জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ১৮তম উপাচার্য হিসেবে কাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে এই নিয়ে ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। নির্বাচিত তিন জনের প্যানেল থেকে কাকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিলে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির কোন গ্রুপের জন্য ভাল সে নিয়েও চলছে হিসেব নিকেশ।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ৪৩ ভোট পেয়ে প্রথম হন। এছাড়া পদার্থ ও গাণিতিক বিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবুল হোসেন ৪২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আমির হোসেন ৩৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হন।
নির্বাচনে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও অধ্যাপক আবুল হোসেন ৪০ ভোট করে পাওয়ায় পরবর্তীতে টচে ফারজানা ইসলাম ৩ ভোট পেয়ে প্রথম এবং আবুল হোসেন ২ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন।
অপর প্যানেলে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল বায়েস ২৭ ভোট, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক এম এ মতিন ২৫ ভোট ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আফসার আহমদ ২৫ ভোট পেয়েছেন।
রোববার সকালে নির্বাচিত তিন জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক।
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এর ১১(১) ধারা অনুযায়ী এদের মধ্য একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেবেন।
উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের পর কে হচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ তম উপাচার্য তা নিয়ে ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে এই তিনজনের মধ্যে যাকেই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরপন্থি শিক্ষকদের গ্রুপ ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ আবার চাঙ্গা হবে। কারণ নির্বাচিত তিনজনই এই গ্রুপের রাজনীতি করেন।
এদিকে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে ক্যাম্পাসে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের ক্যাম্পাসে শিক্ষক রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় ভূমিকা না থাকলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তার শক্তিশালী লবিং রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ফারজানা ইসলাম বিভাগীয় সভাপতির দায়িত্ব শেষে যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।
‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’র সদস্য সচিব অধ্যাপক মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, উপাচার্য হিসেবে যাকেই নিয়োগ দেওয়া হোক আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় সচল থাকুক, ক্লাস পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবে চলুক। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে নতুন উপাচার্যকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।
‘সাধারণ শিক্ষক ফোরাম’র আহ্বায়ক অধ্যাপক মুহম্মদ হানিফ আলী বলেন, নতুন উপাচার্যকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর যেন ক্ষতি না হয়, বিশ্ববিদ্যালয় যেন এক দিনের জন্যও বন্ধ না হয়।
কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে প্রশাসন যেন আলোচনার মাধ্যমে সে সমস্যার সমাধান করে।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, তিন জনের মধ্যে যাকেই উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। তবে তিনি যদি শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিরোধী কোনো কাজ করেন তাহলে আমরা তাকে বাধা দেবই।
শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে গত ১২ জানুয়ারি অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করলে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এম এ মতিন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়ে এক মাসের মধ্যে বিদ্যমান সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দেওয়া নির্দেশনা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিদ্যমান সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের আয়োজন করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক এম এ মতিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৪