ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দেড়শ’ বছরের পুরাতন ভবনে ক্লাস: আতঙ্কে কমছে শিক্ষার্থী

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৪
দেড়শ’ বছরের পুরাতন ভবনে ক্লাস: আতঙ্কে কমছে শিক্ষার্থী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ: দেড়শ’ বছর আগের পুরাতন জরাজীর্ণ ভবন। ভবনের মেঝে থেকে শুরু করে দেয়ালে দেয়ালে ছোট-বড় অসংখ্য ফাটল।

খসে পড়েছে ছাদের পলেস্তারা। বিপজ্জনকভাবে ভাঙছে কাঠের বিম। বৃষ্টির পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে স্কুলের আসবাব ও ল্যাবের মূল্যবান যন্ত্রপাতি। এ অবস্থায় পাঠদান চলছে শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মৃত্যুঞ্জয়ী স্কুলে।

নতুন ভবন নির্মাণের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ বার বার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দূয়ারে কড়া নাড়লেও সাড়া মেলেনি। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনের পর দিন ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ঝুঁকি এড়াতে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। তবুও বাধ্য হয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিয়েই পাঠদান করাতে হচ্ছে শিক্ষকদের।

জানা গেছে, শহরের গুলপুকুর পাড় এলাকায় ১৯০১ সালে এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ স্কুলের ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবার আরো ৫০ বছর আগে এটি ছিল আইনজীবীদের বৈঠকখানা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত দেড়শ’ বছরেও ভবনটির কোন সংস্কার কাজ না হওয়ায় হয়ে পড়েছে জরাজীর্ণ।

বিকল্প ভবন বা কোন ক্লাসের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবহার অনুপযোগী এ ভবনে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী ও ২৩ জন শিক্ষককে ভয়-আতঙ্কে নিত্য সময় পাড়ি দিতে হচ্ছে। জীর্ণ ভবনটি ভেঙ্গে যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ও আতঙ্কে রয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

স্কুল সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ময়মনসিংহের স্বকীয় অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিক্ষা নগরীর মৃত্যুঞ্জয়ী স্কুলের নাম। শৈশবের স্মৃতিঘেরা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়েছেন তিনি। এখানে পড়া অবস্থাতেই তার ভেতরে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত হয় এমন তথ্য রয়েছে স্কুলটির বার্ষিকীতে।

ময়মনসিংহের আরেক গর্ব শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান, জেলা পরিষদ প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকাও এ স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষা নগরীতে আলোর ঝিলিক ছড়াতে প্রায় শত বছর ধরে ভূমিকা রেখে আসছে এ স্কুলটি। অনেক কৃতি শিক্ষার্থী জন্ম দেয়া এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরতে পরতেও জড়িয়ে আছে কত সাফল্য, আনন্দ-বেদনার গল্প।   

স্কুলের শিক্ষকরা জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও জরাজীর্ণ এ ভবনেই পাঠদান করাতে হচ্ছে। ভবন ধসে পড়ার আতঙ্কে সব সময় ভয়ের মধ্যে দিয়ে ক্লাস করতে চায় না শিক্ষার্থীরা। এতে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমে যাচ্ছে।

শিক্ষার্থী দীপা চৌধুরী ও দীপক জানান, ভবনে ছোট-বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ভাঙাচুরা এ ভবনে ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। এর ফলে পড়ালেখার মনসংযোগে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। ঠিকমতো পড়ালেখা করতে অসুবিধা হয়।

স্কুলটির বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে সব সময় চরম আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। যেভাবে ভবনে ফাটল ধরেছে তাতে করে কোন সময় না বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটে যায়! দেশের এতো কৃতি সন্তানের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির এমন হাল কষ্টদায়ক।

সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক রোকন উদ্দিন জানান, প্রায় ৫ বছর ধরে স্কুলটির ভবনের অবস্থা শোচনীয়। স্কুলটিতে অন্য কোন ভবন না থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে দু’ থেকে তিনবার আবেদন করলেও নতুন ভবন নির্মাণে তারা কোন উদ্যোগ নেয়নি।  

স্কুলের ঐতিহ্য ও গৌরব ধরে রাখতে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রুত সময়ের মধ্যেই জরাজীর্ণ এ ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি, মত এ প্রধান শিক্ষকের।  

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুস সাত্তার জানান, স্কুলের ভবনটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শুনেছি। জরাজীর্ণ এ ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।