম অবস্থানে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি মোট ৯৮.৫ রেটিং নিয়ে শীর্ষে রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষায় ৯৭.২, গবেষণা পরিবেশে ১০০, গবেষণার মানে ৯৭.৭, শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে সহযোগিতায় ৯৯.৯ এবং আন্তর্জাতিক আউটলুকে ৯৬.৪ পেয়েছে।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), তৃতীয় অবস্থানে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি, চতুর্থ স্থানে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি এবং পঞ্চম স্থানে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি রয়েছে।

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী ভারতের একটি প্রতিষ্ঠান ২০১ থেকে ২৫০-এর মধ্যে স্থান পেয়েছে। এছাড়া প্রথম ৫০০-এর মধ্যে আরও তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। প্রথম ৮০০ তালিকার মধ্যে পাকিস্তানের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে একটির অবস্থান ৪৫০ থেকে ৫০০ তালিকার মধ্যে।

কেন পিছিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যদিও র‌্যাংকিংয়ে উন্নতির জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকে পিছিয়ে থাকার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে রয়েছে।

পাঁচটি সূচককে মূল ধরে টাইমস এই র‌্যাংকিং তৈরি করে। এর প্রথমটি হলো শিক্ষা। এর মধ্যে শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষকের অনুপাত, ব্যাচেলরের বিপরীতে ডক্টরেটের অনুপাত, ডক্টরেটের বিপরীতে শিক্ষকের অনুপাত এবং প্রাতিষ্ঠানিক আয় বিবেচনা করা হয়। মোট ১০০ শতাংশের মধ্যে ২৯.৫ শতাংশ শিক্ষার মানের ওপর দেওয়া হয়।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। টাইমসের র‌্যাংকিং অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ১৯ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক রয়েছেন, যেখানে অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো এমন বিভাগ রয়েছে, যেখানে প্রতি সেমিস্টারে ১৫০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করছেন।

এছাড়াও গবেষণার পরিবেশ ও গবেষণার মান র‌্যাংকিং তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গবেষণা পরিবেশ, গবেষণার খ্যাতি, গবেষণার কার্যকারিতা বা উৎপাদনশীলতাকে সূচক ধরা হয়। এছাড়াও গবেষণার মান নির্ণয়ে এর সাইটেশন সংখ্যা, গবেষণার শক্তি ও প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই সূচকে এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি হয়েছে।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেন্টারগুলোর অনেকগুলোই এখনো সচল নয়। অনেক ক্ষেত্রে নিয়মিত পরিচালক নিয়োগ হয় না। এছাড়াও একাধিক বিভাগে এখনো একাডেমিক কারিকুলামে গবেষণাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে গবেষণার পরিবেশ সূচকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পয়েন্ট মাত্র ১৩.৩; অক্সফোর্ডে যেটি ১০০।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং আন্তর্জাতিক সহলেখক সংখ্যা বিবেচনায় বৈশ্বিক আউটলুক সূচক নির্ধারিত হয়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ০% দেখিয়েছে টাইমস। এসব কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করতে পারছে না।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৬ সদস্যের একটি কমিটি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এই কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ।

এফএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।